প্রতীকী ছবি।
সরকারি অনুদান পাওয়ার পরেও, ‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি তৈরি করার প্রবণতা বাড়ছে না উপভোক্তাদের মধ্যে। গত আর্থিক বছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক বাড়ি তৈরি হয়েছে, দাবি পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি একটি বৈঠকে ঠিক হয়েছে, যে সব উপভোক্তা প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা নেওয়ার পরেও বাড়ি তৈরি করা শুরু করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানানো হবে। জেলার প্রতিটি বিডিও-র কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান জেলা পরিষদ কর্তারা। এই বার্তা পাওয়ার পরে, পঞ্চায়েত ধরে বৈঠকও শুরু হয়েছে।
জেলা পরিষদ সভানেত্রী শম্পা ধাড়া বলেন, ‘‘টাকা পাওয়ার পরেও যে সব উপভোক্তা বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে বলা হয়েছে।’’ ‘বাংলা আবাস যোজনার’ ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক, জেলা পরিষদের উপ-সচিব মৃণ্ময় মণ্ডলের দাবি, ‘‘নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি তৈরি করার জন্য রাজ্য থেকেও একই দাওয়াইয়ের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’
‘বাংলা আবাস যোজনা’ প্রকল্পে গত কয়েক বছর ধরে ‘কাটমানি’ থেকে ‘ঘর দখল’ করার মতো নানা অভিযোগ উঠেছে। প্রশাসনের তরফে গ্রামে-গ্রামে প্রচার করে ‘কাটমানি’ না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর, মেমারি-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘কাটমানির’ অভিযোগ উঠেছিল। জেলা পরিষদ সূত্রের দাবি, সেই সময়ে বাড়ি তৈরি করতে না পারার পিছনে উপভোক্তারা ‘কাটমানি’র অভিযোগ তুলতেন। বিধানসভা ভোটের কয়েক মাস আগে থেকে জেলায় আর কাটমানির অভিযোগ তেমন ওঠেনি। অথচ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ি তৈরি করতে উপভোক্তাদের মধ্যে ‘অনীহা’ দেখা যাচ্ছে বলে দাবি কর্তাদের। তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের ধারণা, স্থানীয় যুবকেরাই উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি তৈরি করে দিতেন। ‘কাটমানি’র অভিযোগ ওঠার পর থেকে তাঁরা আর বাড়ি তৈরিতে উদ্যোগী হচ্ছেন না। নগদ টাকা ব্যাঙ্কে ঢোকার পরে উপভোক্তাদের অনেকে নানা কারণে খরচ করে ফেলছেন। কী ভাবে বাড়ি তৈরি করবেন, সে পরিকল্পনাও নিতে পারছেন না অনেকে, মনে করছেন আধিকারিকেরা।
প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, ‘‘এই পরিস্থিতিতে চাপ না তৈরি করলে বাড়ি তৈরিতে অনীহা কাটবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সে জন্যই জেলা পরিষদ এফআইআর করার নির্দেশ দিয়েছে।’’ পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৭ জুনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে ‘বাংলা আবাস যোজনা’য় ৭১,২১৭টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তার মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছিলেন ৭১,০২৯ জন উপভোক্তা। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন ৬৭,৮৩৪ জন। কিন্তু তার মধ্যে বাড়ি তৈরি করেছেন ৮১% উপভোক্তা। এই প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, এক-এক জন উপভোক্তা তিনটি কিস্তিতে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পান। প্রথম দুই কিস্তিতেই তাঁদের অ্যাকাউন্টে এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা পৌঁছয়। গত আর্থিক বছরে (২০২০-২১) ৬৩,৩৬৪টি বাড়ির অনুমোদন মেলে। তার মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পেয়েছেন যথাক্রমে ৫৬,৪০৩ ও ৫৪,৩৬৬ জন। বাড়ির কাজ শেষ করেছেন মাত্র ৩৮% শতাংশ উপভোক্তা, জানায় জেলা পরিষদ।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় সরকারি প্রকল্পের বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে ভাতার (২১%), বর্ধমান ১ (২৪%), গলসি ১, মেমারি ১, রায়না ১, রায়না ২ (৩৭%), কালনা ১, কাটোয়া ১, কেতুগ্রাম ১, মঙ্গলকোট (৩৬%), কেতুগ্রাম ২ (৩১%) ও মন্তেশ্বর (৩০%) ব্লক। একেবারে সামনের দিকে রয়েছে কালনা ২ (৮০%) ও খণ্ডঘোষ (৭৬%) ব্লক। জেলার নানা ব্লকের বিডিও-দের দাবি, প্রতিটি পঞ্চায়েত ধরে বৈঠক করা হচ্ছে। উপভোক্তাদের ডেকে এক মাসের মধ্যে বাড়ি তৈরি করতে শুরু করতে হবে। তা না হলে এফআইআর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy