Advertisement
০৭ মে ২০২৪

শাসক-যোগের নালিশে বহিষ্কৃত আইনুল

বিধানসভা ভোটে তাঁকে সামনে রেখে বর্ধমান শহরে লড়াইয়ে নেমেছিল দল। মাস পাঁচেক পরে সেই নেতা আইনুল হককেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করল সিপিএম।

আইনুল হক। বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা।

আইনুল হক। বহিষ্কৃত সিপিএম নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৮
Share: Save:

বিধানসভা ভোটে তাঁকে সামনে রেখে বর্ধমান শহরে লড়াইয়ে নেমেছিল দল। মাস পাঁচেক পরে সেই নেতা আইনুল হককেই শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করল সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক রবিবার বলেন, ‘‘গুরুতর দলবিরোধী কাজে যুক্ত থাকা এবং দলীয় মর্যাদা ক্ষুন্ন করার অপরাধে দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আইনুল হককে সরাসরি বহিষ্কার করা হয়েছে।” বহিষ্কৃত নেতা যদিও এ দিন জানান, তিনি দিল্লিতে রয়েছেন। এ ব্যাপারে তাঁর কিছু জানা নেই।

সম্প্রতি কলকাতায় প্লেনামে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দল থেকে অন্য দলে তো অনেকেই যাচ্ছে। কিন্তু দলের ভিতর থেকে শাসক শিবিরের সঙ্গে যাঁরা যোগাযোগ রাখছেন, তাঁরা ভয়ানক।’’ বর্ধমান জেলা সিপিএমের একাংশের মতে, আইনুল হককে বহিষ্কার করে দলীয় নেতৃত্ব বার্তা দিলেন, যাঁরা শাসক শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বা নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছেন, তাঁদের ঝে়ড়ে ফেলে ঘর সাফ করার দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।

ছাত্রজীবনেই বাম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন আইনুল। ১৯৮৩ থেকে ছ’বছর এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক ছিলেন তিনি। ২০০১-এ সিপিএমের জেলা কমিটিতে ঢোকেন। ২০০৩ সালে পুরভোটে জিতে বর্ধমানের উপ-পুরপ্রধান হন। ২০০৮-এ ফের জেতার পরে পুরপ্রধান হন। ২০১৪ সালে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে ‘কো-অপ্ট’, পরের ফেব্রুয়ারিতে পাকাপাকি সদস্য হন। এ বার বিধানসভা ভোটে বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে দল তাঁকে প্রার্থী করে। তৃণমূলের রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যান আইনুল।

সিপিএম সূত্রের খবর, হারের পরে আইনুল অভিযোগ করেন, জেলা নেতৃত্বের একাংশের অসহযোগিতার জন্যই বর্ধমানে দলের এমন হাল হয়েছে। এ নিয়ে পার্কাস রোডে দলের জেলা দফতরে এক প্রবীণ নেতার সঙ্গে তাঁর তর্কবিতর্কও হয়। শুধু সে দিন নয়, ৬ অগস্ট দিল্লি যাওয়ার আগেও জেলা দফতরে বসে তাঁর হারের পিছনে দলীয় নেতাদের হাত রয়েছে বলে আইনুল দাবি করায় বিতণ্ডা বাধে বলে দাবি।

এর পর থেকেই আইনুল দলের কোনও কর্মসূচিতে থাকছিলেন না। দল চিঠি দিলেও তিনি জবাব দেননি। কলকাতায় রাজ্য কমিটির প্লেনামে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের হাজির থাকার নির্দেশ ছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ অমান্য করে আইনুল দিল্লিতেই ছিলেন। জেলা সিপিএম সূত্রের দাবি, আইনুল ছুটি কাটাতে দিল্লি গিয়েছেন, তা দলের জেলা সম্পাদককে জানানোর প্রয়োজন বলে মনে করেননি। শুধু তাই নয়, বারবার ফোন করেও নেতারা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি বলে অভিযোগ।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের অভিযোগ, “এরই মধ্যে দলের কাছে প্রমাণ-সহ তথ্য আসে, আইনুল দিল্লিতে শাসক দলের রাজ্যসভার সাংসদের সিএ-র সঙ্গে দেখা করেছেন। সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানা যায়, তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার অন্দরেও আইনুলের লম্বা হাত রয়েছে। শুধু তাই নয়, বিধানসভা ভোটের পরে দলের অনেক গোপন তথ্য আইনুল প্রকাশ করেছেন বলে আমাদের কাছে নির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে।”

মাস দু’য়েক আগে বর্ধমান শহরের কিছু প্রাক্তন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ কর্মী তৃণমূলে নাম লেখান। সিপিএম নেতাদের দাবি, তাঁদের তৃণমূলে যেতে আইনুলই উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বলে খবর মেলে। রাজ্য কমিটির ওই নেতার দাবি, “আইনুল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁকে শুধরোনোর জন্য দল সময় দিয়েছিল। কিন্তু তিনি নেতাদের অবজ্ঞা করেন। সেই সঙ্গে শাসক দলের সঙ্গে যোগাযোগ সামনে আসায় দল সরাসরি বহিষ্কারের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।”

সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার দুপুরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আইনুলকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। তার পরেই জেলার এক প্রবীণ নেতা সমস্ত নথি নিয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর অনুমোদনের জন্য কলকাতা যান। রাতে সেখানেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

বর্ধমান শহরের পূর্ব নতুনপল্লির বাসিন্দা আইনুল অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে চাননি। এ দিন দিল্লি থেকে ফোনে তিনি বলেন, “আমি এ সব কিছুই জানি না। শারীরিক ভাবে না থাকতে পারলেও দলের সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব। কমিউনিস্ট মতাদর্শের বাইরে যাওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই।” আইনুলের স্ত্রী রুমা লাহিড়ি হক রবিবার সকালেই দিল্লি থেকে ফিরেছেন। তিনি বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত শুনে মনে হচ্ছে, মাথায় বাজ পড়ল। অভিযোগগুলি ঠিক নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ainul Haque Excluded CPM tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE