Advertisement
০৬ মে ২০২৪

উন্নয়নের কাজে দুর্নীতি, নালিশ কর্তাদের নামে

খাতায়-কলমে উন্নয়ন দেখিয়ে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলকোটের পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসনের কর্তা ও তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই কর্তারা কাজ পাইয়ে দিয়েছেন, জেলাশাসকের দফতরে এমনই অভিযোগ করেছে ‘মঙ্গলকোট নাগরিকবৃন্দ’ নামে একটি সংগঠন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৫ ০১:২৩
Share: Save:

খাতায়-কলমে উন্নয়ন দেখিয়ে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলকোটের পঞ্চায়েত সমিতি, ব্লক প্রশাসনের কর্তা ও তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। ঠিকাদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ওই কর্তারা কাজ পাইয়ে দিয়েছেন, জেলাশাসকের দফতরে এমনই অভিযোগ করেছে ‘মঙ্গলকোট নাগরিকবৃন্দ’ নামে একটি সংগঠন। কোথায় নিম্নমানের কাজ হচ্ছে, অভিযোগপত্রে উদাহরণ হিসেবে তার কিছু উল্লেখও করা হয়েছে।

ব্লক প্রশাসনের আধিকারিক থেকে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি, সকলেই অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী আবার এই অভিযোগের জন্য দলের এক গোষ্ঠীর নেতাদের দায়ী করে দলের জেলা ও রাজ্য স্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। জেলাশাসকের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সপ্তাহ দু’য়েক আগে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। তা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসকের (পঞ্চায়েত ও খাদ্য) দফতরে পাঠানো হয়েছে।

ওই সংগঠনের তরফে শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়, আব্দুস মোল্লারা অভিযোগ করেন, মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতিতে খাতায়-কলমে উন্নয়নের কাজ দেখিয়ে বিপুল টাকা দুর্নীতি হচ্ছে। ফলে, সরকারের টাকা খরচ হলেও বাস্তবে ঠিক মতো কাজ হচ্ছে না। তাঁদের অভিযোগ, “তৃণমূলের ব্লক সভাপতির মদতে পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, ব্লক প্রশাসনের কর্তা টাকার বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু ঠিকাদারকে কাজ দিচ্ছেন। ওই সব ঠিকাদারেরা নিম্নমানের কাজ করে চলেছে।’’

অভিযোগপত্রে তাঁরা দাবি করেছেন, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু ঠিকাদার কাজ পাচ্ছেন। দরপত্র না ডেকেই বিডিও-র ঘরের শৌচাগার নির্মাণে সাত লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। একই ভাবে মঙ্গলকোটের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও রং করা হয়েছে। চলতি বছর ৪ মে পঞ্চায়েত সমিতর ৪৭টি কাজের মধ্যে অধিকাংশ কাজ পেয়েছেন এক জন ঠিকাদার। টিউবওয়েলের যন্ত্রাংশ কেনার জন্য এক ব্যবসায়ীকে ২১ লক্ষ টাকার কাজের বরাত বিনা দরপত্রে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। ওই সংগঠনের অভিযোগ, মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতিতে কার্যত কোনও কাজেরই প্রকাশ্যে দরপত্র হয় না। এ ছাড়া সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা সেই কাজে ব্যবহার না হওয়া, কাজ না হলেও পছন্দের ঠিকাদারদের টাকা দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়েছে।

এই সব অভিযোগ অবশ্য পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মুন্সি রেজাউল হক। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমরা যদি দুর্নীতি করতাম, তাহলে কি জেলা প্রশাসন সাতটি বিভাগে আমাদের পুরস্কার দিত!’’ বিডিও সুশান্তকুমার মণ্ডলও বলেন, ‘‘এ সব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’’

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অপূর্ববাবু এই অভিযোগ মিথ্যে দাবি করে এর সঙ্গে দলের দুই নেতা জড়িত বলে দলের উচ্চ স্তরে নালিশ করেছেন। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, অপূর্ববাবু অভিযোগ করেছেন, দলের জেলা পরিষদ সদস্য বিকাশ চৌধুরী ও সংখ্যালঘু নেতা লিয়াকত আলির মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়াতে এ রকম মিথ্যা অভিযোগ করানো হয়েছে। অপূর্ববাবু বলেন, ‘‘দলের লোকই হোক বা অন্য কেউ, এ ধরনের গুরুতর অভিযোগের প্রমাণ অভিযোগকারীকেই করতে হবে। সবার উপর রয়েছে দলের নেতৃত্ব। তাঁরাই এ বিষয়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ এ ব্যাপারে লিয়াকত আলিকে জিজ্ঞাসা করে হলে তিনি এলাকার বাইরে রয়েছেন জানিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘আমি যা করি স্বচ্ছ ভাবে করি। পিছন থেকে ছুরি মারা আমার স্বভাববিরুদ্ধ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE