Advertisement
E-Paper

অন্ধকার নামলেই রেষারেষি শিল্পাঞ্চলে

রাত সাড়ে আটটা। বিকট আওয়াজ করে ধাঁ করে এক দল যুবক মোটরবাইক নিয়ে ছুটে যাচ্ছে ব্যস্ত রাস্তা ধরে।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০০:২৯
এ ভাবেই চলে যাতায়াত।  —নিজস্ব চিত্র।

এ ভাবেই চলে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র।

রাত সাড়ে আটটা। বিকট আওয়াজ করে ধাঁ করে এক দল যুবক মোটরবাইক নিয়ে ছুটে যাচ্ছে ব্যস্ত রাস্তা ধরে।

চিত্র দুই: মোটরবাইকে পিছনে বসে থাকা এক যুবক স্ট্যান্ডটা চেপে ধরে আছেন রাস্তার সঙ্গে। পিচ রাস্তার সঙ্গে ঘষা লেগে যতক্ষণ পর্যন্ত আগুনের ফুলকি না বের হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ‘অ্যাডভেঞ্চার’ চলতেই থাকে।

—দুটো ছবিই আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পা়ঞ্চলের। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে কলকাতায় মোটরবাইক দৌরাত্ম্য রুখতে বেশ কয়েকটি দাওয়াই দিয়েছেন। শিল্পাঞ্চলবাসীরও দাবি, কলকাতার পাশাপাশি রাজ্য জুড়েই মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য কমাতে পদক্ষেপ করুক প্রশাসন।

আসানসোলবাসীর বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোটরবাইকের লাগামছাড়া দৌরাত্ম্য চলছে। শহরের অন্যতম প্রধান রাস্তা এসবি গরাই রোড। রাস্তার দু’পাশেই জনবহুল এলাকা রয়েছে। এই রাস্তার উপরেই রয়েছে আসানসোল জেলা হাসপাতাল, বেশ কয়েকটি নার্সিংহোম, স্কুল-সহ বহু দোকানপাট। সন্ধ্যের পরেই এই রাস্তায় শুরু হয় মোটরবাইকের দাপট। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যস্ত সময়ে ‘গতির দৌড়ে’ নামে একাধিক মোটরবাইক। চিকিৎসক বলাকা গঙ্গোপাধ্যায়ের শঙ্কা, ‘‘রাতের রাস্তায় ওদের দেখলেই মনে হয়, এই বুঝি কোনও বিপদ হল!’’

ছবিটা আরও ভয়াবহ আসানসোলের সেনর‌্যালে রোডে। সদ্য তৈরি হওয়া ঝাঁ চকচকে এই রাস্তাতেও একটু রাত গড়ালেই নেমে পড়ে একদল যুবক। মোটরবাইকের রেষারেষি তো থাকেই। তার উপরে মোটরবাইকের পিছনে বসে থাকা বেশ কয়েকজন যুবককে আবার গাড়ির স্ট্যান্ড রাস্তায় চেপে রাখতে দেখা যায়। বাসিন্দাদের একাংশ জানান, রাস্তার সঙ্গে ঘষা লেগে আগুনের ফুলকি না ছড়ানো পর্যন্ত চলে এমন দৌরাত্ম্য। কলেজের অধ্যক্ষ অরুণাভ দাসগুপ্ত বলেন, ‘‘এমন কাণ্ডের জেরে প্রায়শই ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ কুলটির ইস্কো ক্লাবরোড, গলফরোড প্রভৃতি এলাকাতে একটু রাত হলেই একই ছবি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, কখনও কখনও প্রায় চল্লিশটি মোটরবাইক এক সঙ্গে পথে নেমে রেষারেষি করে।

একই হাল দুর্গাপুরেও। স্টিল প্ল্যান্ট, সিটি সেন্টার লাগোয়া মহাত্মা গাঁধী রোড, কবিগুরু রোড প্রভৃতি রাস্তায় ফি দিনই দেখা যায় মোটরবাইক বাহিনীর দৌরাত্ম্য। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) রাকেশ সিংহের আশ্বাস, ‘‘আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’

আসানসোল শিল্পাঞ্চলে মোটরবাইকের পাশাপাশি পথে বিপদ বাড়িয়েছে মিনিবাসও। জিটিরোড-সহ শহরের বিভিন্ন রাস্তায় মাঝেসাঝেই মিনিবাসগুলিকে দূরন্ত গতিতে ছুটতে দেখা যায়। অনেক সময়ে বেশি যাত্রী তুলতেও একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামে তারা।

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দেশে প্রতি চার মিনিটে পথ-দুর্ঘটনায় এক জন মারা যান। এ রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রীও। সম্প্রতি পথ নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘যাঁর বাড়ির লোক এ ভাবে মারা যান, তাঁরাই যন্ত্রণাটা বুঝতে পারেন।’’ মোটরবাইকের রেষারেষি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এরপরেই কলকাতার তিনটি উড়ালপুলে রাত ১০টা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত মোটরবাইক চলাচল বন্ধ করা-সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে পদক্ষেপ করার পরামর্শ দেন। শুধু তাই নয়, পথ নিরাপত্তার প্রচারে মনিটরিং কমিটিও গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সড়ক ও জাতীয় সড়কে লোকশিল্পীদের দিয়েও প্রচার চালানোর কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে শিল্পাঞ্চলবাসীর অভিযোগ, বারবার আবেদন করেও এলাকায় মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য কমেনি। তবে তাঁদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী মোটরবাইকের উৎপাত নিয়ে সরব হওয়ায় হয়তো এ বার পরিস্থিতির খানিকটা বদল হবে। কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) বিশ্বজিৎ মাহাতার আশ্বাস, ‘‘বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। আরও কঠোর হব আমরা।’’

race bikers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy