Advertisement
E-Paper

এটিএমের ঝাঁপ বন্ধ, হুড়োহুড়ি ব্যাঙ্কে

যদিও বা শুক্রবার কিছু খুলেছিল, শনিবার ঝাঁপ সেই সব এটিএমে। ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা-লম্বা লাইন। বাজার-দোকান করতে জেরবার। নোট বাতিলের জেরে শনিবারও এমন নাজেহাল অবস্থা হল মানুষের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০০
বাঁ দিকে, দুর্গাপুরের এমএএমসি এলাকার বন্ধ ডাকঘর। মাঝে, বন্ধ এটিএম কাউন্টার। ডান দিকে, রানিগঞ্জে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড়। শনিবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান ও ওমপ্রকাশ সিংহ।

বাঁ দিকে, দুর্গাপুরের এমএএমসি এলাকার বন্ধ ডাকঘর। মাঝে, বন্ধ এটিএম কাউন্টার। ডান দিকে, রানিগঞ্জে ব্যাঙ্কের সামনে ভিড়। শনিবার ছবিগুলি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান ও ওমপ্রকাশ সিংহ।

যদিও বা শুক্রবার কিছু খুলেছিল, শনিবার ঝাঁপ সেই সব এটিএমে। ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা-লম্বা লাইন। বাজার-দোকান করতে জেরবার। নোট বাতিলের জেরে শনিবারও এমন নাজেহাল অবস্থা হল মানুষের।

শুক্রবার দুপুরের পরে দুর্গাপুরে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের লাগোয়া দু’একটি এটিএম চালু হয়েছিল। ফলে, ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন কিছুটা ভেঙে চলে গিয়েছিল এটিএমে। অনেকে ভেবেছিলেন, শনিবারও ফের এটিএমে টাকা মিলবে। কিন্তু এ দিন দেখা যায়, অধিকাংশ এটিএম-ই বন্ধ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেশ কিছু ই-কর্নারে এ দিন লাইন দিয়ে অনেকে পুরনো নোট আমানতে জমা দিতে পেরেছেন। আসানসোল শহরে এ দিন বেশ কিছু এটিএম খুললেও কুলটি, নিয়ামতপুর, বরাকর, বারাবনিতে এ দিনও বেশির ভাগই খোলেনি।

এ দিন নানা অফিস-কাছারি ছুটি থাকায় ব্যাঙ্কগুলির সামনে বেশ ভিড় জমেছিল। বিকেল ৪টে অবধি ব্যাঙ্কে টাকা পাল্টানোর কথা ছিল। পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কে ত্রিলোকচন্দ্রপুর শাখায় টাকা জমা নেওয়া হলেও তুলতে পারেননি গ্রাহকেরা। নিয়ামতপুরে দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক নির্দিষ্ট সময়ের পরে বন্ধ করতে গেলে গ্রাহকেরা বিক্ষোভ দেখান। একটি ব্যাঙ্কে লাইনে দাঁড়ানো লোকজনকে টোকেন দেওয়া হয়। রবিবার তা দেখিয়ে তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। সেই টোকেন নেওয়ার সময়ে হুড়োহুড়িতে দু’তিন জন আহত হন।

শুক্রবার বেশ কিছু ব্যাঙ্ক থেকে গ্রাহকদের ১০ টাকার মুদ্রা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গুজবের জেরে বাজার-দোকানে সেই মুদ্রা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। দুর্গাপুরের এ-জোনের বাসিন্দা বিপ্লব রজক বলেন, ‘‘সিটি সেন্টারে এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে আমাকে একটি প্যাকেটে ১০০টি ১০ টাকার মূদ্রা দেওয়া হয়। কিন্তু বাজারে কেউ তা না নিতে চাওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়েছি।’’ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে দশ টাকার মুদ্রা লেনদেনে কোনও সমস্যা জানানো হলেও অনেকে তা নিতে চাইছেন না। শহরের এক টোটো চালক লাল্টু বসু বলেন, ‘‘আমি কারও কাছে ওই মুদ্রা নিলেও পরে অন্য যাত্রীকে দিতে গেলে তিনি নিচ্ছেন না।’’

এর মধ্যে জামুড়িয়ার কয়েকটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা তাদের কর্মীদের এক মাসের ও বার্নপুরের এক ঠিকাদার সংস্থা কর্মীদের তিন মাসের অগ্রিম বেতন পুরনো নোটে মিটিয়েছে বলে অভিযোগ। আসানসোলের মহকুমাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী অবশ্য বলেন, “অগ্রিম দেওয়ার নামে পুরনো নোট কর্মীদের মাধ্যমে চালানোর কোনও অভিযোগ মেলেনি। পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ক্রেতার দেখা নেই দুর্গাপুরের আরবান হাটে। নিজস্ব চিত্র।

নোটের সমস্যায় নানা রকম বিপাকে পড়েছেন অনেকে। অন্ডালের নাককাজোড়া খনি আবাসনের বাসিন্দা প্রভাত ঘোষের মেয়ে রানিগঞ্জে একটি নাসিংহোমে ভর্তি। প্রভাতবাবু জানান, রবিবার সেখান থেকে মেয়েকে ছেড়ে দেবে। চল্লিশ হাজার টাকা বিল দিতে হবে নার্সিংহোমে। কী ভাবে টাকা জোগাড় করবেন ভেবে দিশেহারা তিনি। দুর্গাপুরের সেপকো এলাকার বাসিন্দা অর্ঘ পোদ্দার জানান, তাঁর বাবা হাসপাতালে ভর্তি। ওষুধ কিনতে গেলে পুরনো ৫০০ টাকার নোট নেননি দোকান মালিক। মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন তিনি।

উখড়ার কাঞ্চন মণ্ডল জানান, রবিবার তাঁর বাবার শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। চার হাজার টাকার বেশি মিলছে না ব্যাঙ্ক থেকে। বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়ে কাজ চালাচ্ছেন। পাণ্ডবেশ্বরের কুমারডিহির রবিন বাউরির ছেলের বিয়ে ২১ নভেম্বর। তিনি বলেন, “ডেকরেটর থেকে রাঁধুনি, কোনও কিছুরই অগ্রিম দিতে পারছি না। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে!’’

দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের বাসিন্দা অমিতাভ বিশ্বাস দাবি করেন, ‘‘পুরসভায় শুক্রবার কর জমা দিতে গেলে পুরনো নোট নেওয়া হবে না জানানো হয়। ডেপুটি মেয়রকে তা জানালে দুপুরের পর থেকে তা নেওয়া হয়।’’ শনিবার বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেন, সরকারি সংস্থা ডিপিএল বিদ্যুতের বিল হিসেবে পুরনো নোট নেওয়া হবে না বলে নোটিস দিয়েছে। বিল জমার তারিখ দু’দিন বাড়ানো হয়েছে। সে জন্য কোনও জরিমানা দিতে হবে না গ্রাহককে।

শহরের আরবান হাটে চলছে হস্তশিল্প মেলা। সমস্যায় পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা বিক্রেতারা। বোলপুর থেকে নকশি কাঁথার সামগ্রী, কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে এসেছেন কনিক পীর। তিনি বলেন, ‘‘নোটের সমস্যায় কেনাবেচা একেবারে কম। সমস্যায় পড়ে গিয়েছি।’’ পূর্ব মেদিনীপুরের অজয়কুমার মাইতি বলেন, ‘‘পুরনো নোট নিতে পারছি না। অনেক ক্রেতা এসেও ফিরে যাচ্ছেন।’’ দুর্গাপুরের সবিতা কেশওয়ানি অবশ্য পুরনো নোট নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে বদলে নেব। না হলে তো ব্যবসাই হবে না।’’ ঘুরে-ঘুরে সামগ্রী দেখছিলেন কাঁকসার কোয়েল মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘কী এসেছে দেখছি। কেনাকাটা এ বার করা হবে বলেই মনে হচ্ছে না!’’

ATM distress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy