Advertisement
০২ মে ২০২৪

প্রকল্পে গতি আনতে ব্যাঙ্কের শিবির গ্রামে

গ্রামের মূল রাস্তার পাশে বড় করে ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। তার তলায় চেয়ার-টেবিল পেতে বসে ব্যাঙ্কের কর্মীরা। সামনে গ্রামবাসীদের লম্বা লাইন। সকলেই এসেছেন ব্যাঙ্কে খাতা খুলতে।

শিবির শুরুর দিন এসেছিলেন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।—নিজস্ব চিত্র।

শিবির শুরুর দিন এসেছিলেন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০১:০৮
Share: Save:

গ্রামের মূল রাস্তার পাশে বড় করে ম্যারাপ বাঁধা হয়েছে। তার তলায় চেয়ার-টেবিল পেতে বসে ব্যাঙ্কের কর্মীরা। সামনে গ্রামবাসীদের লম্বা লাইন। সকলেই এসেছেন ব্যাঙ্কে খাতা খুলতে।

সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি আনতে জনধন প্রকল্পে বাসিন্দাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ শুরু হয়েছে সালানপুরের সিদাবাড়ি গ্রামে। গত জানুয়ারিতে এই গ্রামটি দত্তক নিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তার পরেই আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। শুধু গ্রামের পরিকাঠামো উন্নয়ন নয়, গ্রামবাসীদের যাতে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়, সেই পরিকল্পনাও হয়েছে। তাই সমবায় তৈরি করে সব্জি চাষ, ফলের বাগান, মাছ চাষের মতো নানা উদ্যোগ হয়েছে।

কিন্তু এই সব পরিকল্পনা রূপায়ণে নেমে জানা যায়, বেশির ভাগ বাসিন্দারই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে, তাঁরা কেন্দ্রের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়ছেন। বাবুল বলেন, ‘‘এ সব জানার পরেই আমি ঠিক করি, গ্রামের মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করতে হবে।’’ সম্প্রতি তাঁর উদ্যোগে সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এই গ্রামে অস্থায়ী শিবির তৈরি করে সেই কাজ শুরু করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কে খাতা খোলার জন্য কোনও টাকাপয়সা দিতে হচ্ছে না গ্রামবাসীকে। গ্রামে বসে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ মেলায় উৎসাহ দেখা গিয়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই লাইন দিচ্ছেন তাঁরা। নতুন পাশবই হাতে পেয়ে উল্টেপাল্টে দেখছিলেন গ্রামের বাসিন্দা সনাতন টু়ডু। তিনি বলেন, ‘‘আগে কখনও এই সুযোগ পাইনি। খুব ভাল লাগছে।’’ বেকারদের রোজগারের জন্য ব্যাঙ্কের ঋণ মেলে বলে শুনেছিলেন সিদুলা হেমব্রম। কিন্তু কী ভাবে, তা জানা ছিল না। গ্রামে ব্যাঙ্কের লোকজন এসেছে খবর পেয়ে সকাল থেকে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যাঙ্ককর্মীদের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার নিয়ম জানলেন। তিনি বলেন, ‘‘শহরে কোথায় যাব? কাকে জিজ্ঞাসা করব? সে অনেক ঝামেলা। ব্যাঙ্কের বাবুদের হাতের কাছে পেয়ে সব জেনে নিয়েছি।’’ গ্রামবাসীদের এই আগ্রহ দেখে অবাক ব্যাঙ্কের কর্মীরাও। একটি ব্যাঙ্কের কর্মী রুবি দাসের কথায়, ‘‘খাতা খোলা ছাড়াও বাসিন্দারা সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চেয়েছেন। বিমা সংক্রান্ত বিষয়ের সুবিধা কী ভাবে পাওয়া যাবে, সে সবও জেনেছেন।’’ অন্য এক ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক কো-অর্ডিনেটর তাপস মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামে বসেই এই সুযোগ মিলছে, তা যেন বাসিন্দাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।’’ তিনি জানান, প্রায় ৫০০ বাসিন্দা অ্যাকাউন্ট খুলেছেন।

কাজের তদারকি করতে গোড়ায় এক দিন গ্রামে গিয়েছিলেন বাবুল। বাসিন্দাদের উৎসাহ দেখে তিনি বলেন, ‘‘এই গ্রাম নিয়ে আমার অনেক আশা। সত্যি আদর্শ গ্রাম হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তা পূরণ হবে।’’ সে দিন তিনি গ্রামে দু’টি পাকা রাস্তা ও একটি বড় নর্দমারও উদ্বোধন করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE