E-Paper

স্কুলের রাস্তা পারাপার ‘অরক্ষিতই’

কাটোয়ার অগ্রদ্বীপেও খড়বোঝাই মোটরভ্যানের চাকায় পিষে এক বালক মারা যায় সম্প্রতি। অভি‌ভাবকেরা অভিযোগ করেন, ডিডিসি ছাড়া বাকি স্কুলগুলি অরক্ষিত।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:২৫
বর্ধমানের পুলিশ লাইন প্রাথমিক স্কুলের সামনে। 

বর্ধমানের পুলিশ লাইন প্রাথমিক স্কুলের সামনে।  —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতার বড়িশায় ট্রাকের ধাক্কায় ছাত্রের মৃত্যুর পরে পূর্ব বর্ধমানের ব্যস্ত রাস্তার ধারে থাকা স্কুলগুলিতেও যান নিয়ন্ত্রণের জন্য থানাগুলিকে নির্দেশ দেয় জেলা পুলিশ। তার মধ্যেই বর্ধমান-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কে খণ্ডঘোষের মেটেডাঙা জুনিয়র হাইস্কুলের সামনে একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্র। জখম হয় তার বোনও। প্রশ্ন উঠছে, জেলা পুলিশের নির্দেশ কী যথাযথ ভাবে পালন করছে থানাগুলি, স্কুলগুলিই বা কী করছে।

জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, “খণ্ডঘোষের দুর্ঘটনাস্থল আমি ঘুরে দেখব। পুলিশের সঙ্গে কথা বলে কী ভাবে ব্যস্ত রাস্তার উপরে থাকা স্কুলগুলির সামনে যান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা ঠিক করা হবে।’’ জেলা পুলিশের নির্দেশ ছিল, স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ে সিভিক ভলান্টিয়ার থাকবেন। কিন্তু শুক্রবার বর্ধমান শহরে জিটি রোডের উপরে মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল ছাড়া আর কোথাও তাঁদের দেখা যায়নি।

কাটোয়ার অগ্রদ্বীপেও খড়বোঝাই মোটরভ্যানের চাকায় পিষে এক বালক মারা যায় সম্প্রতি। অভি‌ভাবকেরা অভিযোগ করেন, ডিডিসি ছাড়া বাকি স্কুলগুলি অরক্ষিত। সুবোধ স্মৃতি রোডের কাশীশ্বরী বালিকা বিদ্যালয় কিংবা ঘোষহাটের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের সামনে দিয়ে দিনভর শববাহী ট্রাক্টর, ট্রাক, খড় বোঝাই গাড়ি যাতায়াত করে। অভিভাবকদের দাবি, স্কুলের নিজস্ব পার্কিং নেই। ফলে রাস্তায় বাইকের ভিড় জমে যায়। ছুটির সময়ে টোটোর লাইনও পড়ে লম্বা। দুর্ঘটনার আগেই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দাবি করেন তাঁরা।

বর্ধমান-সিউড়ি (জাতীয় সড়ক ২বি) রাস্তার ধারে আউশগ্রামের কয়রাপুর থেকে ভেদিয়া পর্যন্ত আটটি প্রাথমিক ও একটি হাইস্কুল রয়েছে। অধিকাংশ স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, সিভিক ভলান্টিয়ার থাকেন না। পড়ুয়াদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করতে হয়। শিক্ষকেরাও অনেক সময়ে রাস্তা পার করে দেন তাদের। বৈকুন্ঠপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমরেশ ভট্টাচার্য বলেন, “মাসখানেক আগে দু’দিনের জন্য স্কুলের সামনে সিভিক ভলান্টিয়ারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। আর কেউ আসে নি। রাস্তার উপর সার দিয়ে ডাম্পার, গাড়ি দাঁড়িয়ে গেলে পার হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।’’ স্কুলের সামনে রাস্তায় স্পিডব্রেকার বা গার্ডরেল না থাকা নিয়েও ক্ষোভ জানান শিক্ষকেরা। কয়রাপুর বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক সতীনাথ গোস্বামীর ক্ষোভ, “গত কয়েক বছরে পথ দুর্ঘটনায় স্কুলের চার পড়ুয়ার মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও গার্ডরেল ছাড়া যান নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।”

ভাতার বাজারে অবস্থিত ভাতার মাধব পাবলিক হাইস্কুলের এক ছাত্র তিন সপ্তাহ আগে ছুটে বেরোতে গিয়ে টোটোর ধাক্কায় আহত হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সচ্চিদানন্দ হাঁসদা বলেন, “দুর্ঘটনায় এড়াতে বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্রুত গতির যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়।” ওই রাস্তার উপরে দেওয়ানদিঘির বিদ্যাসাগর হাইস্কুলের শিক্ষকেরাও পড়ুয়াদের পথ নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন। প্রশাসন ও থানায় চিঠি পাঠিয়েছেন তাঁরা।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খণ্ডঘোষ, মেমারি, গলসি এলাকায় ব্যস্ত রাস্তার ধারে থাকা স্কুলগুলিতে কোথাও এক বা দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা থাকে। স্কুল শুরু ও ছুটির সময়ে তাঁরা যান নিয়ন্ত্রণ করেন। গলসিতে ‘সামনে স্কুল, গাড়ি আস্তে চালান’ লেখা বোর্ড ও গার্ডরেলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার আমন দীপ ট্র্যাফিক ব্যবস্থা ঢেলে সাজার আশ্বাস দিয়েছেন।

পূর্ত, পরিবহণ, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুপ্রিয় অধিকারী বলেন, “পথ-নিরাপত্তা সভায় আলোচনা
করা হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bardhaman

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy