Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Child marriage in Bardhaman

বাল্যবিবাহ, নাবালিকা গর্ভধারণ বাড়াচ্ছে চিন্তা

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র ও ইউনিসেফ যৌথ ভাবে চার বছর আগে ‘জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা’ (এনএইচএফএস-৫) করে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:২২
Share: Save:

মাধ্যমিকের পরেই মেয়ের বিয়ের যাবতীয় বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন ভাতারের মধ্যবিত্ত একটি পরিবার। খবর পেয়ে ব্লক প্রশাসন বিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়া হয় মেয়েটির।

কালনা শহরের কাছে একটি গ্রামে বিয়ের দিন পুলিশ গিয়ে আটকে দেয়। পরে বর্ধমান শহরের একটি মন্দির থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রীটির বিয়ে হয়ে যায়।

এই দু’টি উদাহরণ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। পূর্ব বর্ধমানের আনাচে-কানাচে নাবালিকার বিয়ের ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। নাবালিকাদের গর্ভধারণের প্রবণতাও ঊর্ধ্বমুখী। স্কুলছুট, বাল্যবিবাহ ঠেকাতে ‘কন্যাশ্রী’, দুঃস্থ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়েতে সহায়তার জন্য রয়েছে ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প। ওই দু’টি প্রকল্প চালু হওয়ার কয়েক বছর পরেও বাল্য বিবাহ বা নাবালিকা অবস্থায় গর্ভধারণ কমানো যাচ্ছে না বলে প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ উদ্বিগ্ন। সম্প্রতি জেলাস্তরে একটি বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরে কী কী করতে হবে, সেই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি দুয়ারে সরকার প্রকল্পে গ্রামে গিয়ে এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতন করছেন। তিনি বলেন, “বাল্য বিবাহ, নাবালিকা গর্ভধারণের প্রবণতা কমাতে আমি ও আমাদের সহকর্মীরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। স্থানীয়দের সচেতনও করা হচ্ছে।”

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র ও ইউনিসেফ যৌথ ভাবে চার বছর আগে ‘জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা’ (এনএইচএফএস-৫) করে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই জেলায় ২০ থেকে ২৪ বছরের বিবাহিত মেয়েদের মধ্যে ৫০.৪ শতাংশের বিয়ে ১৮ বছরের আগেই হয়েছে। ২০১৬ সালের সমীক্ষায় তা দাঁড়ায় ৪২.৯ শতাংশে। অর্থাৎ, জেলায় নাবালিকা বিয়ে বেড়েছে সাড়ে সাত শতাংশ। সম্প্রতি জেলার একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, স্কুলছুটদের মধ্যে (মাধ্যমিকের নীচে) ৩৫.৪৮% নাবালিকা বিয়ের কারণে পড়া ছেড়ে দিয়েছে। ওই রিপোর্ট জানাচ্ছে, মঙ্গলকোটে ১৯৯ জন, ভাতারে ১৪৭ জন, কাটোয়া ১ ব্লকে ১৪৩ জন, রায়না ১ ব্লকে ১৯৯ জন-সহ চলতি শিক্ষাবর্ষে ২২২৫ জন স্রেফ বিয়ের কারণে স্কুলে যা‌ওয়া বন্ধ করেছে।

এনএইচএফএস-৫ রিপোর্ট অনুযায়ী জেলায় ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে মা হয়ে গিয়েছেন ২১.৯ শতাংশ মহিলা। পাঁচ বছর আগের সমীক্ষায় যা ছিল ১৪.৪ শতাংশ। অর্থাৎ কম বয়সে মা হওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে সাড়ে সাত শতাংশ। স্বাস্থ্য দফতরের ‘হেল্থ ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের’ (এইচএমআইএস) রিপোর্ট বলছে, জেলায় দু’বছরের মধ্যে নাবালিকা গর্ভধারণ প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে ২৬.৮৩ শতাংশ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের রিপোর্টে গত বছর সরকারি হাসপাতালে ২৯,৯৯১ জন প্রসূতি ভর্তি হয়েছিলেন। তার মধ্যে নাবালিকা মা ৬৫১২ জন। এ বছর (২০ অক্টোবর পর্যন্ত) ৩৪,৯৭৫ জন প্রসূতির মধ্যে ৬৮২২ জনই নাবালিকা (১৯.৫১%)। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “ওই রিপোর্টের পরে পাঁচ মাস বাকি রয়েছে। বছর শেষে যে তথ্য মিলবে, তাতে নাবালিকা গর্ভধারণ গত বছরকে ছাড়িয়ে যাবে। নাবালিকা গর্ভধারণের তথ্যই বলছে, কী পরিমানে বাল্য বিবাহ চলছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, আউশগ্রাম ১ (২০.৬১%), ভাতার (২৩.০৭%), বর্ধমান ১ (২২.৭৬%), বর্ধমান ২ (২০.৭৭%), কেতুগ্রাম ২ (২৭.৩৯%), কাটোয়া ২ (২৩.৮২%), মঙ্গলকোট (২৪.৪৩%)-সহ ১৪টি ব্লক জেলার গড় হিসেবের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আবার জামালপুর ও পূর্বস্থলী ১ ব্লক ৫% নাবালিকা গর্ভধারণের প্রবণতা কমিয়েছে (১৫.৬৯%), কেতুগ্রাম ১ ব্লকও ৮% কমিয়েছে (১৩.২৩%)।

জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (নারী ও শিশু কল্যাণ) মাম্পি রুদ্র বলেন, “বাল্য বিবাহ ও নাবালিকা গর্ভধারণের প্রবণতা কমানো গিয়েছে। আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে, সেই কারণে স্কুলে স্কুলে কন্যাশ্রীদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আরও দায়িত্ব নেওয়া, অভিভাবকদের বোঝানোর কাজ চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE