Advertisement
E-Paper

১০০ টাকার বিদ্যুৎ দিয়ে আয় ৪৬!

১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করে পূর্ব বর্ধমান থেকে বণ্টন সংস্থা পাচ্ছে ৪৬ টাকা! সোমবার রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠকে ওই তথ্য উঠে এসেছে।

সৌমেন দত্ত 

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০১:১৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বেআইনি হুকিং-সহ নানা কারণে গত আর্থিক (২০১৭-’১৮) বছরে পূর্ব বর্ধমানে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ২৭৩ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ পরিষেবা দিতে গিয়ে গড়ে রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৫৩.৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ, ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করে পূর্ব বর্ধমান থেকে বণ্টন সংস্থা পাচ্ছে ৪৬ টাকা! সোমবার রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের একটি বৈঠকে ওই তথ্য উঠে এসেছে।

বণ্টন সংস্থার কর্তারা মানছেন, চোরাগোপ্তা বিদ্যুৎ নেওয়ার প্রবণতা জেলা জুড়েই রয়েছে, তা জানা ছিল। কিন্তু, সেই প্রবণতার ফলে সরকারি কোষাগারের লোকসান তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। মূলত চাষের মরসুমে হুকিং করে সাবমার্সিবল পাম্প চালানোর প্রবণতাই রাজস্বের বেশি ক্ষতি করেছে। বিদ্যুৎ-কর্তাদের দাবি, জেলার ১৯টি সহকারী ইঞ্জিনিয়ারের দফতর থেকে ২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে বিদ্যুৎ চুরি সংক্রান্ত ৮৩৬টি এফআইআর করা হয়েছিল। একটি ঘটনাতেও পুলিশ গ্রেফতার কাউকে করেনি। ফলে, পরিষেবার বিনিময়ে ৩৪০ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকার জায়গায় আদায় হয়েছে মাত্র ১১৩ কোটি।

এ দিন জেলা প্রশাসন ও জেলা বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টা আলোচনা করেন রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ পান্ডে এবং সংস্থার নিরাপত্তা-বিষয়ক উপদেষ্টা সি ভি মুরলীধরণ। তাঁদের হাতে একটি রিপোর্ট তুলে দেন বণ্টন সংস্থার বর্ধমানের রিজিওনাল ম্যানেজার দিলীপ কুমার বাছাড়। ওই রিপোর্টে দেখা যায়, জেলার ২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১টিতে রাজস্ব লোকসান ৫০ শতাংশেরও বেশি। রাজস্ব-ক্ষতির তালিকায় রয়েছে, ভাতার, নতুনহাট, মন্তেশ্বর, গুসকরা, রায়না, সাতগেছিয়া, জামালপুর, কাটোয়া, কেতুগ্রাম, সমুদ্রগড় ও পূর্বস্থলী। ওই ১১টিতেই রাজস্ব ক্ষতি ছাড়িয়ে গিয়েছে ১৯২ কোটি টাকারও বেশি। ক্ষতির পরিমাণে জেলায় এগিয়ে রয়েছে ভাতার (২৮.২৬ কোটি), নতুনহাট (২২.৮৮ কোটি) ও কেতুগ্রাম (২০.৬৯ কোটি)। মন্তেশ্বরও ওই তালিকার উপরের দিকে থাকা নাম।

দিলীপবাবু বলেন, “রাজ্যের মধ্যে বিদ্যুৎ-পরিষেবায় রাজস্ব ক্ষতির দিকে পূর্ব বর্ধমান দ্বিতীয়। জেলার ওই ১১টি কেন্দ্র নিয়েই আমাদের মাথাব্যথা।” গোটা জেলায় ২১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১১টি পঞ্চায়েতে প্রকাশ্যে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি হয় বলেও এ দিন বণ্টন সংস্থার দুই শীর্ষ কর্তাকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।

বণ্টন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎ-চুরি রুখতে না পারার জন্য এ দিনের বৈঠকে ১১ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ভর্ৎসনা করেন সংস্থার কর্তারা। তবে গুসকরা, ভাতার, নতুনহাট ও মন্তেশ্বরের বিদ্যুৎ-কর্তাদের উপরে সবচেয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন কর্তারা। শুধু বিদ্যুৎ চুরি নয়, জেলায় লো-ভোল্টেজ নিয়েও বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে জানানো হয়, সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে ৪৫৯ কোটি টাকা খরচ করে লো-ভোল্টেজের সমস্যা মেটানো হবে। বৈঠকে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী লোকসানের বহর ১১ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলেছেন।

কিন্তু সংস্থার কর্তারাই মানছেন, বিদ্যুৎ চুরি রুখতে না পারলে আয়ও বাড়ানো সম্ভব হবে না। এফআইআর করার পরে পুলিশের ধরপাকড় না হলে জরিমানার টাকা দিতে চাইছেন না বিদ্যুৎৎ চুরিতে অভিযুক্তেরা। এ প্রসঙ্গে রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করবেন বলে মুরলীধরণ জানিয়েছেন। দিলীপবাবুর কথায়, “পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমাদের বিশদে আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদেরকে সব রকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।” হুকিং রুখতে রাজস্ব ক্ষতির তালিকায় উপরের দিকে থাকা পঞ্চায়েতগুলির সব গ্রামেই ইনসুলেটেড-কেব্‌ল লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন বণ্টন সংস্থার দুই শীর্ষ কর্তা। পাশাপাশি ক্রমাগত অভিযান চালানোর কথাও বলা হয়েছে।

WBSEDCL Electricity
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy