Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
আশ্বাস প্রশাসনের

নিরাপদে ভোট হবে তো, প্রশ্ন

জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের দাবি, সুষ্ঠুভাবে ভোট করানোর জন্য তারা প্রস্তুত। কিন্তু ভোটের দিন বুথ কি আদৌ নিরাপদ, এই প্রশ্নটাই তুলছেন বিরোধী দলের নেতারা।

চলো: আজ ভোট, বুথের পথে ভোটকর্মীরা। ছবি: বিকাশ মশান

চলো: আজ ভোট, বুথের পথে ভোটকর্মীরা। ছবি: বিকাশ মশান

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০০:৩৪
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে গত ক’দিনের যাবতীয় অনিশ্চয়তা কেটে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। আজ, সোমবার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ গঠনের জন্য পূর্ব বর্ধমানের অধিকাংশ ভোটার বুথে পথে পা বাড়াবেন। কাটোয়া মহকুমার বাসিন্দাদের অবশ্য সে সযোগ নেই। কারণ, সেখানে ভোটই নেই পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরের সব আসন বিরোধী-শূন্য থাকার সৌজন্যে!

জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের দাবি, সুষ্ঠুভাবে ভোট করানোর জন্য তারা প্রস্তুত। কিন্তু ভোটের দিন বুথ কি আদৌ নিরাপদ, এই প্রশ্নটাই তুলছেন বিরোধী দলের নেতারা। তাঁদের দাবি, যেখানে জেলাশাসক দফতরের সামনেই মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে বিরোধী নেতা-কর্মী-প্রার্থীরা প্রহৃত হন, সেখানে বুথের পথে ভোটারেরা নিশ্চিন্তে যেতে পারবেন, এমন নিশ্চয়তা কোথায়? শাসকদল অবশ্য বলছে, বিরোধীরা প্রার্থী জোগাড় করতে না পেরে মনোনয়ন পর্বের শুরু থেকেই সন্ত্রাসের ধুয়ো তুলেছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাটোয়া মহকুমার মোট ৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে কোনও বুথেই নির্বাচন হচ্ছে না। ভোট-হীন কাটোয়া এই প্রথম। একই ভাবে আউশগ্রাম ১ ব্লকের ৪৯টি, খণ্ডঘোষের ৬১টি, রায়না ১ ব্লকে ৪৬টি এবং রায়না ২ ব্লকের ৭৩টি বুথে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত বা জেলা পরিষদ—কোনও স্তরেই নির্বাচন নেই। সব মিলিয়ে জেলার ৩৮৩০টি বুথের মধ্যে ১০১৫টি বুথে ভোট নেই!

এ ছাড়াও শুধুমাত্র একটি স্তরে ভোট হচ্ছে ১১৯৪টি বুথে, দু’টি স্তরে ভোট হচ্ছে ৫৭৮টি বুথে। তিন স্তরেই ভোট হচ্ছে এমন বুথের সংখ্যা ১০৪৩টি। একমাত্র কালনা ২ ব্লকের প্রতিটি বুথেই তিনটে স্তরেই ভোট হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ৩২৩৪টি সংসদের মধ্যে বিরোধীরা নেই ২১০১টি সংসদে। পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৮টি আসনের মধ্যে ৩৯৬টিতে এবং জেলা পরিষদের ৫৮টির মধ্যে ১৭টি আসন বিরোধী-শূন্য অবস্থায় রয়েছে। এই চিত্র দেখে পরিষ্কার, জেলায় ভোট হচ্ছে মূলত কালনা মহকুমা ও মেমারি বিধানসভা এলাকায়। তবে নির্দলদের (যারা আদতে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই ভাতারের ভোটে অন্যমাত্রা যোগ করেছে।

জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল রবিবার বলেন, ‘‘সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করানোর জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। সে জন্য প্রতিটি এলাকায় রুট মার্চ, বিভিন্ন হোটেলে তল্লাশি, নাকা করা হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, জেলার ২৮১৫টি বুথে ভোট হচ্ছে। প্রতিটি বুথেই সশস্ত্র পুলিশকর্মীর সঙ্গে একজন করে লাঠিধারী পুলিশকর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ার থাকবেন। জেলায় ৪১৫টি বুথকে ‘স্পর্শকাতর’ বলে পুলিশ ঘোষণা করেছে। সেই সব বুথে ভিডিওগ্রাফি করা হবে। এ ছাড়াও ওই সব বুথ ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জেলা ছাড়াও ৭ কোম্পানি কলকাতার পুলিশ, ২ কোম্পানি অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশের সঙ্গে থাকবে পাশের জেলা বীরভূম ও আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশ। ইতিমধ্যেই জনপ্রতিনিধি ও সরকারি অফিসারদের নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ তুলে নিয়ে কাজে লাগিয়েছে জেলা পুলিশ।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় ২৬৬টি সেক্টর করা হয়েছে। ওই সব সেক্টরের দায়িত্বে থাকছেন পঞ্চায়েত স্তরের আধিকারিকরা। কোনও কোনও জায়গাতয় গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ককেও সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি সেক্টরের সঙ্গেই থাকছে পুলিশের বাহিনী। এ ছাড়াও থানা এলাকায় রাখা হচ্ছে ‘রেসপন্স টিম’ ও ‘ক্যুইক রেসপন্স টিম’।

এর পরেও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছেন নিরাপত্তা নিয়ে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিকের কথায়, ‘‘পুলিশেরই অস্ত্র রক্ষার জন্য পুলিশ নেই, সেখানে তাঁরা কী ভাবে বুথ রক্ষা করবেন, আমরা ভালই বুঝতে পারছি! মনোনয়ন পর্বে সেই অভিজ্ঞতা আমাদের যথেষ্ট হয়েছে।’’ জেলা বিজেপির সাংগঠনিক সভাপতি সন্দীপ নন্দীর দাবি, ‘‘হুমকির ভয়ে দলের প্রার্থীকে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে। বুথে কেমন নিরাপত্তা থাকবে, বোঝাই যাচ্ছে।’’ বিজেপি-র রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভৌমিকের অভিযোগ, ভোট লুঠের আশঙ্কা যেখানে পদে পদে, সেখানে একজন অস্ত্রধারী এবং একজন সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে ভোট করানো মানে শাসক দলকে সুবিধা দেওয়া। আর কংগ্রেসের জেলা সভাপতি আভাস রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘সিপিএম আমলে দেখতাম লাঠিধারী হোমগার্ড। আর এখন দেখছি সিভিক ভলান্টিয়ার!” বিরোধী দলগুলির দাবি, সিভিক ভলান্টিয়ারেরা অনেকেই শাসক দলের সক্রিয় কর্মী। তবু তাঁদের কাজে লাগানো হয়েছে।

তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের মন্তব্য, ‘‘নিশ্চিত হার জেনেই বিরোধীরা নানা গল্প ফাঁদছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE