Advertisement
১৭ মে ২০২৪

প্রচারেও এগিয়ে শাসকদল

কাটোয়ার মতো হাল না হলেও বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমাতেও বিরোধী প্রার্থী সংখ্যায় খুবই কম। পূর্ব বর্ধমান জেলায় শাসক বনাম বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি কোথাও হয়, তা হচ্ছে কালনায়।

তৃণমূলের মিছিল। রবিবার কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

তৃণমূলের মিছিল। রবিবার কালনায়। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:২১
Share: Save:

একটা আস্ত মহকুমায় এ বার ভোট হচ্ছে না। কারণ, পঞ্চায়েতের তিন স্তরেই সেখানে কোনও প্রার্থী নেই। অতএব ভোটের প্রচারও নেই কাটোয়া মহকুমায়। কাটোয়ার মতো হাল না হলেও বর্ধমান উত্তর ও দক্ষিণ মহকুমাতেও বিরোধী প্রার্থী সংখ্যায় খুবই কম। পূর্ব বর্ধমান জেলায় শাসক বনাম বিরোধী প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি কোথাও হয়, তা হচ্ছে কালনায়।

ফলে অন্য এলাকার তুলনায় ভোটের প্রচারও এখানে বেশি। রবিবার ছুটির দিন মহকুমা জুড়ে প্রচার হয়েছে। তবে, তা মূলত শাসকদলই করেছে। প্রচারের শুরুতেই তৃণমূল জোর দিয়েছে দেওয়াল লিখন, পাড়া বৈঠক এবং বাড়ি বাড়ি জনসংযোগে। তবে, বসে নেই বিরোধী দলগুলিও। তারাও প্রচারের কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে প্রাথমিক পর্বে বহু জায়গাতেই বিরোধীদের হাতিয়ার, সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে প্রচারের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

কালনা মহকুমায় পাঁচ ব্লকে জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েত মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ৯১৪টি। এই আসনগুলিতে মোট প্রার্থী ২১১২ জন। একমাত্র মন্তেশ্বর ব্লকে কুসুমগ্রাম ও মন্তেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েত বিনা লড়াইয়েই জিতে নিয়েছে শাসকদল। প্রচারের ক্ষেত্রেও তারা বহু যোজন এগিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস বা বিজেপি-র তুলনায়। গোড়া থেকেই তৃণমূলের দখলে বেশির ভাগ দেওয়াল। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলীয় কর্মীরা দেওয়াল লিখনের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন। বর্তমানে জোর দেওয়া হয়েছে বাড়ি বাড়ি প্রচারে।

গরমের কথা মাথায় রেখে রবিবার বেলা ১১টার আগেই বেশির ভাগ প্রার্থী নিজেদের এলাকায় ভোট চেয়ে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছেন। দুপুরে কিছুটা বিরতির পরে বিকেলে ফের শুরু হয়েছে প্রচার। এই পর্বে খামার, চণ্ডীমণ্ডপ, আটচালা-সহ গ্রামের নানা প্রান্তে কর্মীরা বৈঠক সারছেন। সন্ধ্যার পরে গ্রামের মোড়, চায়ের দোকানে হচ্ছে পথসভা। সেখানে হাজির থাকছেন এলাকার নেতারা। এই সমস্ত প্রচারের সভায় কী কী বিষয় তুলে ধরতে হবে, তা নিয়ে কালনা ২ ব্লকে তৃণমূলের তরফে কর্মী এবং প্রার্থীদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। কালনা ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি প্রণব রায় বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে ছোট ছোট সভাগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, গতিধারা, রূপশ্রী, সবুজ সাথী, খাদ্য সাথীর মতো প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মানুষ কী ভাবে সরকারি সুবিধা পেয়েছে, তা তুলে ধরার কথা বলা হয়েছে। কর্মীরা সে প্রচার চালাচ্ছেন।’’ এই ব্লকের একটি জেলা পরিষদের আসনের প্রার্থী বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি প্রচারে। তাতে এলাকার মানুষ খুশি। আপাতত আমদের বড় সভার পরিকল্পনা নেই।’’

মহকুমা জুড়ে বিরোধীদের দেওয়াল লিখন এখনও পর্যন্ত শাসক দলের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়েছে। বিজেপির রাজ্য সম্পাদকদের অন্যতম রাজীব ভৌমিকের দাবি, ‘‘দেওয়াল লিখন এখনও আমরা যে কম করেছি, তার একটাই কারণ। বহু জায়গাতেই বাড়ির মালিকদের বলে দেওয়া হচ্ছে যাতে তাঁরা আমাদের দেওয়াল লিখনের অনুমতি না দেন। এমন পরিস্থিতিতে তাই শুরুতেই জোর দেওয়া হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাওয়া।’’ তিনি জানান, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বেশি করে প্রচারের কাজে ব্যবহার করার কথা প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে । পাশাপাশি প্রচারের কাছে ব্যবহার করা হচ্ছে পর্যাপ্ত ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন।

কালনায় মহকুমায় সিপিএমের এখনও কিছুটা প্রভাব রয়েছে পূর্বস্থলী ২ ব্লকে। স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহার অভিযোগ, ‘‘শাসক দল সর্বত্র একটা ভীতির পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। তা সত্ত্বেও দলীয় প্রচারে কোনও খামতি নেই। প্রার্থীরা এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার শুরু করে দিয়েছে।’’ তিনি জানান, বেশির ভাগ পঞ্চায়েত এলাকাতেই ছোট ছোট সভা করে দল এ বার প্রচার চালাবে।

কোনও রকম হুমকি দেওয়া বা ভয় দেখানোর অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দেবুবাবু বলেন, ‘‘সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণেই বিরোধীরা প্রচারে নামতে পারছে না। আর সেটা না করতে পেরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE