Advertisement
১৬ মে ২০২৪

নাবালিকা বিয়ে রুখতে স্কুলে বৈঠক কর্তাদের

বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মেয়েকে পড়ানোর টাকা পাব কোথা থেকে? তাই ভাল পাত্র পেলে মেয়ের বিয়ের ঠিক করি। উত্তর দুই: মেয়েরা অনেক সময়েই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

স্কুলে প্রশাসন। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলে প্রশাসন। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৪
Share: Save:

বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। মেয়েকে পড়ানোর টাকা পাব কোথা থেকে? তাই ভাল পাত্র পেলে মেয়ের বিয়ের ঠিক করি।

উত্তর দুই: মেয়েরা অনেক সময়েই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সামাজিক কারণেই বিয়ের তোড়জোড় করতে হয় তখন — নাবালিকা বিয়ে কেন হয়? প্রশ্নের এমনই উত্তর শুনলেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বিডিও পুষ্পেন চট্টোপাধ্যায়। তার পরে নাবালিকা বিয়ের ক্ষতিকারক দিকগুলির বিষয়ে স্কুলের অভিভাবকদের বোঝানো শুরু করলেন প্রশাসনের কর্তারা।

নাবালিকা বিয়ে রুখতে মঙ্গলবার ব্লক প্রশাসনের তরফে এমনই উদ্যোগ দেখল শ্রীরামপুরের ভবতারিণী রায় বালিকা বিদ্যালয়। এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাগো কন্যাশ্রী’। আগামী দিনে ব্লকের সব হাইস্কুলে অভিভাবকদের নিয়ে এমন বৈঠক চলবে বলে জানান পুষ্পেনবাবু।

হঠাৎ এমন উদ্যোগ কেন? ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থনৈতিক বা অন্যান্য কারণে এলাকার বহু মেয়েরেই অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। নাবালিকা বিয়ের খবর কানে এলে প্রশাসনের কর্তারা সটান বিয়েবাড়িতে হাজির হন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবারগুলির তরফে দাবি করা হয়, ‘‘সব জোগাড় হয়ে গিয়েছে। এখন পিছিয়ে আসার উপায় নেই।’’ অনেকে আবার সামাজিক কারণও দেখান। তা ছাড়া অনেক সময়, দেরিতে খবর আসায় নাবালিকা বিয়ে রোখাও সম্ভব হয় না। ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, গত তিন মাসে অন্তত ছ’টি নাবালিকা বিয়ের কথা জানা গিয়েছে। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এই সব সমস্যার মূলে আঘাত দিতেই এমন পরিকল্পনা।

ঠিক হয়, এলাকার সব কটি হাইস্কুলে ১৪ বছরের বেশি বয়স্ক ছাত্রী, তাঁদের অভিভাবক ও শিক্ষিকাদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। সেখানে থাকবেন পুষ্পেনবাবু, বিএমওএইচ রত্না দত্ত মজুমদার এবং এক জন মনোবিদ।

প্রথম বৈঠকের জন্য শ্রীরামপুরের স্কুলটিকে বেছে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে সেই মতো ছাত্রী, অভিভাবক, শিক্ষিকা-সহ প্রায় চারশো জন মিলে শুরু হয় বৈঠক। সেখানে মেয়ের সঙ্গে অভিভাবকদের বন্ধুর মতো মেশার জন্য পরামর্শ দেন বিডিও। এ ছাড়াও মেয়েদের জন্য সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প, বৃত্তির কথাও জানান। রত্নাদেবী নাবালিকা বিয়ের ফলে মেয়েদের শারীরিক সমস্যা ও সন্তানদের অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগা-সহ বিভিন্ন বিষয়ের কথা জানান।

এ দিনের আলোচনা ফলপ্রসু হয়েছে বলে দাবি বিডিও-র। প্রশাসনের সূত্রে খবর, এর আগে বাঁকুড়ার ইন্দাসে এমন কর্মসূচির ফলে ভাল ফল মেলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মিতা রায় বলেন, ‘‘অনেক সময়ে দেখা যায়, কোনও ছাত্রী বেশ কয়েক দিন স্কুলে আসছে না। খোঁজ নিয়ে দেখি, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিছুই করার থাকে না। এমন আলোচনা আরও হলে ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Block administration Immature marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE