তদন্ত: শুক্রবারও পড়ে রক্ত। ঘটনাস্থলে পুলিশ। ছবি: শৈলেন সরকার
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। রাস্তা অন্ধকার। এলাকা সুনসান। আচমকা পটকা ফাটার মতো কয়েকটা আওয়াজ। আর তার পরেই আর্তনাদ। এলাকাবাসীরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখলেন, রাস্তায় পড়ে দুই যুবক। রক্তে ভেসে যাচ্ছে এলাকা। পাশে পড়ে তাঁদের মোটরবাইক।— বৃহস্পতিবার বার্নপুরের রিভারসাইড স্কুল লাগোয়া নবঘণ্টি গোলপার্ক এলাকায় এ ভাবেই খুন হয়ে গেলেন ক্যাটারিং ব্যবসায়ী রানা বন্দ্যোপাধ্যায় (২৫) নামে এক যুবকের। জখম তাঁর মাসতুতো ভাই মিঠুন চক্রবর্তী।
পুলিশ জানায়, গুলির আওয়াজ পেয়ে দুই ভাইকেই উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা রানাকে মৃত বলে জানান। মিঠুনকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, রানার মাথায় গুলি লেগেছে। মিঠুনের কান ছুঁয়ে গুলি বেরিয়ে যায়।
কিন্তু কেন এই ঘটনা? প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, এর পিছনে ব্যবসাগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেশ থাকতে পারে। তদন্তকারীরা জানান, ক্যাটারিং ছাড়াও রানার বার্নপুরে একটি ফুলের দোকান রয়েছে। সম্প্রতি তিনি ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’-এর কারবারও শুরু করেছিলেন। সেই সুবাদে একটি নামী সংস্থার কাছ থেকে সম্প্রতি কয়েক জন ব্যবসায়ীকে টেক্কা দিয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্যাটারিংয়ের বরাতও পেয়েছিলেন বার্নপুরের বাসিন্দা রানা।
তদন্তকারীরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ মোবাইলে একটি ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন রানা। কার ফোন পেয়ে তিনি বেরিয়েছিলেন, ‘কল লিস্ট’ দেখে তা জানার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানায়। যদিও তদন্তকারীরা জানান, ঘটনার পরেই রানার ফোন খোওয়া গিয়েছে।
তবে এই খুনের নেপথ্যে নিশ্চিত কী কারণ, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে খুনের ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে পাঁচ জনের জড়িত থাকার সন্ধান মিলেছে বলে পুলিশের দাবি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) অনমিত্র দাস বলেন, ‘‘অন্যান্য দিকও সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আরও কিছু তথ্যসূত্র মিলেছে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।’’ তদন্তকারীর জানান, মিঠুন জানিয়েছেন, মোট চার জন দু’টি মোটরবাইকে এসে তাঁদের পথ আটকান। এক জন সন্দেহভাজনের নামও করেছেন বলে পুলিশ জানায়।
আপার রোড লাগোয়া প্রান্তিক ক্লাবের পিছনে ইস্কোর একটি আবাসনে মা, বাবা, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন রানা। শুক্রবার ওই আবাসনে গিয়ে দেখা গেল, ভিড় জমিয়েছেন পড়শিরা। বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছেন বাবা দীনবন্ধু বন্দ্যোপাধ্যায়। মা শুক্লাদেবী বারবার বলে চলেছেন, ‘‘মাসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। আর এল না ছেলেটা।’’ ছোট ভাই উৎপলও বিশ্বাস করতে পারছেন না দাদা নেই। পড়শিরা জানান, কখনও গোলমালে দেখা যায়নি রানাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy