Advertisement
২৫ মার্চ ২০২৩
ডিপিএলে জমি বিক্রি, স্বেচ্ছাবসর

পুনর্গঠন-প্রস্তাবের বিরোধিতা সিটুর

রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ডিপিএল দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে চলছে। সে জন্য অন্য বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে তাকে মিশিয়ে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।

ডিপিএল-এ জমি বিক্রি এবং স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা সিটুর।

ডিপিএল-এ জমি বিক্রি এবং স্বেচ্ছাবসরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা সিটুর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

জমি বিক্রি করে আয় এবং ৪৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প— ডিপিএলে এই দুই প্রস্তাবের বিরোধিতা করল সিটু। সংগঠনের ডিপিএলের নেতা নরেন শিকদারের বক্তব্য, ‘‘জমি বিক্রি করে দু’পয়সা আয় হতে পারে ঠিকই। কিন্তু তাতে খুব বেশি সুরাহা হবে না। তার থেকে ঠিক ভাবে প্ল্যান্ট চালানোর ব্যবস্থা করা বেশি জরুরি।’’

Advertisement

রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ডিপিএল দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে চলছে। সে জন্য অন্য বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে তাকে মিশিয়ে পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের কারখানা ও গৃহস্থালীর বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৯৬০ সালে ডিপিএল গড়ে ওঠে। আটটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে শুধু সপ্তম ও অষ্টম ইউনিটটি চালু রয়েছে। কোকআভেন প্ল্যান্টে কয়লা থেকে ল্যাম কোক, হার্ড কোক উৎপাদন হত। এক সময় পাঁচটি ব্যাটারি চালু ছিল। ২০১৫ সালের জুনে কোকআভেন প্ল্যান্টও বন্ধ হয়ে যায়।

সম্প্রতি দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ডিপিএলের জমি আমি অন্য ভাবে ব্যবহার করতে চাই। ডিপিএল চালাতে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।’’ কেন বছরের পর বছর ভর্তুকি দেওয়া হবে, সে প্রশ্ন তুলে তিনি জানান, ওই অর্থ সরকার অন্য শিল্পস্থাপনের জন্য ব্যয় করতে পারে। ডিপিএল বাঁচাতে জমি বিক্রি করতে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘ডিপিএল পুনর্গঠন করতে দিতে হবে। তা না হলে বাঁচানো যাবে না।’’

দুর্গাপুর ছাড়াও ডিপিএলের জমি রয়েছে বর্ধমান, বেলমুড়ি, বালির মতো কয়েকটি জায়গায়। ওই বৈঠকের পরপরই ডিপিএলের ৪৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের ঘোষণা প্রকাশ্যে আসে। যে প্যাকেজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তাতে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন স্বেচ্ছাবসর নেওয়া কর্মীরা, এমনই অভিযোগ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের। সিটুর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, কারও চাকরি যাবে না। কিন্তু স্বেচ্ছাবসর নিয়ে অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়বেন। কারণ চুক্তি অনুযায়ী, তাঁরা এর পরে আর কোনও সরকারি সংস্থায় চাকরি করতে পারবেন না। কোকআভেন প্ল্যান্ট চালু করলে সমস্যা মিটে যেত বলে দাবি সিটুর।

Advertisement

সিটু অনুমোদিত ‘ডিপিএল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর সভাপতি নরেনবাবুর অভিযোগ, ‘‘দুর্গাপুরে বিধাননগর, সিটি সেন্টার, ডিএসপি টাউনশিপে ডিপিএলের বহু জমি বেহাত হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া যাঁরা ডিপিএল গড়তে জমি দিয়েছিলেন, তাঁরা শিল্পের জন্য দিয়েছিলেন। তাঁদের উত্তরসূরিরা যদি জমি বিক্রি়তে আপত্তি জানান, সেক্ষেত্রে কী হবে? জমি বিক্রি করে ডিপিএল বাঁচানো যাবে বলে আমরা মনে করি না।’’ জমি বিক্রি ও স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প, তাঁরা দু’টিরই বিরোধিতা করছেন বলে জানান তিনি।

ইতিমধ্যে সিটুর তরফে ফ্লেক্স লাগানো ও লিফলেট বিলির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নরেনবাবুর মতে, ‘‘যে উদ্দেশ্যে প্ল্যান্ট তৈরি হয়েছিল, সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করাই একমাত্র পথ। অন্য কোনও বিকল্প নেই।’’ ৩ ডিসেম্বর দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলার সাধারণ সভায় যোগ দিতে এসে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও ডিপিএলের জমি বিক্রির প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সিটুর পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

আইএনটিটিইউসি-র পশ্চিম বর্ধমান জেলা চেয়ারম্যান ভি শিবদাসন অবশ্য বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের মানুষ চান, রুগ্‌ণ দশা কাটিয়ে ডিপিএল গরিমা ফিরে পাক। মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবকে তাই দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন। অন্য কারও আপত্তিতে কিছু আটকাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.