Advertisement
১৭ মে ২০২৪

প্রেম-বিবাদে জড়িয়েই খুন, বলছে পুলিশ

রাতে বাড়িতেই ঘুমিয়েছিল ছেলে। ভোরে বাড়ির লোকজন খেয়াল করেন, তাঁর ঘর ফাঁকা। খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বেশি দূর যেতে হয়নি। বাড়ি থেকে কিছুটা গিয়েই নর্দমায় মেলে যুবকের দেহ। গলায় কোনও কিছু দিয়ে ফাঁস লাগানোর দাগ। পায়ের চটি জোড়া পড়ে খানিকটা দূরে। মোবাইল পড়ে নর্দমাতেই।

নিহত মনোজ যাদব। পরিবার সূত্রে পাওয়া ছবি।

নিহত মনোজ যাদব। পরিবার সূত্রে পাওয়া ছবি।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
জামুড়িয়া শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

রাতে বাড়িতেই ঘুমিয়েছিল ছেলে। ভোরে বাড়ির লোকজন খেয়াল করেন, তাঁর ঘর ফাঁকা।

খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। বেশি দূর যেতে হয়নি। বাড়ি থেকে কিছুটা গিয়েই নর্দমায় মেলে যুবকের দেহ। গলায় কোনও কিছু দিয়ে ফাঁস লাগানোর দাগ। পায়ের চটি জোড়া পড়ে খানিকটা দূরে। মোবাইল পড়ে নর্দমাতেই।

২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর ভোরে জামু়ড়িয়ার কেন্দায় বছর পঁচিশের ওই যুবক মনোজ যাদবকে খুন করার অভিযোগে স্থানীয় বাসিন্দা গোপাল যাদব ও তাঁর মেয়ে সঙ্গীতা যাদবকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

নিহতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, সঙ্গীতার সঙ্গে মনোজের প্রণয় ছিল। কোনও কারণে মনোমালিন্য হওয়ায় মনোজকে ডেকে তাঁরা খুন করেন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন মনোজের বাবা রাজকিশোর যাদব। গোপালবাবুরা পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তবে আসানসোল আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ এখনও শুরু হয়নি।

খনিকর্মী রাজকিশোরবাবু দাবি করেন, ‘‘মনোজ খুন হওয়ার পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানতে পারি, সঙ্গীতার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই রাতে সঙ্গীতা ওকে ডেকে নিয়ে যায়। কোনও কারণে ওদের মধ্যে ঝগড়া হয়। তার জেরেই সঙ্গীতা ও তার বাবা মিলে আমার ছেলের গলায় দড়ির ফাঁস দিয়ে মেরে ফেলে। তার পরে দেহ ফেলে রেখে যায় বাড়ির পাশের নর্দমায়।’’

নিহতের বাবার অভিযোগ পাওয়ার পরেই সঙ্গীতা ও গোপালবাবুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সাত দিন পরে জামিন পান সঙ্গীতা। তবে গোপালবাবু জামিন পেয়েছেন প্রায় ছ’মাস পরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল জেলা হাসপাতালের ময়না-তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, মনোজের গলায় নাইলনের দড়ির ফাঁস লাগিয়ে খুন করা হয়েছিল। তাদের তদন্তেও মনোজ ও সঙ্গীতার মধ্যে সম্পর্কের কথা উঠে এসেছিল বলে পুলিশ জানায়। আদালতে পুলিশ চার্জশিট জমা দেয় ঘটনার তিন মাসের মধ্যেই। সেখানেও প্রণয়ে টানাপড়েনের জেরেই খুন বলে জানানো হয়েছে।

গোপালবাবু অবশ্য দাবি করেন, সঙ্গীতার সঙ্গে মনোজের কোনও সম্পর্ক ছিল বলে কথা তাঁরা জানা নেই। তিনি ইসিএলের শোনপুর বাজারি প্রকল্পের কর্মী। তিনি অভিযোগ করেন, হাইকোর্টে আর্জি জানিয়ে জামিন পাওয়ার পরে কাজে কাজে যোগ দিলেও বেতন পাচ্ছেন না। তাঁর দাবি, ঘটনার রাতে তিনি রাতের পালিতে (শিফ্‌ট) কাজ করেছিলেন। পর দিন সকাল ৬টা নাগাদ খনি থেকে মোটরবাইকে চড়ে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, তাঁর প্রতিবেশী তথা সহকর্মী রাজকিশোরের ছেলের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে বাড়ির পাশের নর্দমায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশ আমাকে ও মেয়েকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। বিনা দোষে আমরা জেল খাটলাম। এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হল না। বেতন পাচ্ছি না। সঙ্কটে পড়ে গিয়েছি।’’

অভিযুক্তদের আইনজীবী শান্তনু চক্রবর্তী বলেন, “মামলায় পুলিশ অল্প সময়ের মধ্যেই চার্জশিট দাখিল করেছে। কিন্তু মামলা এডিজে কোর্টে ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।’’ তিনি দাবি করেন, ময়না-তদন্তে খুনের কথা বলা হলেও আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণণের সময়েই প্রমাণ হয়ে যাবে, গোপালবাবু ও তাঁর মেয়েকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।

গোপালবাবু জানান, পরিবারের সকলকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন রয়েছেন বিচারের আশায়। তাড়াতাড়ি বিচার হোক, চাইছেন নিহতের বাড়ির লোকজনও। রাজকিশোরবাবুর বক্তব্য, ‘‘আমরা চাই, আদালত কঠোর শাস্তি দিক। তা হলে আর এই ধরনের ঘটনা ঘটবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE