চাঁদা আদায়। নিজস্ব চিত্র
হাতে আর মোটে এক দিন। তাই তোড়জোড় তুঙ্গে। কালীপুজোর আগে বাজি থেকে প্রতিমার কারবারিদের যেমন ব্যস্ততা, তেমনই ব্যস্ততা চাঁদা আদায়কারীদেরও।
রাস্তায় যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চলছে চাঁদা আদায়, এমন ছবি জেলার নানা এলাকাতেই। রাজপথ থেকে অলিগলিতে রাস্তা আটকে চাঁদা তুলতে দেখা যাচ্ছে কিশোর থেকে মহিলাদের। গাড়ি দাঁড় করিয়ে জোর করে চাঁদা আদায়, তা দিতে না চাইলে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ জানায়, ছ’টি অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি ঘটনাই বর্ধমান থানার।
কয়েক দিন আগে আউশগ্রামে চাঁদা নিয়ে গোলমালের জেরে পাথর ছুড়ে এক ট্রাক চালকের মাথা ফাটানোর অভিযোগ উঠেছিল। শুক্রবার ভোরে দাবিমতো চাঁদা দিতে না চাওয়ায় এক গাড়ি চালককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গাড়ির কাচ ভাঙচুর করা হয়। প্রতিবাদে দামোদরের সদরঘাট সেতুর আগে গাড়ির চালকেরা একজোট হয়ে অবরোধে সামিল হন। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধের জেরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে থেকে বর্ধমান শহরে যানজট হয়।
ট্রাক চালকদের একটি সংগঠনের সম্পাদক দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বছরভর চাঁদার উৎপাত লেগেই থাকে। কালীপুজোর সময় মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায়। আমাদের চালকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। যে ভাবে কমবয়সীরা চাঁদার জন্য রাস্তায় উঠে গাড়ি আটকাচ্ছে, তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকছে।’’
রবিবারই দেওয়ানদিঘি থানার তালিত, হালদার রোড-সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় দেখা যায়, যুবক-কিশোরেরা লাঠি হাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গাড়ি দেখলেই ছুটে গিয়ে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে চাঁদা আদায় করছে। শুধু ওই এলাকা নয়, লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে বর্ধমান শহর, খণ্ডঘোষ, আউশগ্রাম-সহ বিভিন্ন জায়গায় জোর করে চাঁদা তোলার অভিযোগ উঠেছে। বর্ধমানের আলমগঞ্জ, তেলিপুকুর, ইছালাবাদ, নীলপুর— সর্বত্র গাড়ি আটকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। গাড়ি চালকদের দাবি, পুলিশের নজর এড়াতে বিভিন্ন রাস্তায় ভোরের দিকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এক-একটি পুজো কমিটি রাস্তার দু’তিন জায়গায় গাড়ি আটকে চাঁদা তুলছে।
গাড়ির চালকদের আরও দাবি, পুলিশকে আড়াল করার জন্য চাঁদা আদায়কারীরা রসিদের বই রাখছে না। চালকদের কথায়, “রসিদ নিয়ে জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ দায়ের করা যায়। এখন আর সেই সুযোগ দিচ্ছে না। গাড়ি আটকে তোলাবাজির মতো চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।’’ তাঁরাই জানান, খণ্ডঘোষ, আউশগ্রামে মহিলারা রাস্তায় কাপড় বা দড়ি টেনে রেখে গাড়ি আটকাচ্ছেন। হাটগোবিন্দপুরের কাছে বড়শুয়ায় গাছের গুঁড়ি ফেলে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য পরমেশ্বর কোনার বলেন, ‘‘আমরা গিয়ে চাঁদার জুলুম বন্ধ করে দিয়ে এসেছি।’’
জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রতিটি থানাই সতর্ক রয়েছে। জোর করে চাঁদা তোলার অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy