Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Bardhaman

খুদে হাতে প্রতিমা গড়ছে আকবর

দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে শাড়ি, মাথায় শোলার মুকুট ও গলায়-কানে নানা জিনিসে তৈরি সাজ পরিয়েছে রাজা। প্রতিবেশীরা জানান, কয়েক দিন আগে সে তৈরি করেছিল সাধক কবি ভবাপাগলার মূর্তি।

মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত কালনার শাসপুরের খুদে। নিজস্ব চিত্র

মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত কালনার শাসপুরের খুদে। নিজস্ব চিত্র

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৫৬
Share: Save:

কচি হাতে মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ে চলে সে। কোনও তালিম নেই। তা সত্ত্বেও তার তৈরি মূর্তি দেখে বিস্মিত হন এলাকাবাসী। কালনা শহর লাগোয়া শাসপুরের বছর দশেকের আকবর শেখ এ বার গড়েছে প্রায় এক ফুটের দুর্গা প্রতিমা।

শাসপুর দেবনাথপাড়ায় মিলেমিশে বাস নানা সম্প্রদায়ের হাজারখানেক মানুষের। সরু গলি পেরিয়ে এক কামরার ইটের বাড়িতে মা ও দিদিমার সঙ্গে থাকে আকবর। এলাকায় বেশিরভাগ মানুষ তাকে চেনে রাজা নামে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাজার মা-দিদিমা বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। কোনও রকমে চলে তাদের সংসার। তবে এলাকার সবাই গর্বিত রাজাকে নিয়ে। তাঁরা জানান, অনায়াসে কালী, দুর্গা, বিশ্বকর্মার মতো নানা দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করতে পারে খুদে ছেলেটি।

দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে শাড়ি, মাথায় শোলার মুকুট ও গলায়-কানে নানা জিনিসে তৈরি সাজ পরিয়েছে রাজা। প্রতিবেশীরা জানান, কয়েক দিন আগে সে তৈরি করেছিল সাধক কবি ভবাপাগলার মূর্তি। সেটি উপহার দিয়েছে নিজের স্কুলকে।

আকবর জানায়, এলাকার একটি পুকুরে বিসর্জন দেওয়ার পরে জলে ভেসে থাকা কিছু কাপড় ও সাজ সংগ্রহ করেছিল সে। তা কাজে লেগেছে। পুজোর পরে দুর্গা মূর্তিটি কোনও বন্ধুকে দিতে চায়, জানায় সে।

এমন শিল্পগুণের জন্য পড়শিদের নয়নের মণি আকবর। স্থানীয় বাসিন্দা শিপ্রা পাল বলেন, ‘‘ওর বাবাকে কখনও আমরা দেখিনি। খাওয়াদাওয়া-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আমরা সব সময় রাজার পাশে থাকি। এ বার ও দুর্গা প্রতিমা করেছে। আমি পুজোর সময়ে ফুল, মিষ্টি দেব। ওইটুকু ছেলে কারও কাছে তালিম না নিয়ে যে ভাবে মূর্তি গড়ে, তাতে ওর প্রতিভা নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। আমরা অবাক হই ওকে দেখে।’’

তাঁর মতো আরও অনেক পড়শিরই দাবি, রাজা কারও কাছে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাক, সেটাই তাঁরা চান। রাজার এক আত্মীয় সাবির আলি শেখের বক্তব্য, ‘‘শিল্পীর কোনও শ্রেণি, সম্প্রদায় হয় না। রাজাকে ভালবাসেন না, এমন মানুষ এলাকায় নেই। সবাই ওকে উৎসাহ দেয়।’’

বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে শাসপুর খেলার মাঠ শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। স্কুলের শিক্ষিকা সোমা দাসগুপ্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘শুধু মূর্তি গড়া নয়, যে কোনও জিনিস দেখে একেবারে হুবহু এঁকে দিতে পারে রাজা। আমাদের আশা, বড় হয়ে ও বড় শিল্পী হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Durga Puja 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE