E-Paper

আসানসোল পুরসভায় দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ

পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কুলটির বরো কার্যালয়ে ৮৭ লক্ষ টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সে সময় পুরসভা থানায় অভিযোগও করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৮
An image of Asansol Municipality

আসানসোল পুরসভা। —ফাইল চিত্র।

প্রায় বছর তিনেক আগে আসানসোল পুরসভার কুলটি বরো কার্যালয়ে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি সেই দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে কংগ্রেস। অবশেষে মেয়র বিধান উপাধ্যায় দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আজ, বুধবারের মধ্যে পুরসভার অর্থ দফতরকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পুরসভার লিগাল সেলও এই দুর্নীতির তদন্ত করবে।

পুরসভা সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কুলটির বরো কার্যালয়ে ৮৭ লক্ষ টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সে সময় পুরসভা থানায় অভিযোগও করে। কিন্তু গত তিন বছরেও দুর্নীতি অভিযোগের কোনও কিনারা হয়নি। ওই দুর্নীতির সময়ে পুরসভার পরিচালন ভার ছিল প্রশাসকের উপর।

এই পরিস্থিতিতে নতুন পুরবোর্ড তৈরির পরে, জুলাইয়ের বোর্ড-বৈঠকে তছরুপের পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানান কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা গোলাম সরওয়ার। তিনি বলেন, “এই টাকা সাধারণ জনতার কাছ থেকে কর বাবদ আদায় করা হয়েছিল। টাকা পুরসভায় জমা পড়েনি। ফলে, উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বার করে পুর-কর্তৃপক্ষের উচিত টাকা উদ্ধার করা। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে।” পাশাপাশি, তাঁর প্রশ্ন, যখন অভিযোগ উঠেছিল, সে সময় পুরসভার অর্থ দফতরের আধিকারিকেরাও উপযুক্ত পদক্ষেপ করেননি কেন, তা নিয়েও তদন্ত হওয়া দরকার।

বিধান বলেন, “আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। অর্থ দফতর এ বিষয়ে তদন্ত করে বুধবারের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।” পুর-সচিব শুভজিৎ বসু বলেন, “অর্থ দফতরের সঙ্গে পুরসভার আইন দফতরও এই ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবে। আমি দুই দফতরকেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় চিঠি দিয়েছি। পরবর্তী বোর্ড বৈঠকে পুরপ্রতিনিধিদের সামনে বিস্তারিত রিপোর্ট রাখা হবে।”

যদিও, অর্থ দফতর অভিযোগ ওঠার সময়ে কেন পদক্ষেপ করেনি বলে যে অভিযোগ উঠেছে, সে প্রসঙ্গে পুরনিগমের ফিনান্স অফিসার সুকান্ত দত্ত বলেন, “আমার কিছু জানা নেই। তদন্তের বিষয়ে কোনও নির্দেশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে পাইনি।” পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০-তেও অর্থ দফতরের আধিকারিক পদে ছিলেন সুকান্ত।

পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্থ দফতরের অধীনে থাকা এক জন অস্থায়ী কর্মীকে করের টাকা আদায়ের কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ওই কর্মী কর বাবদ প্রায় এক কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা আদায় করেছিলেন। কিন্তু পুরনিগমে সব টাকা জমা করা হয়নি বলে অভিযোগ। প্রাথমিক তদন্তে পুরকর্তারা জানতে পেরেছিলেন, প্রতিদিন কর বাবদ যত টাকা আদায় করা হত, তার থেকে কম টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতেন ওই কর্মী। ব্যাঙ্কে যে পরিমাণ টাকা জমা দেওয়া হত, সে অঙ্ক লিখতেন ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার স্লিপে। আর স্লিপের যে অংশটি পুরসভায় রাখা হত, সেটিতে জমা দেওয়া টাকার অঙ্কের চেয়ে বেশি পরিমাণে লিখে নিজের বানানো ব্যাঙ্কের স্ট্যাম্পের ছাপ মেরে জমা দিতেন। ফলে, পুরসভার অর্থ দফতরের আধিকারিকেরা প্রথমে বিষয়টি জানতে পারেননি। কিন্তু ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট হাতে পাওয়ার পরে তছরুপ নজরে পড়ে। ওই কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও, এ পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।

তবে, তিন বছরেও কেন কিনারা হয়নি এই বিষয়টির তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিজেপি। দলের পুরপ্রতিনিধি গৌরব গুপ্ত বলেন, “ঠিক ভাবে দেখলে, পুরনিগমে বহু আর্থিক নয়ছয়ই সামনে আসতে পারে। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের ধরার সদিচ্ছা নেই, তাই তিন বছরেও কিছু হয়নি। এখন প্রশ্ন উঠছে বলে আবার তদন্তের কথা বলা হচ্ছে।” যদিও, বিধানের বক্তব্য, “বিরোধীরা যা খুশি বলতেই পারেন। কিন্তু সে সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Asansol Municipal Corporation Asansol Congress Corruption

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy