Advertisement
১৮ মে ২০২৪
আক্ষেপ কারিগরদের

বহুতলের ধাক্কায় সাফ খেজুর গাছ, গুড়ে টান

দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ছে শীত। আর শীত মানেই নলেন গুড়। কিন্তু টাটকা খেজুর রসে টান পড়তেই হারিয়ে যেতে বসেছে সুগন্ধি সেই গুড়।

হাঁড়ি বাঁধবেন কোথায়, সেটাই এখন চিন্তা। ছবি: শৈলেন সরকার।

হাঁড়ি বাঁধবেন কোথায়, সেটাই এখন চিন্তা। ছবি: শৈলেন সরকার।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৩৮
Share: Save:

দোড়গোড়ায় কড়া নাড়ছে শীত। আর শীত মানেই নলেন গুড়। কিন্তু টাটকা খেজুর রসে টান পড়তেই হারিয়ে যেতে বসেছে সুগন্ধি সেই গুড়। ফলে, শুধু যে রসনা অতৃপ্ত থেকে যাচ্ছে তা নয়, মাথায় হাত পড়ছে গুড় শিল্পীদের।বিঘের পর বিঘে জমি জুড়ে এক সময়ে শুধুই ছিল খেজুরের বন। কিন্তু এখন সেই জায়গাতেই গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসন ও কারখানা। রয়ে গিয়েছে শুধু হাতে গোনা খানকয়েক খেজুর গাছ। তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে গুড় তৈরির কারিগরদের। তাঁদের আক্ষেপ, গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় চাহিদা মতো গুড়ের জোগান দিতে পারেন না।

এমনই এক কারিগর হরিনারায়ণ হালদার জানান, বছর দশেক আগেও তাঁরা খেজুর গাছের ইজারা নিয়ে কূল পেতেন না। গোবিন্দপুর, পাঁচগাছিয়া, সেনর‌্যালে, কন্যাপুর লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকায় শুধুই ছিল খেজুরের বন। এখন সে সব অতীত। দিন-দিন গাছ কেটে সাফ করে মাথা তুলেছে কংক্রিটের জঙ্গল। তাঁর প্রায় তিরিশ বছররের ব্যবসা। হরিনারায়ণবাবু বলেন, ‘‘তখন অগুনতি গাছ পেতাম। সকাল থেকে সন্ধে রস আর গুড় বিক্রি করেও ভাঁড়ার ফুরত না। এখন চাহিদা আরও বেড়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত গাছ পাই না। তাই জোগানেও টান পড়েছে।’’

গত বছর কন্যাপুর পলিটেকনিক কলেজ লাগোয়া এলাকায় খেজুর গাছ ইজারা নিয়ে বিপদে পড়েছিলেন তাজমহল শেখ। তাঁর কথায়, ‘‘প্রায় দশটা গাছ ঝাড়াই করার পরে রসের হাড়ি বাঁধার মুখে বাগানের মালিক জমি বেচবে বলে গাছগুলি কেটে দিয়েছিলেন। এ বার আর ওই মুখো হইনি।’’ গোবিন্দপুর এলাকায় সামান্য কিছু গাছ ইজারা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন, জানান তিনি। এই কারিগরদের প্রত্যেকেরই দাবি, গাছের সংখ্যা হু-হু করে কমায় পর্যাপ্ত গুড়ের জোগান নেই। কেজি প্রতি ১২০ টাকা দাম নিয়েও খদ্দের সামাল দিতে পারেন না।

এখানেই শেষ নয়। গুড় বানাতে ইদানীং জ্বালানির সমস্যাতেও ভুগছেন কারিগরেরা। আগে ঝোপঝাড় জঙ্গলের অভাব ছিল না। সেখান থেকে শুকনো কুটো জোগাড় করেই চলত জ্বালানির কাজ। এখন আর সে সব মেলে না। মাঝে কয়েক বছর সমস্যা মিটিয়েছিল সস্তায় পাওয়া চুরির কয়লা। কিন্তু এখন সে সব আর সে ভাবে মিলছে না। তবু ব্যবসার টানে প্রতি বছরই তাঁরা গাছ ইজারা নেন। গুড় তৈরি করে বিক্রিও করেন।

গোবিন্দপুর, পাঁচগাছিয়া, কন্যাপুরে গিয়ে দেখা যায়, জনা কয়েক গুড়ের কারিগর খেজুর পাতার ছাউনি বানিয়ে বসে পড়েছেন। চলছে গাছ ঝাড়াইয়ের কাজও। কিন্তু আগের মতো উৎসাহ নেই। শেখ লোকমান নামে এক কারিগর বলেন, ‘‘প্রতি বছর যে ভাবে গাছের সংখ্যা কমছে তাতে এ বার হয়তো ব্যবসা গুটিয়েই ফেলতে হবে।’’ জোগানে টান পড়তে থাকায় হতাশ এলাকার খুচরো ক্রেতা বা পাইকরি ব্যবসায়ীরাও। খেজুর গাছগুলি বাঁচানোর ব্যবস্থা হোক, আর্জি তাঁদের প্রত্যেকরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

construction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE