উপসর্গ-সহ ‘কোভিড’ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সব কারোনা-আক্রান্তের ডেঙ্গি পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। গাংপুরের কাছে বেসরকারি কোভিড- হাসপাতালে ডেঙ্গি পরীক্ষার ‘কিট’ পাঠানো হয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। সব ঠিক থাকলে, মঙ্গল বা বুধবার থেকে ডেঙ্গি পরীক্ষা শুরু হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সময়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত অনেকেরও খোঁজ মেলে। তাই ডেঙ্গির সঙ্গে ম্যালেরিয়া পরীক্ষাও করানোর ভাবনা রয়েছে।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘কোভিড-হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া সংক্রমিতদের ডেঙ্গি পরীক্ষা শুরু হবে। ধীরে ধীরে সব জায়গাতেই তা করা হবে। ‘সারি’ ওয়ার্ড এবং বিভিন্ন ফ্লু-ক্যাম্পে জ্বর নিয়ে যাঁরা আসবেন, তাঁদের বাধ্যতামূলক ভাবে করোনার সঙ্গে ডেঙ্গি পরীক্ষাও হবে।’’ স্বাস্থ্য-কর্তাদের মতে, করোনা-সংক্রমণ ক্রমে বাড়ছে। এর মধ্যে এখনও পর্যন্ত ‘পুরনো শত্রু’ ডেঙ্গি ঘাপটি মেরে থাকলেও যে কোনও সময়ে তা আলাদা ভাবে ‘মাথাচাড়া’ দিতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। সে রকম সময়ও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। সে কারণেই প্রতিরোধের পাশাপাশি, পরীক্ষা বাড়ানোর উপরে জোর দিতে চাওয়া হচ্ছে, জানায় জেলা প্রশাসন।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘করোনা রুখতে আমরা এককাট্টা। তার ফাঁকে ডেঙ্গির প্রভাব যাতে না বেড়ে যায়, সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’’ স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর ধরে দেখা গিয়েছে, ডেঙ্গির উপদ্রব শুরু হয়েছে পুজোর আগে থেকে। গত বছর অগস্টের মাঝামাঝি জেলায় হাতেগোনা কয়েকজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পুজোর পরে প্রকোপ বাড়তে থাকে। বছর শেষে ৭৪৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন। বর্ধমান শহরে ৮০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ বারও ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ধারণা। দফতরের আধিকারিকেরা জানান, জ্বর হলে এখন সবাই করোনা নিয়ে সন্দেহ করছেন। কিন্তু তার পরিবর্তে ডেঙ্গিও হতে পারে। আবার করোনার সঙ্গে ডেঙ্গির প্রভাব থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই জ্বরের উপসর্গ নিয়ে কোভিড-হাসপাতালে ভর্তি থাকা আক্রান্তদের পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সামনের মাস থেকে ‘সারি’ এবং ‘ইলি’ ওয়ার্ডে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের এবং ফ্লু-ক্যাম্পে আসা রোগীদেরও ডেঙ্গি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর।
তবে স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, এখনও পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ডেপুটি সিএমওএইচ (২) সুনেত্রা মজুমদার বলেন, ‘‘জানুয়ারি থেকেই ডেঙ্গি প্রতিরোধে সব দফতর মাঠে নেমেছে। করোনার জন্য কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। তবে আমরা জানি, এর পরে ডেঙ্গির প্রকোপের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সব দফতরকে নিয়ে সমন্বয় করে চলেছি।’’ জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলামের কথায়, ‘‘ডেঙ্গি রুখতে ২১৫টি পঞ্চায়েতে ৩১৭০ জন কাজ করছেন। তাঁদের উপরে আমাদের নজরদারি রয়েছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)