Advertisement
১৫ মে ২০২৪

পাঁচ বছর পরে পা রেখে আশায় বাম

মিছিলের মুখগুলো চেনা। ঝান্ডার রঙও পরিচিত। তবে দীর্ঘ অদর্শনে সেই স্মৃতি ফিকে হতে শুরু করেছিল। বিধানসভা ভোটের আগে তা যেন আবার ফিরে আসছে বুদবুদের দেবশালায়। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে যেখানে সিপিএমের কোনও কর্মসূচি ছিল না, এই বিধানসভা ভোটের আগে তা ফের দেখা যাচ্ছে আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই এলাকায়।

দেবশালায় প্রচারে সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব মেটে। নিজস্ব চিত্র।

দেবশালায় প্রচারে সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব মেটে। নিজস্ব চিত্র।

বিপ্লব ভট্টাচার্য
বুদবুদ শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০১:১৩
Share: Save:

মিছিলের মুখগুলো চেনা। ঝান্ডার রঙও পরিচিত। তবে দীর্ঘ অদর্শনে সেই স্মৃতি ফিকে হতে শুরু করেছিল।

বিধানসভা ভোটের আগে তা যেন আবার ফিরে আসছে বুদবুদের দেবশালায়। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটের পরে যেখানে সিপিএমের কোনও কর্মসূচি ছিল না, এই বিধানসভা ভোটের আগে তা ফের দেখা যাচ্ছে আউশগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই এলাকায়। বড়সড় মিছিল করে লড়াইয়ে থাকার বার্তাও দিয়েছে সিপিএম।

শুধু বুদবুদ নয়, রাজ্যের নানা এলাকাতেই অনেক দিনের আড় ভেঙে পথে নামতে শুরু করেছেন বাম কর্মী-সমর্থকেরা। দিন কয়েক আগেই বীরভূমের ইলাবাজারে বাম-কংগ্রেস জোটের বড়সড় মিছিল হয়। সেখানেও বছর পাঁচেক ধরে প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচি দেখা যায়নি বামেদের। বামেদের জাঠার সময়েও হুগলি, দুই মেদিনীপুরের নানা এলাকায় অনেক দিন পরে পথে পা মেলাতে দেখা গিয়েছিল কর্মী-সমর্থকেরা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাজ্যে পরিবর্তনের আগে বুদবুদের এই এলাকায় চার দিকে শুধু নজরে পড়ত লাল পতাকা। সে বার পরিবর্তনের হাওয়ার মধ্যেও আউশগ্রাম আসনটি দখলে রেখেছিল সিপিএম। দেবশালাতেও সিপিএমের প্রতিপত্তি ছিল। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তখন এলাকায় বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া যেত না। তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রায়ই হামলার অভিযোগ তুলত।

কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের পরেই ছবিটা একেবারে পাল্টে যায়। লাল ঝান্ডার জায়গায় এলাকা ভরে ওঠে ঘাসফুল প্রতীকে। সিপিএমের সংগঠনও প্রায় ভেঙে পড়ে। আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ উঠতে শুরু করে সিপিএমের তরফে। স্থানীয় নেতাদের দাবি ছিল, বিধানসভা ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে প্রায় ২০ জন সিপিএম নেতাকে ঘরছাড়া হতে হয়। হামলা হয় বাড়িতেও। তৃণমূল যদিও বরাবর পাল্টা দাবি করে এসেছে, এক সময়ে এলাকার মানুষজনের উপরে নানা ভাবে অত্যাচার করেছে সিপিএম। তাই পরিস্থিতি পাল্টানোর পরে জনরোষ গিয়ে পড়েছিল সিপিএম নেতা-কর্মীদের উপরে।

বেহাল সংগঠন নিয়ে পঞ্চায়েত ভোট বা লোকসভা ভোটে এই এলাকায় কার্যত কোনও লড়াই দিতে পারেনি সিপিএম। লোকসভা ভোটের সময় দেবশালা এলাকায় প্রচারেও আসেননি সিপিএমের প্রার্থী। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বেশ কিছু বুথে তারা এজেন্টও দিতে পারেনি। সিপিএমের দাবি ছিল, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্যই এই পরিস্থিতি।

এ বারের বিধানসভা ভোটের আগে পরিস্থিতি অবশ্য অনেকটা পাল্টে গিয়েছে। এক দিকে, বাম-কংগ্রেসে বোঝাপড়া হয়েছে। অন্য দিকে, নানা দুর্নীতির অভিযোগে অস্বস্তিতে শাসকদল। দেবশালাতেও তাই তাঁরা ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পাচ্ছেন বলে জেলা সিপিএম নেতাদের দাবি। দেবশালায় সম্প্রতি দু’দিন প্রচারে যান সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব মেটে। গত বৃহস্পতিবার দেবশালার কাঁকড়া, রাঙাখুলা, ধানতোড়-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে যান তিনি। সঙ্গে এলাকার কর্মী-সমর্থকেরাও ছিলেন। রবিবার প্রচার সারেন মৌকোটা, পরিশা, ঝিঝিরা, দেবশালা-সহ বেশ কয়েক’টি গ্রামে। ছিলেন কয়েকশো দলীয় কর্মী।

বহু দিন পরে এলাকায় ফের পতাকা বাঁধতে পেরে খুশি সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা। এক সিপিএম কর্মীর কথায়, ‘‘পাঁচ বছর এই গ্রামে প্রচার করতে পারিনি। বহু দিন পরে একটু যেন স্বস্তি পেলাম।’’ প্রচারে বেশ সাড়া পেয়েছেন দাবি করে সিপিএম প্রার্থী বাসুদেব মেটে বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে ফল আমাদের অনুকূলেই হবে।’’

সিপিএমের তোলা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের এক জেলা নেতার দাবি, ‘‘ওই এলাকায় সিপিএমের কোনও সংগঠন নেই। ছোট মিছিল করেই জেতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। মানুষই ইভিএমে এর উত্তর দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

vote campaign basudeb mete cpm cpm candidate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE