Advertisement
E-Paper

elephant attack: পায়ে পিষ্ট কয়েক হাজার বিঘার ধান কাজল

যেখানেই হাতিরা গিয়েছে, দূর থেকে পিছু নিয়েছে ভিড়। সব থেকে বেশি ভিড় জমে যায় সর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আবাসনের আশপাশে।

কাজল মির্জা

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৬
 আউশগ্রামে হাতির দল।

আউশগ্রামে হাতির দল। নিজস্ব চিত্র।

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার ঝাপটা সামলে মাঠে মাঠে পাকতে শুরু করেছে ধান। আর সেই ‘ধানে যেন মই দিল’ দলমা থেকে আসা সাতটি শাবক-সহ প্রায় ৫০টি হাতি। বৃহস্পতিবার ভোরে সবুজ ধানখেত ধরে কালো পাথরের মতো হাতির পাল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন গলসি, আউশগ্রামের বাসিন্দারা। আনন্দে মোবাইল ফোন বার করে অনেকে ছবি তুলতে শুরু করেন। অনেকে হাতিদের পিছু নেন। কিন্তু বেলা বাড়তেই বিঘার পর বিঘা জমির ধান খেত হাতিদের দাপাদাপিতে তছনছ হয়ে যাওয়ার খবর আসতেই বিস্ময় বদলে তৈরি হয় ক্ষোভ। ডিএফও (পূর্ব বর্ধমান) নিশা গোস্বামীর আশ্বাস, “বহু ধান জমির ক্ষতি হয়েছে বলে আমাদের কাছে রিপোর্ট এসেছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ণয় করা হয়নি। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পৌঁছে দেব।”

চাষিদের দাবি, হাতি যাওয়ার পথে রামগোপালপুর, শিরোরাই, পুতনা, পুরষা, উচ্চগ্রাম, সর, ভোতা-সহ একাধিক গ্রামের মাঠে হাতির পালের হানায় ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার বিঘা জমির ধান। ফের ওই পথে হাতিরা ফিরলে আরও কয়েকশো বিঘা জমির ধান নষ্ট হবে বলে চাষিদের আশঙ্কা। বিকেলে আউশগ্রামের নোয়াদার ঢালে হাতিদের ‘রুট’ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে বনকর্মীদের বচসা বাধে। গ্রামবাসীর একাংশ দাবি করেন বর্ধমান-রামপুরহাট রেলপথ ধরে হাতিগুলিকে নিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে গ্রামবাসীর সঙ্গে হুলাপাটির লোকেদের ধাক্কাধাক্কি হয় বলে অভিযোগ। আউশগ্রামের রেঞ্জ অফিসারকে হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। যদিও হেনস্থার অভিযোগ বাসিন্দারা মানেননি। রাতে বিডিও (আউশগ্রাম ১) অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাতির দলকে আলিগ্রাম হয়ে ফেরত পাঠানোর জন্য হুলপার্টির লোকজন চেষ্টা করছেন।’’

গলসি উচ্চগ্রামের চাষি বিনয় বাগদি, সিংপুরের শেখ মোরসেলিম বলেন, “হাতির পালটা যে পথে গিয়েছে, সে দিকের প্রায় সব ধান শেষ। পাকা ধানে মই দিয়ে চলে গেলে হাতিগুলো।’’ তাঁদের দাবি, দ্রুত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক বন দফতর। আউশগ্রামের ভোতা ও নওয়াদা এলাকার মানুষের ক্ষোভ, তাঁদের এলাকাতেও হাতির পায়ের চাপে প্রচুর ধানগাছ মাটিতে মিশে গিয়েছে। হাতিরা ধান যত না খেয়েছে, তার থেকে বেশি ছড়িয়ে নষ্ট করেছে। ভোতা ও আলিগ্রামের বাসিন্দা শেখ রবিউল, শেখ কুতুবুদ্দিন, শেখ মাখনদের দাবি, ‘‘আমাদের সব শেষ করে দিল হাতির পাল।’’ গলসি ১ ব্লকের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ প্রশান্ত লাহা বলেন, “হাতিদের জন্য ঘরবাড়ি বা প্রাণহানি হয়নি ঠিকই। তবে এলাকার প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমির ধানের ক্ষতি হওয়ার রিপোর্ট পেয়েছি। বন দফতরকে সব জানাব।” আউশগ্রাম ১ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা দেবতনু মাইতি জানান, আউশগ্রামের বিল্বগ্রাম, দিগনগর ১, গুসকরা ২ পঞ্চায়েতের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির ধান হাতির হানায় নষ্ট হয়েছে বলে তাঁরা খবর পেয়েছেন।

তবে সকালে হাতিদের দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে। দিনভর হাতিদের কে, কতটা কাছ থেকে দেখেছেন, তা নিয়ে চর্চা চলেছে। এ দিন সকালে পুরষার কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে একটি চায়ের দোকানের কাছে চলে এসেছিল হাতিগুলি। ওই দোকেনের মালিক জিকু শেখ বলেন, “একদম পাশেই চলে এসেছিল কয়েকটা হাতি। ভয়ে দোকান ফেলে পালাই। কপাল ভাল দোকানের কোনও ক্ষতি করেনি।’’

শিরোরাই গ্রামের শেখ সিরাজুল হক এ দিন ভোরে মোটরবাইক নিয়ে বাজারে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় আচমকায় হাতির পাল দেখে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান। তিনি বলেন, “আচমকা সামনে এক সঙ্গে এত হাতি দেখে ঘাবড়ে যাই। পড়ে যাওয়ার পরে মনে হয়েছিল, হাতিগুলো আমাকে পিষে মেরে ফেলবে। ভাগ্য ভাল, ওরা আমার দিকে ফিরেও তাকায়নি।’’

যেখানেই হাতিরা গিয়েছে, দূর থেকে পিছু নিয়েছে ভিড়। সব থেকে বেশি ভিড় জমে যায় সর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আবাসনের আশপাশে। আবাসনের পিছনের জঙ্গলে হাতিগুলি সকালে ঘণ্টাখানেক ছিল। কয়েক হাজার মানুষ আবাসনের পাঁচিলের আড়াল থেকে হাতিদের দেখতে থাকেন। বন কর্মীরা বার বার গ্রামবাসীকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করলেও কান দেয় কে? সর গ্রামের টুম্পা দাস, উচ্চগ্রাম আকিব হোসেন বলেন, “এক সঙ্গে এত হাতি কোনও দিন দেখিনি। তাই দেখার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে।’’ ডিএফও বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে যেখানে হাতি রয়েছে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। রাতের দিকে দামোদর নদ পার করে হাতিদের বাঁকুড়ায় ফেরত পাঠানো হবে।”

elephant attack
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy