Advertisement
১৫ মে ২০২৪

জল কমেছে, বাধা ফেরি চলাচলে

মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ভাগীরথীতে ফরাক্কার ফিডার ক্যানালে কয়লা বোঝাই ১৩টি বার্জ আটকে যায়। এ ছাড়া হাওড়ার বালি, বহরমপুরের ফরাসডাঙা— দিন কয়েকের মধ্যেই একের পর এক চর জেগে উঠতে থাকে গঙ্গাবক্ষে।

জল কমেছে কাটোয়া ফেরিঘাটে। —অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

জল কমেছে কাটোয়া ফেরিঘাটে। —অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা ও কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০২:৩৭
Share: Save:

মাত্র এক সপ্তাহ আগেই ভাগীরথীতে ফরাক্কার ফিডার ক্যানালে কয়লা বোঝাই ১৩টি বার্জ আটকে যায়। এ ছাড়া হাওড়ার বালি, বহরমপুরের ফরাসডাঙা— দিন কয়েকের মধ্যেই একের পর এক চর জেগে উঠতে থাকে গঙ্গাবক্ষে। এ বার সমস্যা দেখা গেল কালনা, কাটোয়াতেও। ভাগীরথীর জলস্তর নেমে যাওয়ায় এই দুই মহকুমা ও নদিয়ার একাংশে বিস্তীর্ণ এলাকায় ফেরি চলাচলে সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানান বাসিন্দারা।

বাসিন্দারা জানান, ভোর হতেই শুরু হয় খেয়া পারাপার। কালনা থেকে ধান, চাল-সহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহণ হয় নদিয়ার নৃসিংহপুর ঘাট। কালনা, কাটোয়ার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বাজারেও দিনভর আসাযাওয়া করেন নদিয়ার বাসিন্দারা। কালনা খেয়াঘাটে যাত্রী পরিবহণের জন্য রয়েছে ৪টি নৌকা। এ ছড়া ভারী যানবাহন পরিবহণের জন্য কাজ করে দু’টি বার্জ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস খানেক ধরে ভাগীরথীর জলস্তর ক্রমশ কমে যাচ্ছে। মাঝিদের দাবি, নৌকা চলাচলের জন্য নদীতে প্রয়োজনীয় স্রোত নেই। বেশ কয়েকটি জায়গায় ভাগীরথীতে কোমর জলও নেই বলে জানান বাসিন্দরা।

এই পরিস্থিতিতে প্রায়শই নদীর পাড়ে বাঁশের মাচা দিয়ে তৈরি অস্থায়ী ঘাটগুলি বদলাতে হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। মাঝিরা জানান, অনেক সময়েই নৌকার নীচের অংশ জলের তলায় বালিতে ঠেকে যাচ্ছে। এর ফলে মারাত্মক ভাবে দুলে উঠছে নৌকা। এক মাঝির দাবি, গত কয়েক মাসে প্রায় ৩ ফুট কমে গিয়েছে নদীর জলস্তর। মাঝেসাঝে নৌকা বালিতে আটকে যাওয়ায় যাতায়াতের জন্য সময়ও নষ্ট হচ্ছে বলে খবর। মঙ্গলবার পূর্ণিমা ঘোষ নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘নৌকায় চাপতেই এখন ভয় লাগছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ধাক্কা খেয়ে নৌকা উল্টে যাবে।’’ যাত্রী সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে প্রায় পাঁচশো মিটারের বেশি পথ ঘুরে নৃসিংহপুর ঘাটে যেতে হচ্ছে বলে জানান মাঝিরা। এর ফলে বাড়তি তেল খরচ হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা।

সমস্যা তৈরি হয়েছে কাটোয়া খেয়াঘাটেও। এই খেয়াঘাটের উল্টো দিকে রয়েছে নদিয়ার বল্লভপাড়া ঘাট। ভোর থেকেই এই এলাকা থেকেও শুরু হয় যাত্রী ও পণ্য পরিবহণের কাজ। নদীর জলস্তর কমে যাওয়ায় গত তিন ধরে বার্জ চলাচল করেনি বলে খবর। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ধান ও গম কাটার জন্য হারভেস্টার নামে একটি যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই মুহূর্তে ১০টি এমন যন্ত্র রয়েছে কাটোয়াতে। এই যন্ত্রগুলি মুর্শিদাবাদ, নদিয়া-সহ বিভিন্ন জেলায় কাজ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বার্জ বন্ধ থাকায় সেই ব্যবসাও মার খাচ্ছে বলে জানান যন্ত্রের মালিকেরা। পঞ্জাবের বাসিন্দা আরমান সিংহ নামে এক হারভেস্টর চালক বলেন, ‘‘তিন ধরে বসে আছি। কী ভাবে মুর্শিদাবাদে যাব, বুঝতে পারছি না।’’

স্নান করতে গিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে জানান বাসিন্দারা। কাটোয়ার বিভিন্ন নদীঘাটে প্রতিদিন প্রায় পাঁচশো মানুষ স্নান করেন বলে জানা গিয়েছে। কাটোয়া ঘাট বাজার কমিটির সম্পাদক কার্তিক দাস বলেন, ‘‘জল কমে যাওয়ায় ঘাটগুলি বিপজ্জজনক হয়ে উঠেছে। এর ফলে স্নান করতে গিয়েও সমস্যা হচ্ছে।’’

ফরাক্কা ব্যারাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ জল বন্টন চুক্তির গেরোতে ফি বছরই এমন সমস্যার মুখে পড়তে হয় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকাকে। চুক্তি অনুসারে, আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ৩৫ হাজার কিউসেক করে জল দেওয়া হয়। ব্যারাজে এই মুহূর্তে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কিউসেকের মধ্যে জল থাকছে বলে খবর। ২০ মার্চের পরে পরিস্থিতি খানিকটা হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর।

কালনা, কাটোয়ার পাশাপাশি সমস্যা দেখা গিয়েছে নৃসিংহপুর ঘাটেও। দীর্ঘদিন বৃষ্টির অভাবে ঘাট থেকে জেটির দূরত্ব বর্তমানে প্রায় একশো ফুট বলে জানান এক ইজারাদার। এর ফলে সেখানেও অস্থায়ী মাচা তৈরি করে কাজ চালাতে হচ্ছে।

এক দিকে পণ্য ও যাত্রী পরিবহণে ভোগান্তি, শঙ্কার পরিবেশ। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক চুক্তির গেরো। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে বর্তমানে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে অবস্থা বদলানোর আশা নেই বলে দাবি রণজিৎ মোদক নামে এক ইজারাদারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ferries bhagirati ferry service
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE