সরকারি হাসপাতালের বদলে গর্ভপাত করানোর জন্য ছুটেছিলেন নার্সিংহোমে। কিন্তু গর্ভপাতের পরেই প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় মঙ্গলকোটের একটি গ্রামের বাসিন্দা এক বধূর। সরকারি হাসপাতালে এই পরিষেবা বিনামূল্যে মেলে। কিন্তু উপযুক্ত সচেতনতার অভাবে অপেক্ষাকৃত গ্রামীণ এলাকার নার্সিংহোমগুলিতে ছোটার প্রবণতা আখেরে অন্তঃসত্ত্বার জীবন সংশয় ঘটাচ্ছে।
মঙ্গলকোটের ঘটনাটি কী? বছর ত্রিশের ওই মহিলার চার সন্তান রয়েছে। তার পরে ফের তিনি পঞ্চম বার গর্ভবতী হন। বিষয়টি জানতে পারার পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে মহিলাকে মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানে গর্ভপাতের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি, নিয়মের কথা জানান চিকিৎসকেরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, ওই মহিলাকে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু এর পরেই এক জনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে গুসকরার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হন ওই মহিলা। বিএমসিএইচ (মঙ্গলকোট) প্রণয় ঘোষের দাবি, ‘‘নার্সিংহোমে গর্ভপাত করানোর পরেই ওই মহিলা বাড়ি ফেরেন। তার পরে ব্যাপক রক্তক্ষরণের জেরে তিনি অচৈতন্য হয়ে পড়েন।’’ এর পরে তপতী কর্মকার নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী ওই মহিলাকে ফের ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। দু’দিন সেখানেই তাঁর চিকিৎসা হয়। আপাতত তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। শুক্রবার মহিলার বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেন প্রণয়বাবু স্বয়ং। দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় ওষুধও। প্রণয়বাবুর দাবি, ‘‘ঠিক সময় চিকিৎসা না হলে মহিলার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত।’’
কিন্তু ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভপাত করানোর জন্য উপযুক্ত পরিকাঠানো থাকা সত্ত্বেও কেন ওই মহিলা ছুটলেন নার্সিংহোমে? স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের একাংশের দাবি, এমন ঘটনা প্রায়শই দেখা যায়। এর জন্য সচেতনতার অভাবই মূল কারণ বলে দাবি ওই চিকিৎসকদের। কেন? চিকিৎসকেরা জানান, সম্পূর্ণ নিখরচায় উপযুক্ত যত্ন নিয়ে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গর্ভপাত করানো হয়। তাঁরা জানান, এ দেশের আইন অনুযায়ী ভ্রূণের বয়স ২০ সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে গর্ভপাত আইনত অবৈধ। ঠিক পদ্ধতি মেনে গর্ভপাত করানোর পরে অন্তত ১০ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় মহিলাকে। তার পরে অন্তত দু’দিন বিশ্রাম নেওয়া, ঠিক মতো ওষুধ খাওয়া খেতে হয়। রয়েছে বেশ কিছু বিধিনিষেধও। পরিবারের দাবি, গর্ভপাতের কিছু ক্ষণের মধ্যেই ওই মহিলাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সমস্যা আরও বাড়ে। তবে গর্ভপাতের বিষয়ে সরকারি হাসপাতালে কী কী সুযোগসুবিধা মিলবে, সে বিষয়ে সচেতনতা প্রচারে মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী ও আশাকর্মীরা কাজ করেন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়ের আশ্বাস, ‘‘সচেতনতা প্রচারে আরও জোর দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy