Advertisement
E-Paper

বিপণনই কি কাঁটা বিকল্প চাষে

এক দিকে আলুতে লোকসান, অন্য দিকে বোরোয় সেচের জল নিয়ে চিন্তা। প্রশাসন বিকল্প চাষে জোর দিলেও, নতুন পথে হাঁটতে এখনও স্বচ্ছন্দ নন বহু চাষিই। তাঁদের কী পরিস্থিতি, কেন এই পরিস্থিতি?

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:২৩
Mustard seed farm field

খেত থেকে সর্ষে তুলছেন চাষিরা। বর্ধমান ২ ব্লকে। নিজস্ব চিত্র

গতানুগতিক ধান, আলুর পথ ছেড়ে বিকল্পের দিকে ঝোঁকার কথা অন্তত ৩০ বছর আগে থেকে বলা হচ্ছে চাষিদের। বিকল্প চাষে পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছে সরকার। কিন্তু দিনের শেষে বিপণন ব্যবস্থার পরিকাঠামোয় ঘাটতি থাকায় চাষিরা সেই প্রথাগত চাষকেই আঁকড়ে ধরে রয়েছেন, এমনই দাবি প্রশাসনের।

রাজ্যের প্রশাসনিক দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বর্ধমানের গ্রামীণ এলাকায় সূর্যমুখী চাষের প্রসারতা বাড়াতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত জেলার একটা বড় এলাকা জুড়ে সূর্যমুখী চাষও হয়। কিন্তু বিপণনের পরিকাঠামো গড়ে না ওঠায় চাষিরা ফের আলু, ধানেই ফিরে গিয়েছেন। তবে বিভিন্ন সংস্থা তৈলবীজ কিনছে। সে কারণে সর্ষে, তৈলবীজ চাষে উৎসাহ রয়েছে চাষিদের। তার পরিমাপ অবশ্য আশাব্যাঞ্জক নয়।’’ জেলা কৃষি দফতরের দাবি, গত মরসুমের চেয়ে সর্ষে ও তৈলবীজ চাষ এই মরসুমে হাজার হেক্টর করে বেড়েছে।

তৈলবীজ চাষে আগ্রহের কারণ কী? কৃষি দফতরের দাবি, প্রথাগত চাষে যে সমস্যাগুলি তুলে ধরে অন্য চাষে উৎসাহ দেওয়া হয়, এ বার আলু চাষ করতে গিয়ে চাষিরা সেই সমস্যাগুলির মুখোমুখি হন। ফলে, অল্প হলেও চাষিরা আলুর বদলে সর্ষে, তৈলবীজ চাষ করেছেন। কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় সাধারণত ৭৮ হাজার হেক্টরের মতো জমিতে আলু চাষ হয়। গত বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ৬৬,৪৪৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। এ বছর তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ৬৭,১৩০ হেক্টর। পড়ে থাকার জমির একটা অংশে সর্ষে ও তৈলবীজ চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সর্ষে হয়েছিল। এ বার ৩১,৬১০ হেক্টর জমিতে সর্ষে চাষ হয়েছে। আবার, গত বছর জেলায় ১০,৭২২ হেক্টর জমি থেকে তৈলবীজ চাষ বেড়ে হয়েছে ১১,৭৩৫ হেক্টর। বিভিন্ন এলাকার সর্ষে চাষিদের দাবি, ‘‘আলু বীজ ও সারের অত্যধিক দামের কারণে সব জমিতে আলু চাষ করা যায়নি। আবার, হিমঘরে মজুত আলুরও দাম মেলেনি। সেই কারণে সর্ষে চাষ করতে আগ্রহী হয়েছি। সর্ষে চাষে খরচ কম। লাভ তুলনামূলক বেশি।’’

ধান, আলুর বিকল্প হিসেবে শুধু সর্ষে, তৈলবীজ বা আনাজ নয়, ফুল-ফল, মাছ চাষ, প্রাণিপালনেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকেরা জানান। পূর্ব বর্ধমান জেলায় লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে হাঁস-মুরগি-ছাগল, গবাদি পশু পালন করে উপকৃত হচ্ছেন। জেলায় প্রয়োজনের (৭৩.২৫ কোটি) চেয়ে বেশি ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও (৮৭.৯৮ কোটি) নেওয়া হয়েছে। রায়না ২ ও কালনা ১ ব্লকে ছাগল চাষিদের নিয়ে ‘ফার্মার প্রোডাকশন কোম্পানি’ খোলা হয়েছে।

নবান্নের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহায্যে মাটির গুণ দেখে ফুল, ডাল চাষের মতো বিকল্প চাষের দিশা দেখানো হচ্ছে। আতমা প্রকল্পেও এক ছাতার তলায় আনাজের খেত, মাছ চাষের জলাশায়, ফল চাষ করা হচ্ছে। তার সঙ্গে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরকেও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে।’’ ভুট্টা, ব্রোকোলি, মাশরুম, পেঁয়াজ ও অল্প পরিমাণে গমও চাষ হয় এই জেলায়। পূর্বস্থলীতে অনেকের জীবিকা ফুল চাষ।

জেলা কৃষি অধিকর্তা আশিস বারুই জানান, চাষিদের বিকল্প চাষে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তবে চাষিদের দাবি, প্রথাগত চাষ ছেড়ে অন্য পথে হেঁটে সংসার চালাচ্ছেন, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বরং প্রথাগত চাষের পাশে অনেকেই অন্য চাষ করছেন। বিপণন ব্যবস্থা ঠিকমতো গড়ে না উঠলে অন্য পথে টানা হাঁটার লোক পাওয়া মুশকিল।

Alternative Farming Bardhaman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy