Advertisement
E-Paper

নেতাদের বকবক নয়, দেবের খোঁজে ভিড়

‘‘আর কতক্ষণ দেবের জন্য অপেক্ষ করব?’’ ‘‘টিউশন ফেলে দেবকে দেখার জন্য এসেছি। কিন্তু নেতারা এত বকবক করছেন যে বিরক্ত লাগছে।’’ ‘‘আরে আপনাদের নয়, দেবকে দেখব বলেই এসেছি।’’

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১২
কাটোয়ার সভায় দেব।

কাটোয়ার সভায় দেব।

‘‘আর কতক্ষণ দেবের জন্য অপেক্ষ করব?’’

‘‘টিউশন ফেলে দেবকে দেখার জন্য এসেছি। কিন্তু নেতারা এত বকবক করছেন যে বিরক্ত লাগছে।’’

‘‘আরে আপনাদের নয়, দেবকে দেখব বলেই এসেছি।’’

কাটোয়ার চন্দ্রপুর, খণ্ডঘোষের বেরুগ্রাম, বর্ধমানের মির্জাপুর— ভোট প্রচারের সভা নাকি শুক্রবারের দেবের সিনেমার মেগা রিলিজ গুলিয়ে যাচ্ছিল প্রায়। চোদ্দ, একুশ থেকে একেবারে চল্লিশ-বাহাত্তর, দেবকে দেখতে স্কুল পড়ুয়া, তরুণী, গৃহবধূদের ভিড় যেন কিছুতেই বাগ মানছিল না। তৃণমূলের কিছু নেতা-কর্মীরা তো জনসভার মাঠের চেহারা দেখে বলেই ফেললেন, ‘‘এক সময় মনে হচ্ছিল মুকুল রায়ের মতো নেতা নয়, দলের কোনও প্রার্থী নয়, আছে শুধু তারকা দেব।’’

ব্যপারটা কার্যত তাই। বৃহস্পতিবার, পয়লা বৈশাখে পরপর জনসভায় কোথাও দেড় ঘন্টা তো চার ঘন্টা দেরিতে পৌঁছলেন নায়ক। তাপমাত্রা যে চল্লিশ ছুঁইছুঁই মাঠ দেখে তা বোঝাই যাচ্ছিল না। বরং সভা শুরু হয়ে যাওয়ার কিছু পরে মাঠ বোঝাই করে ছিলেন শুধু মহিলারা। প্রকাশ্যেই চেঁচিয়ে বারবার তাঁরা জানাচ্ছিলেন, আর কিছু নয়, রুপোলি পর্দার নায়ককে সামনা-সামনি দেখতেই ছুটে এসেছেন তাঁরা। ভিড়ের কথা বুঝতে পেরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায়ও এক বার বলে ফেললেন, “আমাদের বক্তব্য শুনতে নয়। সভায় তরুণী-যুবতীরা এসেছেন, তারুণ্যের জয়গান গাইতে।”

বৃহস্পতিবার বর্ধমান পূর্ব লোকসভার চারটে জায়গায় সভা করেন মুকুল রায়। সঙ্গে ছিলেন ঘাটালের সাংসদ দেব। প্রথম সভাটি হয় মঙ্গলকোট বিধানসভার আওতায় থাকা কাটোয়ার চন্দ্রপুরে। বিকেল তিনটেয় সভা শুরুর কথা থাকলেও নেতারা আসেন প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ। তবে দেবের জন্য অপেক্ষায় গরম, দেরি কিছুই বাধা হয়নি। দিব্যি চন্দ্রপুর হাইস্কুলের মাঠে একটু গাছের ছায়া খুঁজে, কিংবা মাথায় আঁচাল দিয়ে বসে পড়েছিলেন নায়কের ‘ফ্যানেরা’। মুকুল রায় মঞ্চে উঠেই বলেন, “কলকাতায় একটি কাজের জন্য আসতে দেরি হল। আপনারা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন। আপনাদের রাজনৈতিক বক্তব্য শোনার মতো ধৈর্য্য আর নেই।” তারপরেই সোজা আবেদন করেন, “দিদির পছন্দের মানুষ আপনাদের প্রার্থী হয়েছেন। আপনারা তাঁকে জেতাবেন।” ততক্ষণ ভিড়ের সাড়াশব্দ তেমন ছিল না, কিন্তু দেব মঞ্চে উঠে হাত নেড়ে নমস্কার করতেই শুরু হয়ে যায় চিৎকার। হাত নাড়তে নাড়তে মহিলারা মঞ্চের কাছে চলে আসেন। দেব বলেন, “ভাল আছেন তো? আপনাদের প্রার্থীদের জেতাবেন।”

পরের গন্তব্য খণ্ডঘোষের বেরুগ্রাম। সেখানেও বাঁশের ব্যরিকেড আবেগ আটকাতে পারেনি। বছরের প্রথম দিনে এমন ‘উপহার’ চাঙ্গা করে দেয় মহিলাদের। দু’এক কথা বলার পরেই দেবকে নিয়ে মুকুল রায় চলে আসেন বর্ধমানের মির্জাপুরে। বর্ধমান-কাটোয়া রোডের ধারে একটি স্কুলের সামনের মাঠে ২টো থেকে লোক জমতে শুরু করেছিল। সভার নির্ধারিত সময় ছিল সাড়ে তিনটে। যদিও মুকুল-দেব এলেন প্রায় সাতটা নাগাদ।


মির্জাপুরের সভায় দেবকে দেখে উচ্ছ্বাস।— উদিত সিংহ।

নায়কের মঞ্চে ডোকার সেই মাহেন্দ্রক্ষণের আগে পর্যন্ত বেশ অধৈর্য্য হয়ে উঠেছিলেন তরুণী-যুবকেরা। মঞ্চে তখন বক্তব্য রাখছিলেন পূর্বস্থলী দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী তথা সভার সঞ্চালক জেলা সভাপতি (গ্রামিীণ) স্বপন দেবনাথ। কিন্তু জমা হওয়া ভিড় থেকে মিনিটে মিনিটে প্রশ্ন উঠছিল, ‘‘আমরা আর কতক্ষণ দেবের জন্য অপেক্ষা করব?’’ বিরক্তির সুরে কেউ কেউ বলছিলেন, “টিউশন ফেলে দেবকে দেখার জন্য এসেছি। কিন্তু এই নেতারা এত বকবক করছেন যে বিরক্ত লাগছে।” মির্জাপুর থেকে আসা তুলতুল গুপ্ত কিংবা বিজয়রামের মনি সরকারেরা তো সাফ বললেন, ‘‘নেতাদের জন্য নায়ককে দেখব বলে এসেছি।” দেবকে দেখার টান এতটাই যে মুকুল রায় বক্তব্য রাখতে উঠলে কলেজ ছাত্রীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্তব্য করেন, ‘‘আপনাকে দেখার জন্য, বক্তব্য শোনার জন্য আমরা আসেনি।”

ভিড়ের আকর্ষণ বুঝে তৃণমূল প্রার্থীদের জেতানোর আহ্বান জানিয়েই মুকুল রায় মাইক্রোফোন তুলে দেন দেবের হাতে। চিৎকার, আবেগও লাগাম ছেঁড়ে। এক বার হাত মেলাতে, কাছ থেকে দেখতে, মোবাইলে ছবি তুলতে সব ব্যারিকেড ভেঙে মঞ্চের কাছে চলে যান তরুণী-মহিলারা। পুলিশের অবস্থাও সঙ্গীন। দেবও এ বার ভক্তদের দিকে ফুলের তোড়া, চুমু ছুড়ে দেন। প্রচণ্ড চিৎকারে মিশে গোলাপের পাপড়ি গিয়ে পড়ে দেবের জামায়-মাথায়। আর কোনও কথা না বলে হাত নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে যান নায়ক। পিছনে মুকল রায়। তারও পিছনে স্বপন দেবনাথ-সহ জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু ও অন্যান্য নেতারা।

কোনও রকমে বেরিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় এক মহিলা নেত্রী বলেন, “হিরো পর্দায় এলেই যেমন চিৎকার-হাততালি-সিটি ওড়ে, আমাদের সভাতেও দেবকে দেখে তেমনটা হল। ভিড়টা কেন বোঝা গেল।’’

Dev trinamool tmc cpm assembly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy