ডিপিএল। নিজস্ব চিত্র।
রুগণ্ রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থা ‘দুর্গাপুর প্রজেক্টস লিমিটেড’ (ডিপিএল)-এর হাল ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। সোমবার সংস্থা পরিদর্শনে আসার কথা রাজ্যের নতুন বিদ্যুৎমন্ত্রী। সঙ্গে থাকবেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। শনিবার তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংস্থার হাল ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ডিপিএলের আধুনিকীকরণ হবে। দশ দিনের মধ্যে টেন্ডার ডাকা হবে। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হবে।’’
দুর্গাপুর ও লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন শিল্প-সংস্থায় বিদ্যুতের জোগান দিতে ১৯৬০ সালে ডিপিএল গড়ে তোলা হয়। কারিগরি ও বয়সজনিত কারণে প্রথম ছ’টি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে একটি চিনা সংস্থা তিনশো মেগাওয়াটের সপ্তম ইউনিটটি গড়ে তোলে। তা সত্ত্বেও ২০১৩ সালের শেষ দিকে ডিপিএলের উৎপাদন ক্ষমতা শূন্য হয়ে যায়। গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কিনে পরিস্থিতি সামাল দেয় সংস্থাটি। মূলত বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থায় পরিণত হয় ডিপিএল। গত বছর আড়াইশো মেগাওয়াটের অষ্টম ইউনিট চালু হওয়ার পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। একই সময়ে আবার কোকওভেন প্ল্যান্ট বন্ধ হয়ে যায়। বছরে গড়ে দু’শো কোটি টাকা হারে লোকসানে চলছে সংস্থাটি। এ ছাড়া সপ্তম ও অষ্টম ইউনিট গড়ার সময়ে ঋণ নিয়েছিল সংস্থা। তা এখন সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন হাজার চারশো কোটি টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে সংস্থার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে বারবার রাজ্য সরকারের কাছে দরবার করেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তাদের আশঙ্কা, ডিপিএল বসে গেলে যেমন কর্মীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে তেমনই বিদ্যুতের জোগান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কল-কারখানায়। এর প্রভাব পড়বে শিল্পশহরের অর্থনীতিতে। অনিশ্চিত হয়ে পড়বে শহরের বড় অংশের গৃহস্থালীর বিদ্যুতের জোগানও। শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকারের তরফে সে ভাবে কোনও উদ্যোগ নজরে আসেনি। তবে এ বার সেই পরিস্থিতি বদলাতে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী, জানান মলয়বাবু। তিনি বলেন, ‘‘ডিপিএলের হাল ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং আমি ডিপিএল পরিদর্শন করব।’’ তিনি জানান, বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ মেনে বন্ধ ইউনিটগুলি নিয়ে কী করা যাবে, কোকওভেন প্ল্যান্ট লাভজনক ভাবে চালু করার জন্য কী করা হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘‘ডিপিএল অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যৎ ভাল করতে হবে। তবে কোনও অবস্থাতেই কর্মী ছাঁটাই করা হবে না।’’
সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আশা দেখছে কর্মী সংগঠনগুলিও। ডিপিএলের আইএনটিটিইউসি নেতা আলোময় ঘরুই বলেন, ‘‘মন্ত্রীর পরিদর্শনের খবরে খুশি কর্মীরা।’’ আইএনটিইউসি-র একটি প্রতিনিধি দল শনিবার সকালে ভবানীপুরে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিল। সংগঠনের নেতা উমাপদ দাস বলেন, ‘‘কোকওভেন প্ল্যান্ট চালু করা, দুর্গাপুর, বর্ধমান ও বালিতে সংস্থার পড়ে থাকা জমি কাজে লাগানো-সহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে। মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’’
তবে সিটু জেলা সভাপতি বিনেয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনও শিল্পের দিকে নজর নেই সরকারের। ডিপিএলের দিকেও ছিল না। সে জন্যই এই পরিস্থিতি হয়েছে। এখন এই পুনরুজ্জীবনের আশা কতটা সফল হবে, সময়ই বলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy