Advertisement
E-Paper

ব্যারাজ সংস্কার কবে, কাজিয়া কেন্দ্র-রাজ্যে

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৬ ০৬:৩৯
দুর্গাপুরে দামোদরে ডিভিসি-র ব্যারাজ। বিকাশ মশানের তোলা ছবি।

দুর্গাপুরে দামোদরে ডিভিসি-র ব্যারাজ। বিকাশ মশানের তোলা ছবি।

জলধারণ ক্ষমতা নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে। তাই দুর্গাপুরে দামোদরের ডিভিসি ব্যারাজ নিয়ে আশঙ্কার মেঘ ঘনিয়েছে আগেই। ভারী বর্ষা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া ও হুগলি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। অথচ, ব্যারাজের সংস্কার নিয়ে রীতিমতো টানাপড়েন চলছে কেন্দ্র-রাজ্যে।

ডিভিসি জানাচ্ছে, ব্যারাজ সংস্কারের ব্যাপারে তাদের কিছু করার নেই। রাজ্যের তরফে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়নি, দাবি কেন্দ্রের। রাজ্যের আবার পাল্টা দাবি, পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে। ফলে, ব্যারাজ সংস্কারের প্রশ্নে কাজিয়া চলছেই। কবে হবে সংস্কার, নিশ্চিত জবাব মিলছে না কোনও তরফে।

ইতিহাস বলছে, প্রতি বছর দামোদরের বন্যায় বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। সে জন্য দামোদরকে বলা হত ‘অভিশাপ’। ১৯৪৩ সালে এক বন্যায় বর্ধমান, বাঁকুড়া ও হুগলির নিম্ন দামোদর এলাকায় বহু প্রাণহানি হয়, ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ে কেন্দ্র। সেই কমিটি আমেরিকার ‘টেনেসি ভ্যালি অথরিটি’র (টিভিএ) অনুকরণে একটি সংস্থা গড়ার পরামর্শ দেয়। ১৯৪৪ সালে টিভিএ-র বাস্তুকার ডব্লিউ ভরডুইনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি দামোদর ঘিরে বহুমুখী পরিকল্পনার পরামর্শ দেন।

দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে ১৯৪৮-এর ৭ জুলাই স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের (ডিভিসি) জন্ম হয়। পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল, বন্যা প্রতিরোধ, সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পস্থাপন। দামোদর ও তার অববাহিকায় এই রাজ্য ও ঝাড়খণ্ডের প্রায় ১৮টি জেলার জন্য জল ধরে রাখতে বেশ কয়েকটি জলাধার এবং দুর্গাপুরে একটি ব্যারাজ তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই মতো মাইথন, তিলাইয়া, তেনুঘাট, পাঞ্চেত ও কোনারে বাঁধ তৈরি হয়। কিন্তু আর্থিক কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ে বলপাহাড়ি, আইয়ার ও বোকারো বাঁধ তৈরি হয়নি। ফলে, বন্যা নিয়ন্ত্রণের যে লক্ষ্য তা সম্পূর্ণ হয়নি। আবার ভূমিক্ষয়ের কারণে পলি জমে জলাধারগুলির নাব্যতা কমতে থাকে। দীর্ঘকাল ড্রেজিং না হওয়ায় বাঁধগুলির জলধারণ ক্ষমতাও কমেছে। ফলে, একটু বেশি বৃষ্টি হলেই ডিভিসি জল ছাড়তে বাধ্য হয়। তাতে অনেক সময়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়।

১৯৫৫ সালে ডিভিসি দুর্গাপুরে ব্যারাজ গড়ে তোলে। মূলত বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও জলসেচের ব্যবস্থার লক্ষ্যে তা তৈরি হয়েছিল। ব্যারাজ তৈরির পর কোনও দিন পলি তোলার কাজ হয়নি। শুরুতে ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা ছিল প্রায় সাড়ে ৬ মিলিয়ন কিউবিক মিটার। কেন্দ্রীয় জল কমিশন সমীক্ষা করে দেখেছে, এখন তা নেমে এসেছে প্রায় সাড়ে ৩ মিলিয়ন কিউবিক মিটারে। তাই মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে কিছুটা জল ছাড়লেই দুর্গাপুর ব্যারাজ খুলে দিতে হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে মানুষকে।

ব্যারাজে জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় চাষবাসের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। দুর্গাপুর শহরের পানীয় জলের প্রধান উৎসও দামোদর। ব্যারাজ থেকে জল কিনে তা পরিশোধন করে শহরে সরবরাহ করে পুরসভা, ডিএসপি এবং ডিপিএল কারখানা। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের কল-কারখানায় জলের জোগান দেয় দামোদরই। কিন্তু ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা কমতে থাকায় এ সব কিছু নিয়েই প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক।

২০১৩ সালে সাংসদ থাকাকালীন তৎকালীন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়াতকে সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দেন সাইদুল হক। মন্ত্রী চিঠির উত্তরে জানান, রাজ্য সরকার ব্যারাজের বালি তোলার কাজ করবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে কেন্দ্র। সম্প্রতি বর্তমান কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী দুর্গাপুরে এসে দাবি করেন, ঝাড়খণ্ড দামোদর সংস্কারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছে। তা নিয়ে আলোচনাও চলছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেমন কোনও প্রস্তাব তিনি পাননি। সাইদুল হক দাবি করেন, ‘‘সাংসদ থাকাকালীন আমি রাজ্যের সেচমন্ত্রীকে কেন্দ্রের কাছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জমা দেওয়ার আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলাম।’’ রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, কেন্দ্রের কাছে ব্যারাজ সংস্কারের পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে নিজে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও কেন এই ধরনের কথা উঠছে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়!’’ সম্প্রতি দুর্গাপুরে এসে ডিভিসি-র চেয়ারম্যান অ্যান্ডু ল্যাংস্টিও জানিয়ে দিয়েছেন, ব্যারাজ সংস্কারের বিষয়ে ডিভিসি-র কিছু করার নেই।

অর্থাৎ, কবে ব্যারাজ সংস্কার হবে, নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে পারছে না কেউই।

DVC Barrage DVC Renovation Held
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy