Advertisement
০২ মে ২০২৪

বাসিন্দারাই খোঁজ দিচ্ছেন হাতির, ফাঁকা বসে ‘ঐরাবত’

কখনও বাজি ফাটিয়ে, চিৎকার করে হাতি তাড়ানো, কখনও হাতিকে ক্যামেরাবন্দি করার হিড়িক— লোকালয়ে চলে আসা হাতিকে উত্ত্যক্ত করে বিপত্তির নজির কম নয়। এ বার সেই ‘হিড়িকে’র উল্টো ছবি আউশগ্রামের ভাল্কিতে।

হাতি দেখতে ভিড় ভাল্কিতে। নিজস্ব চিত্র।

হাতি দেখতে ভিড় ভাল্কিতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আউশগ্রাম শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০১
Share: Save:

কখনও বাজি ফাটিয়ে, চিৎকার করে হাতি তাড়ানো, কখনও হাতিকে ক্যামেরাবন্দি করার হিড়িক— লোকালয়ে চলে আসা হাতিকে উত্ত্যক্ত করে বিপত্তির নজির কম নয়। এ বার সেই ‘হিড়িকে’র উল্টো ছবি আউশগ্রামের ভাল্কিতে। এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, দলছুট হাতির গতিবিধির খুঁটিনাটি জানিয়ে বন দফতরকে সাহায্য করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই।

বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার থেকে ভাল্কি এলাকায় একটি দলছুট বড় হাতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে হাতিটিকে দু’-একবার খেত জমির পাশে দেখা গেলেও বেশির ভাগ সময়ে সে জঙ্গলেই রয়েছে বলে খবর। হাতিটিকে এলাকাছাড়া করতে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে ‘ঐরাবত’ নামে একটি বিশেষ যানও আনা হয়। তবে ওই যানটিকে আর ব্যবহার করার দরকার পড়েনি বলেই বন দফতর সূত্রে খবর। জেলার সহকারি বন আধিকারিক সুজিতকুমার দাস বলেন, “ঝাড়খণ্ড থেকে বীরভূম হয়ে দলছুট হাতিটি আউশগ্রামের জঙ্গলে চলে আসে। হাতি তাড়াতে ‘ঐরাবত’ নামে একটি বিশেষ যান নিয়ে আসা হয়। কিন্তু গ্রামবাসীরা উত্ত্যক্ত করছে না বলে হাতিটিও তেমন ক্ষতি করছে না। ওই যানটি ব্যবহারের দরকার পড়েনি। যানটি পানাগড় বিট অফিসে রেখে দেওয়া হয়েছে।’’

গত চার দিন গ্রামবাসীরা বনকর্মীদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন বলে জানান আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, ভাল্কি, প্রতাপপুর, রামচন্দ্রপুর, গোপীনাথপুর, অশোকনগর-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে ঢুকে পড়লেও হাতিটিকে বেরনোর রাস্তা করে দিয়েছেন গ্রামবাসীরাই। বন দফতরের আউশগ্রাম বিট অফিসার অমিয়বিকাশ পালের বক্তব্য, ‘‘বাসিন্দারা হাতিটির গতিবিধির খবর দিচ্ছেন এবং হুলাপার্টিকেও সাহায্য করছেন।”

তবে সাধারণ মানুষের এমন ভোলবদল কেন? মাত্র কয়েক মাস আগেই দাঁতালের তাণ্ডবে বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকায় প্রাণ যায় ৪ জন গ্রামবাসীর। সেই সময়েও বাজি ফাটিয়ে, চিৎকার করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন গ্রামবাসীরা। তাতে অবশ্য হিতে বিপরীত হয়। বুধবার সন্ধ্যা টুডু, ইসমাইল চৌধুরীদের বক্তব্য, ‘‘আগে ভয় পেয়ে হাতি তাড়াতে ইট-পাটকেল ছুড়তাম বা লাঠি নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে তাড়া করতাম। এতে হাতি ভয় পেয়ে আরও বেশি ক্ষতি করত। এই অভিজ্ঞতা থেকেই শিক্ষা নিয়েছি।’’

গ্রামবাসীদের এমন আচরণের সুফলও মিলছে বলে ধারণা বন-কর্তাদের। বন দফতর জানায়, আউশগ্রামের জঙ্গল বেশ ঘন হওয়ায় খাবারের অভাব না থাকায় হাতিটি তেমন বাইরে আসেনি। তা ছাড়া উৎপাতও তেমন নেই। এই পরিস্থিতিতে সুজিতবাবুর আশা, ‘‘হাতিটি ঝাড়খণ্ডের দিকে যাচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, দিন কয়েকের মধ্যে নিজের এলাকায় ফিরে যাবে হাতিটি।” তিনি জানান, বন দফতরও কোনও রকম তাড়াহুড়ো না করে হাতিটির গতিবিধির উপরে নজর রাখছেন।

গ্রামবাসীদের ভূমিকায় খুশি প্রশাসনের কর্তারাও। আউশগ্রাম ২ বিডিও দীপ্তিময় দাস বলেন, “গ্রামবাসীরা হাতিটিকে কোনও রকম ভাবে বিরক্ত করছে না— এই সচেতনতা সকলের মধ্যে তৈরি হওয়া খুব দরকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Forest department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE