Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নিত্য অভাবেও হার মানেনি জেদ

জেলায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে সে। শুক্রবার তার বাড়ি যান বর্ধমানের জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু। জানতে পারেন, একা গুরুপ্রসাদ নয়। তার মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বোন সান্ত্বনা মান্ডিও এ ভাবেই কষ্ট করে লেখাপড়া শিখছে।

পাশে: গুরুপদর বাড়িতে দেবুবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

পাশে: গুরুপদর বাড়িতে দেবুবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share: Save:

বাবা-মা খেতমজুর। ভাল বইপত্র তো দূরের কথা, তাঁরা কাজে না গেলে বাড়িতে হাঁড়ি চড়ে না। খড়ের চাল দেওয়া একটিমাত্র ঘরে আরও দুই ভাইবোন মিলে মোট পাঁচ জনের বাস। কিন্তু তার মধ্যেও উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৪.৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলকে অবাক করে দিয়েছে বর্ধমান ১ ব্লকের কুরমুন পঞ্চায়েতের ছোটবেলুন গ্রামের আদিবাসী পরিবারের ছেলে গুরুপ্রসাদ মান্ডি।

জেলায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে সে। শুক্রবার তার বাড়ি যান বর্ধমানের জেলা সভাধিপতি দেবু টুডু। জানতে পারেন, একা গুরুপ্রসাদ নয়। তার মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বোন সান্ত্বনা মান্ডিও এ ভাবেই কষ্ট করে লেখাপড়া শিখছে। এ দিন দু’জনেরই পড়াশোনার দায়িত্ব নেন তিনি।

প্রতিবেশীদের কাছে জানা গিয়েছে, পড়াশোনায় বরাবরই মনযোগী গুরুপ্রসাদ। মাধ্যমিকে সে পেয়েছিল ৮৭ শতাংশ। ভাল ফল জেদ আরও বাড়িয়ে দেয়। এ বার এলাকার কুরমুন উচ্চবিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক দেয় সে। ফল প্রকাশে দেখা যায় স্কুলে সেরা নম্বর পেয়েছে সে। বাংলায় ৯২, ইংরাজিতে ৯০, ভূগোলে ৯৬, পুষ্টিবিজ্ঞানে ৯৮ ও দর্শনে মিলেছে ৯৮ নম্বর। গুরুপ্রসাদের মা তুলসী মান্ডি জানান, তাদের ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছে। এমনিই তিন ছেলে-মেয়েকে পড়াতে কষ্ট হচ্ছে, তার পরে গুরুপ্রসাদের পরবর্তী পড়ার খরচ কী ভাবে জোগাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। মেধাবী ছাত্রটি জানায়, ইংরাজিতে অনার্স নিয়ে পড়তে চায় সে।

মান্ডি পরিবারকে অবশ্য আশ্বস্ত করেন জেলা সভাধিপতি। জানিয়ে দেন, গুরুপ্রসাদ ও সান্ত্বনার পড়াশুনার সমস্ত খরচ বহন করবেন তিনি নিজেই। এ দিন তিনি দুই ভাই-বোনকে জামা ও জুতো কিনে দেন। দেবুবাবু বলেন, ‘‘গুরুপ্রসাদ অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছেলে। তার মধ্যেও ও যা নম্বর পেয়েছে তাতে আমরা অভিভূত। নিজে একজন আদিবাসী পরিবারের ছেলে হিসাবে ওর জন্য গর্ব হচ্ছে।’’

এ দিকে, পুরসার দিনমজুর পরিবারের মেয়ে শাহিদা খাতুন এ বার উচ্চমাধ্যমিকে ৪৪৮ নম্বর পেয়ে গলসি থানা এলাকায় দ্বিতীয় হয়েছে। পুরসা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল সে। ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হতে চাওয়া শাহিদার পরিবারের কাছেই জানা গেল, মেয়ের পড়ার উচ্ছে থাকলেও অভাবের সংসারে তাকে আর পড়ানো সম্ভব নয়। এই খবরে গলসি ১-এর বিডিও তারকনাথ দাস জানান, পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ জানালে পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে সরকারি অনুদান দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE