মন্তেশ্বরে বৃষ্টিতে জমা জল থেকে ধান বাঁচানোর চেষ্টা। নিজস্ব চিত্র
কালবৈশাখী ঝ়ড়ে বেশির ভাগ বোরো ধান জমিতে ঝরে পড়েছিল, যে টুকু ছিল বৃষ্টিতে ডুবল তাও।
সোমবার দফায় দফায় বৃষ্টিতে বেশির ভাগ নিচু জমিতে জল জমে গিয়েছে। উঁচু জমিতে জল না জমলেও কাদায় ঝরে পড়া পাকা ধান মিশে গিয়েছে বলে চাষিদের দাবি। প্রশাসনের হিসেবেও কালনা, কাটোয়ার একাধিক গ্রাম, কাঁকসা, গলসি, বুদবুদের বেশ কিছু অংশের ক্ষতি হয়েছে ধানে।
কালনা কৃষি দফতরের হিসাবে পাঁচ ব্লকে মোট ৩৬,০২৭ হেক্টর এলাকায় বোরো চাষ হয়। তার মধ্যে কালবৈশাখীতে ক্ষতি হয় ৩১,০৩১ হেক্টর জমিতে। চাষিদের দাবি, যতটা পারা যায় জমি থেকে ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। তার মাঝেই বৃষ্টিতে বিপর্যয় নেমে এল। মঙ্গলবার নান্দাই, মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রাম-সহ বহু এলাকাতেই দেখা গিয়েছে চাষিরা ভেজা ধান উঁচু জায়গায় তুলে আনার চেষ্টা করছেন। মন্তেশ্বরের চাষি রহিম শেখ, পূর্বস্থলীর পাটুলির চাষি খগেন ঘোষেরা জানান, জমা জলে পাকা ধানের অঙ্কুর বেরোতে শুরু করবে। ফলে সে ধান কাজে আসবে না। মহকুমা কৃষি দফতরের সহ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষও ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘ধান তুলে দ্রুত না শুকনো গেলে মুশকিল বাড়বে।’’ ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া।
কাটোয়াতেও ফড়ি ও ব্রহ্মাণী নদীর জল উপচে ভেসেছে আলমপুর, গাঁফুলিয়া, করুই, অর্জুনডিহির জমির ধান। আলমপুরের গনেশ পাল, গাঁফুলিয়ার বিকাশ ঘোষদের আক্ষেপ, তাঁরা কেউ ৩৫ বিঘে, কেউ ২০ বিঘে জমিতে ধান লাগিয়েছিলেন সবটাই ভেসে গেল। কৈচর থেকে গাঁফুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত সেচখালের জল উপচেও ভেসেছে বহু জমি। খাজুরডিহি ও করজগ্রাম পঞ্চায়েতে ৬ হেক্টর জমির পাট, কাটোয়া ১ ব্লকের কিছু তিলের জমিতেও গাছ উপড়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ব্লক কৃষি আধিকারিক আজমির মণ্ডল বলেন, ‘‘২৩ এপ্রিল ও রবিবারের বৃষ্টিতে ব্লকের মোট ৫,৭০০হেক্টর বোরো জমির ৫,৪৫৪ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’ ধান নষ্ট হয়েছে মঙ্গলকোটের নিগন, ঝিলু, গোতিষ্ঠাতেও। ব্লক কৃষি আধিকারিক উৎপল খেঁয়ারু জানান, ৪,৩৯১ হেক্টর জমির ধান পুরো নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়াও শনিবারের ঝড়ে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের মাসুন্দি পশ্চিম মাঠে বাজ পড়ে কিছু জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কাটোয়া মহকুমা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিক বামদেব সরখেল জানান, ৮০টি বাড়ি সম্পূর্ন ভেঙেছে। আংশিক ভাবে ভেঙেছে ৫৫০টি।
গলসির পুরন্দরগড়ে এ দিন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে যান বিধায়ক অলোক মাঝি ও কৃষি দফতরের একটি দল। চাষি সওকত আলি মণ্ডল, শেখ আব্দুল খালেক, ওমর আলি মণ্ডলেরা জানান, বেশির ভাগ ধানই ডুবে গিয়েছে। ক্ষতিপূরণেরও দাবি জানান তাঁরা। ব্লক কৃষি দফতরের আধিকারিক চিত্তানন্দ সিংহ মুডা জানান, প্রায় ৬,০০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হতে বসেছে। মাঠে কেটে রাখা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জলে। পারাজ, রামগোপালপুর, উচ্চগ্রাম, মানকরেও চাষিদের দশা একই। মানকরের মাড়ো গ্রামের সাধন রুইদাস, তাপস রুইদাসরা বলেন, ‘‘চাষের উপর নির্ভর করেই সংসার চলে। এ বছর আর ধান গরে তুলতে পারব বলে মনে হচ্ছে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy