এ ধরনের আবাসনগুলি নিয়েই প্রশ্ন।—নিজস্ব চিত্র
একের পরে এক অপরাধমূলক কাজকর্ম। অভিযুক্তদের প্রায় সকলের মধ্যে একটা মিল রয়েছে, তাঁরা ইসিএলের পরিত্যক্ত খনিকর্মী আবাসনগুলির জবরদখলকারী। সিপিএম-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া, পাণ্ডবেশ্বর-সহ নানা এলাকার পরিত্যক্ত আবাসনগুলিতে এই ধরনের লোক জনের আনাগোনার কারণে গোটা শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিপদের মুখে। আরও অভিযোগ, পুলিশ ও ইসিএলের মধ্যে টানাপড়েনের কারণেই এই হাল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মে অভিযুক্তদের অনেকেই এই ধরনের আবাসনগুলিতে এসে আশ্রয় নেন। যেমন, ২০০৩ সালে পাণ্ডবেশ্বেরর কেন্দ্রা গ্রামে খুন হন নকশাল নেতা গণেশ পাল। ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ঝগড়ু সিংহ কেন্দ্রা ছাতাধাওড়ায় পরিত্যক্ত কর্মী আবাসনে বাস করেন। ২০০৬-এ অন্ডালের পরাশকোলে এক চায়ের দোকানদারের গুলিবিদ্ধ হয়ে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তও পরাশকোলডাঙালে দখল করা কর্মী আবাসনেই থাকেন। ২০০৮-এ কুলটির সোদপুর এরিয়ার এ রকমই একটি পরিত্যক্ত আবাসন থেকে অপহরণ-সহ নানা ঘটনায় অভিযুক্ত ঝাড়খণ্ডের বিষ্ণু মণ্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্রও। আরও আগে, বেতনের টাকা বোঝাই ভ্যান লুঠের ঘটনায় অভিযুক্ত লাল্টু ধীবর নামে এক জনকে মাধবপুর ১১ নম্বর কোলিয়ারি এলাকার একটি খনি কর্মী আবাসনে থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া মাস তিনেক আগেই অন্ডালের মাধবপুরে এমন একটি আবাসনে স্ত্রী ও মেয়েকে খুনের অভিযোগ ওঠে গৃহশিক্ষক তপন রুইদাসের বিরুদ্ধে। এই সমস্ত ঘটনার পরে এলাকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা।
এখানেই শেষ নয়। পরিত্যক্ত আবাসনগুলিতে বেআইনি নানা কাজকর্মও চলছে বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক এলাকার বাসিন্দারা জানান, অন্ডালের মাধাইপুরে কর্মী আবাসনে বেআইনি মদের দোকান চলছে। অভিযোগ, ইসিএল-এর ১৩টি এরিয়ার বহু আবাসনেও এ ভাবে মদের দোকান চলে।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তের অভিযোগ, ‘‘খনির সঙ্গে যাঁদের কোনও দিন যোগ ছিল না, এমন বহু লোক জন ওই আবাসনগুলিতে থাকছেন। এমন অনেকও রয়েছেন, যাঁদের সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোনও নথি নেই। তাঁদের অনেকেই অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত।’’
জবরদখলকারীদের উচ্ছেদের বিষয়টি মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। ২০০৯ সালে হওয়া ওই মামলার আইন ওই মামলায় দাবি করা হয়, ইসিএলের অর্ধেকের বেশি কর্মী আবাসন বেদখল করে বাস করছেন বহিরাগতরা। অভিযোগ ওঠে, তাঁদের উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এর জেরে বিদ্যুৎ ও জল সরবরাহ করতে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আইনজীবীরা জানান, আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে ইসিএল বারবার জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের দখলে থাকায় আবাসনগুলি থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানো যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ইসিএল সূত্রেই জানা যায়, প্রায় চল্লিশ হাজারের বেশি কর্মী আবাসন বেদখল
হয়ে গিয়েছে।
সিটু নেতা মলয় বসুরায় ও আইএনটিইউসি নেতা তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়দের দাবি, ‘‘ইসিএল যদি উচ্ছেদ করতে না পারে, তবে আবাসনগুলি রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেওয়া উচিত।’’
যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসিএলের এক কর্তার দাবি, আদালতের নির্দেশের পরে উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশি সহযোগিতা মেলেনি। যদিও আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) জে মার্সি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সাহায্য চাওয়া হলে পাশে দাঁড়ানো হয়।’’
এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীরা জানান, কলকাতা হাইকোর্ট কাল, শুক্রবার ইসিএলের সিএমডি-কে হলফনামা দাখিল করে উচ্ছেদ অভিযান কেন সম্ভব হচ্ছে না, কী কী অসুবিধা হচ্ছে, তা বিস্তারিত জানাতে নির্দেশ দিয়েছে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের বক্তব্য, ‘‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy