স্থানীয় ব্লক স্বাস্থকেন্দ্রে চোখের ছানি পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন মেমারির শাহাজাদ হোসেন। শিবিরে অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা তাঁর বাড়ি গিয়ে জানিয়ে দেন, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার (আরএসবিওয়াই) মাধ্যমে ছানি অস্ত্রপোচার করে দেওয়ার হবে। কোনও টাকা দিতে হবে না।
মাধবিডিহির বাজেকুমারপুর গ্রামের বৃদ্ধা মীনা বেগমকেও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে আরএসবিওয়াইয়ের মাধ্যমে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ছানি অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সরাসরি কোনও টাকা দিতে না হলেও, আরএসবিওয়াইয়ের কার্ড থেকে প্রায় ৮০০০ টাকা বেরিয়ে গিয়েছে তাঁর।
আপাত ভাবে ঘরে এসে অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করে দেওয়া, বিমার টাকায় কাজ হয়ে যাওয়া সুবিধাজনক মনে হলেও জাতীয় অন্ধত্ব দূরীকরণ প্রকল্পে আসলে ছানির অস্ত্রোপচার নিখরচায় হওয়ার কথা। কিন্তু একশ্রেণির দালালেরা রোগীদের পুরোটা না জানিয়ে বিমার খরচ থেকে ওই অস্ত্রোপচার করাচ্ছেন। এতে পরবর্তীতে আরও বড় অস্ত্রোপচারে হলে সুবিধে কম পাচ্ছেন রোগীরা। এ বার এই চক্রকেই ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের কর্তাদের ধারণা, দালালদের ধরতে পারলে আরএসবিওয়াইয়ের মাধ্যমে ছানির অস্ত্রোপচারে রাশ টানা যাবে। তাঁরা জানান, জাতীয় অন্ধত্ব দূরীকরণ প্রকল্পে বিনামূল্যে ছানি অস্ত্রোপচার তো হবেই, সঙ্গে রোগীর যাতায়াত, ওষুধ, চশমা, এমনকী লেন্সের ব্যবস্থাও করে দেবে স্বাস্থ্য দফতর।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি সিএমওএইচ সুনেত্রা মজুমদার বলেন, ‘‘সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। তা না হলে শিবিরে ছানি অস্ত্রোপচার নির্ণয় করার পর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জানতে পারে?’’ তাঁর দাবি, ‘‘আরএসবিওয়াইয়ের মাধ্যমে ছানি অস্ত্রোপচার আটকাতে প্রতি ব্লক থেকে মাসে ২০ জন রোগীর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ বা মহকুমা হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে।’’ ঠিক হয়েছে, সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট দিনে হাসপাতালেও অপারেশন থিয়েটারে ছানি অস্ত্রোপচার করা হবে।
এই কাজে মাঠে নামানো হয়েছে আশা কর্মীদের। প্রতি রোগী পিছু আড়াইশো টাকা করে পাবেন তাঁরা। কর্তারা মনে করছেন, আশা কর্মীরা উদ্যোগী হলেই দালালরা মাঠ ছেড়ে পালাবে। আরএসবিওয়াইয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাও আর গ্রামে ঢুকে রোগীদের ভুল বোঝাতে পারবে না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়ের দাবি, “রাজ্যের মধ্যে আমরাই প্রথম এই উদ্যোগ নিয়েছি।”
কিন্তু উদ্যোগের গোড়াতে হোঁচটও আছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেই জানা যায়, গত অগস্টে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের ওটিতে আগুন লাগে। সেই ওটি সংস্কারের কাজ চলায় চোখের অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে। কালনাতেও চোখের চিকিৎসক অনিয়মিত। প্রতি মাসে লক্ষ্যমাত্রা যেখানে ৬৫, সেখানে গত ৬ মাসে ১৩ থেকে ১৭টি অস্ত্রোপচার হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। প্রণবববাবুর যদিও আশ্বাস, ‘‘আমরা সবরকম চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy