Advertisement
০৪ মে ২০২৪

অন্তর্ঘাতেই কি হার? প্রশ্ন তৃণমূলে

এলাকার রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলে অন্তর্ঘাত যে হতে চলেছে, ভোটের আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

সৌমেন দত্ত
গলসি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৯ ০১:০৩
Share: Save:

দুপুর গড়িয়ে সবে বিকেল হয়েছে। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে তৃণমূল-বিজেপির ফল ওঠানামা করছে। চেয়ারে টানা বসে রয়েছেন তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তিনি আচমকা বলে উঠলেন, “গলসিতে হেরে যাব, ভাবতেই পারছি না!” পাশেই বসে থাকা গলসির বিধায়ক অলোক মাঝিও চুপ!— এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল সাধনপুরে এমবিসি পলিটেকনিক কলেজের গণনা কেন্দ্রে।

গত বিধানসভা নির্বাচনে ‘বাম অধ্যুষিত’ গলসিতে তৃণমূল জিতেছিল। উড়েছিল সবুজ আবির। কিন্তু গলসির বাতাসে সবুজ আবির বেশি দিন উড়ল না। তিন বছরের মাথায় লোকসভা ভোটে এই এলাকা থেকে তৃণমূলের থেকে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া ৯,৬২১ ভোটে এগিয়ে থাকলেন।

বিজেপির এই ‘জয়’-এর নেপথ্যে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ হাত দেখছেন জয়ী, পরাজিত, উভয়পক্ষই। যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়া থেকে শুরু করে মাঝেসাঝেই বোমাবাজিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল গলসি। বিজেপির স্থানীয় নেতা উত্তম দত্ত বলেন, “মানুষ শান্তি চান। সেখানে গলসি বারবার উত্তপ্ত হয়েছে। এর বিরুদ্ধেই ভোট হয়েছে। তেমনই, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে না পারার জ্বালাটাও সুদে-আসলে তুলে নিয়েছেন মানুষ।’’

তৃণমূলের একটি অংশও মনে করছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যে দলের ভিতর ‘অন্তর্ঘাত’ হয়েছে। তবে দলের সবাই সরাসরি বিজেপিকে ভোট দেয়নি। কিছু ভোট বিজেপি পেলেও বেশির ভাগ ভোট কংগ্রেস ও সিপিএমে চলে গিয়েছে। আর সিপিএমের ভোট চলে গিয়েছে বিজেপিতে। তৃণমূলের দাবি, দুর্গাপুর লাগোয়া কাঁকসা ব্লকের চারটি পঞ্চায়েত থেকেই মমতাজ সংঘমিতা ১৩,৫৮০ ভোটে হেরে গিয়েছেন। তার পরে বাকি এলাকা থেকে আর বেশি ‘লিড’ মেলেনি। তৃণমূলের বিধায়ক অলোক মাঝি বলেন, “দুর্গাপুরের ফলের প্রভাব পড়েছে। তা না-হলে নেতাদের বুথে আমরা হারি!”

এলাকার রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলে অন্তর্ঘাত যে হতে চলেছে, ভোটের আগে থেকেই বোঝা গিয়েছিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে রামপুর, শিরোরাই, পারাজ, ঘাগড়া-সহ বেশ কয়েকটি এলাকা বারবার উত্তপ্ত হয়েছে গত এক বছরে। কখনও তৃণমূলের ব্লক সভাপতির সঙ্গে যুব সভাপতির গোলমাল, আবার কখনও ব্লক সভাপতির সঙ্গে কার্যকরী সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ্বের জন্য বোমাবজি-গুলির লড়াই চলেছে। লোকসভা ভোটে যুব তৃণমূলকে সে ভাবে মাঠেও দেখা যায়নি। বরং ভোটের পরে হাওয়ায় ভাসছে, যুব তৃণমূলের এক নেতা দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছে।

সে জন্যে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, প্রতিপক্ষের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রকোপ যে সব এলাকায় বেশি সেখানে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান কমেছে, অথবা বিজেপি ভাল ব্যবধানে জিতেছে। বিজেপির কার্যকরী সভাপতি ওমর ফারুকের দাবি, “বিধায়ক ও ব্লক সভাপতি জোট বেঁধে মানুষকে অত্যাচার করেছেন। পঞ্চায়েতে নিজেদের দলের প্রার্থীদেরও ব্লক দফতরে মনোনয়ন জমা দিতে দেননি ওঁরা। মনোনয়ন জমা দিতে গেলে মার খেতে হয়েছে। এ সবের প্রভাব পড়বে না? আসলে মানুষ ওই জুটিকে পছন্দ করছেন না।’’ এ সব শুনে বিধায়ক বলেন, “অন্তর্ঘাত যে হয়েছে, তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE