স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে চরে বেড়ায় শুয়োর। বননবগ্রামে। নিজস্ব চিত্র
গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেলায় নানা স্তরের চিকিৎসা কেন্দ্রের সংখ্যা ৯৬টি। সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবার জন্য সেখানে প্রয়োজন মোট ২৩৬ জন চিকিৎসকের। সেখানে রয়েছেন শ’দেড়েক ডাক্তার। ফলে, জেলা জুড়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে নাজেহাল স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, জোড়া-তাপ্পি দিয়ে কাজ চালাতে গিয়ে মাঝে-মধ্যেই চিকিৎসা গাফিলতির অভিযোগ উঠছে। তার জেরে অবরোধ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিক্ষোভ-ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটছে। রবিবার আউশগ্রামে বননবগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসায় গাফিলতির জেরে এক কিশোরের মৃত্যুর অভিযোগে এই ধরনের ঘটনা ঘটে। নানা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক-নার্সদের আরও দাবি, বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই, পরিকাঠামোও বেহাল। সেখানে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জেলায় ৫টি গ্রামীণ হাসপাতাল, ১৯টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ৭২টি প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসকের সংখ্যা না বাড়লে এ ধরনের ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়বেই। এর আগেও বননবগ্রামে চিকিৎসক না থাকায় গুসকরা-মোরবাঁধ রোড ঘণ্টা ছয়েক অবরোধ হয়েছিল। পরে জেলা থেকে দু’জন চিকিৎসককে পাঠিয়ে পরিস্থতি স্বাভাবিক করা হয়। গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরপর দু’বার চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগে ভাঙচুর, চিকিৎসককে মারধরের মতো ঘটনাও ঘটেছে। কাটোয়া-কালনা মহকুমার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও একই চিত্র। এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘বাড়ির পাশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েও চিকিৎসা মেলে না। ফলে এক-এক জায়গায় এক দিন করে ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র (বিপিএইচসি) বা গ্রামীণ হাসপাতালে ছ’জন করে চিকিৎসক থাকার নিয়ম। কিন্তু দু’তিন জনের বেশি চিকিৎসক নেই। আবার কাটোয়া ১ ব্লকের শ্রীখণ্ড, কাটোয়া ২ ব্লকের নওয়াপাড়া বা কালনা ১ ব্লকের বাদলা বিপিএইচসি-তে এক জন করে ডাক্তার আছেন। ওই সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করতে হয় বিএমওএইচদেরই। আবার জেলার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে কোনও স্থায়ী চিকিৎসকই নেই।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মূলত বহির্বিভাগ চলে। সেখানেও চিকিৎসক দিতে নাজেহাল অবস্থা। ব্লক বা অন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চিকিৎসক পাঠাতে হয়।’’ আর সে কারণে জেলার বেশিরভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সপ্তাহে দু’তিন দিনের বেশি বহির্বিভাগ চালু থাকে না। জেলায় ১০টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শয্যা চালু হলেও চিকিৎসক অপ্রতুল।
শুধু চিকিৎসক নয়, বেহাল পরিকাঠামোর জন্যেও অনেক স্বাস্থ্যকেন্দ্র অসামাজিক কাজকর্মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ। জেলার বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সীমানা পাঁচিল নেই। ফলে, গরু-ছাগল-শুয়োর-কুকুর অবাধে ঘুরে বেড়ায়। খণ্ডঘোষ-শ্রীখণ্ড-ভাতারের মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালের অবস্থা বেহাল। ছাদের চার দিকে ফাটল, আগাছা থাকায় বৃষ্টি পড়লেই জল পড়ে। স্যাঁতসেঁতে ঘরে রোগীদের থাকতে অসুবিধে হয়। ওষুধ বা ভ্যাকসিন রাখা যায় না। প্রণববাবু বলেন, ‘‘বেশ কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র সংস্কার শুরু হয়েছে। আরও কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা-রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy