Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভাসছে বহু রাস্তা, যোগাযোগে সঙ্কট

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির পরে ছুটির দিনেও আকাশের গোমড়া মুখ কাটল না। রবিবার সকাল থেকে জেলা জুড়ে বৃষ্টির দেখা তেমন না মিললেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমেনি। বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, সেতুতে জল জমে থাকায় যাতায়াতে সমস্যায় হয়।

বর্ধমান-কাটোয়া রোডে নরজার কাছে সেতুতে ফাটল, শনিবার থেকে বন্ধ যান চলাচল। তবু ঝুঁকি নিয়ে সেতুর নীচ দিয়ে চলছে যাতায়াত।

বর্ধমান-কাটোয়া রোডে নরজার কাছে সেতুতে ফাটল, শনিবার থেকে বন্ধ যান চলাচল। তবু ঝুঁকি নিয়ে সেতুর নীচ দিয়ে চলছে যাতায়াত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:৩৭
Share: Save:

টানা কয়েকদিন বৃষ্টির পরে ছুটির দিনেও আকাশের গোমড়া মুখ কাটল না।

রবিবার সকাল থেকে জেলা জুড়ে বৃষ্টির দেখা তেমন না মিললেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমেনি। বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, সেতুতে জল জমে থাকায় যাতায়াতে সমস্যায় হয়। বাস চলাচলও বন্ধ ছিল বেশ কিছু রুটে। তবে ট্রেন যোগাযোগ মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল বলেই জানা গিয়েছে।

শনিবার থেকেই জলে অবরুদ্ধ বর্ধমান শহরের রেলপাড়, বাজেপ্রতাপপুর, লক্ষ্মীপুর মাঠ, ভাতছালা প্রভৃতি এলাকা। লক্ষ্মীপুর মাঠ এলাকায় বেশ কিছু মাটির বাড়িও ভেঙে পড়েছে টানা বৃষ্টিতে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থা ভাল না থাকায় প্রতি বর্ষাতেই মুশকিলে পড়েন তাঁরা। আর এ বার ঘর ভেঙে যাওয়ায় বিপদ বেড়েছে আরও। যদিও স্থানীয় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সেমিল খানের আশ্বাস, ‘‘আমরা মহকুমাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই সমস্ত বাসিন্দাদের বাড়ি মেরামতি বা প্রয়োজনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব।’’ বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল খোকন দাসও বলেন, ‘‘বর্ধমান শহরের মূল অংশটি জলে ডোবেনি। কিন্তু আশপাশের কিছু এলাকায় জল জমে রয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হবে।’’ আউশগ্রামের দুই ব্লক, ভাতারের বড় অংশও জলে ডুবে রয়েছে। আউশগ্রাম ১ ব্লকের এক বাসিন্দা পার্থ হাজরার দাবি, নিউটাউন, শান্তিপুর প্রভৃতি এলাকা শনিবার থেকেই জলমগ্ন। বাজার, রেলগেট চত্বরও জলে থইথই বলে তাঁর দাবি।

পরিস্থিতি ভয়াবহ কাটোয়া মহকুমার অধিকাংশ এলাকাতেও। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে কাটোয়া ও কেতুগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলমগ্ন রয়েছে। যদিও প্রশাসনের আশ্বাস, দিন দু’য়েকের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। রবিবারও শহর ঘুরে দেখা গিয়েছে, কাটোয়া শহরের ৭টি ওয়ার্ডে জল জমে রয়েছে। কলেজের পিছনে বিভিন্ন পাড়ার বাসিন্দাদের অনেকেই বাড়ি ছেড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন। যেমন, ফরিদপুর কলোনির কিছু বাসিন্দা স্থানীয় মণ্ডলপাড়া প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। জল জমে রয়েছে পাবনা কলোনিতেও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি নালা, রাস্তা, মাঠ সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়ায় চলাচলের রাস্তা বোঝা যাচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। বাসিন্দাদের আশঙ্কা, দ্রুত নিকাশির ব্যবস্থা না করা গেলে ক্ষতি আরও বাড়বে। কাটোয়া-মালডাঙা রোডেও জল জমে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা কেটে বাসিন্দারা নিকাশির ব্যবস্থা করছেন বলেও জানা গিয়েছে। তবে কাটোয়া-ব্যন্ডেল ট্রেন চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে। কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ জানিয়েছেন, কেতুগ্রামের উপর দিয়ে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বাদশাহী সড়কটি জলমগ্ন। ৫টি এলাকায় বহু পরিবার জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কেতুগ্রাম ২-এর ৭টি অঞ্চলেও বৃষ্টিতে যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্বাভাবিক হয়নি বাস চলাচলও। কাটোয়া-বর্ধমান রুটে দু’একটি বাস চললেও ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার জানান, বৃষ্টিতে বিপদের আশঙ্কায় কাটোয়ার সিঙ্গি এলাকার ভাটনা গ্রামের ৯০টি পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিল। রবিবার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় তাঁরা ঘরে ফিরেছেন।

টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে কালনা শহরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। রবিবার শহর ঘুরে দেখা গিয়েছে, বৈদ্যপুর মোড়, কামারশালা গলি, মেডিসিন কমপ্লেক্স, আমলাপুকুর, যোগীপাড়া-সহ বেশ কিছু এলাকার রাস্তা হাঁটুজলে ডোবা। ফলে মুশকিলে পড়েছেন শহর তো বটেই, বাইরের অনেক বাসিন্দাও। কারণ প্রতিদিনই চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজ, কলেজ, হাট, বাজার-সহ নানা প্রয়োজনে এ শহরে আসেন গ্রামগঞ্জের হাজারো মানুষ। এ দিন সকাল থেকেই তাঁদের হাঁটু জল ভেঙে পৌঁছতে হয় শহরের নানা এলাকায়। কালনা শহরের বাসিন্দা রিমি সরকারের অভিযোগ, বর্ষা এলে এ চিত্র দেখতেই অভ্যস্ত সাধারন মানুষ। বহু বার প্রশাসনের কাছে সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। যদিও কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগের দাবি, যে সমস্ত রাস্তাগুলিতে জল জমেছে সেখানার নিকাশি নালাগুলি পরিষ্কার করে দিয়েছে পুরসভা। ফলে রবিবার বিকেল থেকে শহরের জমা জল অনেকটাই কমে গিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে শহরের বাইরেও বেশ কিছু এলাকায় জল জমে রয়েছে। ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতমুখী রাস্তা হাঁটু জলে ডুবে থাকতে দেখা যায়। জল জমে রয়েছে পূর্বস্থলী ২ ব্লক অফিসেও।

গ্যালারির পাতায় জল-ছবি। ছবিগুলি তুলেছেন, উদিত সিংহ, অসিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও মধুমিতা মজুমদার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman rain transport road rail line
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE