Advertisement
০২ জুন ২০২৪
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ

আগুন লাগলে কী হবে, ভেবেই আতঙ্কে দমকল

কয়েক মাস আগেও রোগীর মাথার উপর ঝুলত বিদ্যুতের তার। হাঁ করে খোলা থাকত বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ড। শর্ট সার্কিট থেকে সব সময়েই আগুন লাগার ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে চলতে হতো রোগী থেকে ডাক্তার বা কর্মীদের।

কোথাও ডালা খোলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের।

কোথাও ডালা খোলা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

কয়েক মাস আগেও রোগীর মাথার উপর ঝুলত বিদ্যুতের তার। হাঁ করে খোলা থাকত বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ড। শর্ট সার্কিট থেকে সব সময়েই আগুন লাগার ঘটনার আতঙ্ক নিয়ে চলতে হতো রোগী থেকে ডাক্তার বা কর্মীদের।

গত অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরপর আগুন লাগার ঘটনায় ঠেকে শিখে মান্ধাতা আমলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পাল্টানোয় উদ্যোগী হয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনও বহির্বিভাগের উপরে মহিলা ওয়ার্ডে পরিস্থিতি বিশেষ বদলায়নি। তেমনই বার্ন ইউনিটে বহু পুরনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র দিব্যি রয়ে গিয়েছে। ওই দু’টি ওয়ার্ডে যে কোনও সময় আগুন লেগে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় ভুগছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। শনিবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে অগ্নিকাণ্ডের পরে সেই আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

গোটা হাসপাতালে বিভিন্ন ভবন ঘুরে হাতে গোনা কয়েকটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের হদিস মেলে। তার অনেক ক’টিতেই আবার মেয়াদের কোনও তারিখ নেই! হাসপাতালের নানা সূত্রেই জানা যায়, বড় ধরনের আগুন লাগলে তা নেভানোর কোনও পরিকাঠামোই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেই। দমকলের বর্ধমানের এক কর্তা আবার বলেন, “ছোট আগুন নেভানোরই কোনও পরিকাঠামো গড়ে তুলে উঠতে পারেনি এই হাসপাতাল। সেখানে বড় আকারে ধরলে কী হবে তা ভাবলে আমাদের মধ্যেই আতঙ্ক তৈরি হয়।” গত কয়েক মাসে পাঁচ বার আগুনের মুখোমুখি হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। প্রতি বারই শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লেগেছিল বলে দমকলের তরফে জানানো হয়েছে।

কোথাও খোলা বিদ্যুতের বোর্ড। শনিবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

এ দিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি জায়গায় বিদ্যুতের তার কোনও রকমে জুড়ে রয়েছে। মহিলা বিভাগে ঢোকার মুখে তার ঝুলছে। সেখানকার একটি ঘরে শীতাতপ যন্ত্র থেকে যে কোনও সময়েই বিপদ ঘটার শঙ্কা রয়েছে। একই অবস্থা বার্ন ইউনিটেও। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, “পুরনো আমলে তার থেকে শুরু করে গোটা বিদ্যুৎ ব্যবস্থাটাই পাল্টে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়াও সুইচ বোর্ডের গায়ে স্টিকার সাঁটিয়ে সচেতন করার চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। দশ বছরের পুরনো বেশির ভাগ এসি মেশিন পাল্টানো সম্ভব হয়েছে।” হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে পূর্ত দফতরের (বিদ্যুৎ) কর্মীরা বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা ঠিক আছে কি না দেখার জন্য দিনে দু’বার তদারকি করেন। সে জন্য হাসপাতাল থেকে ‘লগ-বুক’ করে দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিন অন্তর ‘লগ-বুক’ পরীক্ষাও করা হয়।

কিন্তু আগুন লাগলে কী হবে? দমকলের ওই কর্তার কথায়, ‘‘ভগবানই ভরসা। গোটা হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা প্রায় তিনশোর উপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র চলছে। শর্ট সার্কিট হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। কিন্তু তা রোধ করার কোনও ব্যবস্থা হাসপাতালে নেই।’’ বেশির ভাগ ওয়ার্ডে বাইরে বেরনোর বিকল্প রাস্তা পর্যন্ত নেই বলে তাঁর দাবি। দমকল বেশ কয়েক বছর আগে অগ্নি নির্বাপণের জন্য বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছিল। তার মধ্যে ছিল হাসপাতাল জুড়ে অগ্নি নির্বাপক বসানো, বিভিন্ন ‘ফায়ার অ্যালার্ম’ ও ‘স্মোক ডিটেক্টর’ বসানোর মতো ব্যবস্থার কথা। তিন কোটি টাকার প্রকল্পও জমা পড়েছিল সরকারের কাছে। কিন্তু সেই প্রকল্প অনুমোদন হচ্ছে না দেখে প্রতিটি ওয়ার্ডে জরুরি ভিত্তিতে যাতে জলের ব্যবস্থা করা যায়, সেই প্রকল্প জমা দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুপার উৎপল দাঁয়ের আশা, “প্রকল্পের দ্রুত অনুমোদন এসে যাবে।”

কত দ্রুত আসবে, সে নিয়ে ধন্দ থাকছেই। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের চিত্র স্মৃতিতে নিয়ে তত দিন আতঙ্কেই কাটাতে হবে রোগী, ডাক্তার, কর্মী— সকলকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Fire Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE