Advertisement
E-Paper

নজর এড়িয়ে চলছে বেআইনি গর্ভপাত

কু়ড়ি বছরের পুতুল ঘোষ মরে প্রমাণ করল জেলা জুড়ে চলছে বেআইনি গর্ভপাত ক্লিনিকের রমরমা। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে, অনেক ক্ষেত্রে মফস্‌সল বা গ্রামের প্রাণকেন্দ্রেও যে এ ধরণের ক্লিনিক চলছে তা সামনে এসে গেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:০০
জৌগ্রামের এই টিনের ঘরেই চলত গর্ভপাত।

জৌগ্রামের এই টিনের ঘরেই চলত গর্ভপাত।

কু়ড়ি বছরের পুতুল ঘোষ মরে প্রমাণ করল জেলা জুড়ে চলছে বেআইনি গর্ভপাত ক্লিনিকের রমরমা। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে, অনেক ক্ষেত্রে মফস্‌সল বা গ্রামের প্রাণকেন্দ্রেও যে এ ধরণের ক্লিনিক চলছে তা সামনে এসে গেল।

পুলিশ-প্রশাসনের যদিও দাবি, বেশির ভাগ সময়েই স্থানীয় লোকজনের মদতে এ ধরণের চিকিৎসাকেন্দ্র চলে। বারবার সচেতনতা শিবির, প্রসূতির স্বাস্থ্যের যত্ন নিয়ে রোগী পরিবাররে সচেতন করার পরেও পরিস্থিতি বদলায় না। বর্ধমানের সিএমওএইচ প্রণব রায় বেশ হতাশা সুরেই বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে গর্ভপাত কেন্দ্র রয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর আসে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা সাহায্য না করায় সব সময় সঠিক জায়গাতে পৌঁছনো যায় না।’’ পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারির সঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাটোয়ার আলমপুর গ্রামের বছর কুড়ির পুতুল ঘোষ দ্বিতীয় সন্তানের গর্ভপাত করানোর জন্য বাপেরবাড়ি জামালপুরের জামালতলায় এসেছিলেন। জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তায়ে জৌগ্রামের রেললাইনের ধারে গজিয়ে ওঠা একটি ক্লিনিকে গর্ভপাত করাতে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ১৪ জানুয়ারি দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। দু’সপ্তাহ ভর্তি থাকার পরে মারা যান পুতুল। তরুণীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গর্ভপাত করানোর সময় ওই বধূর কিডনি ও জরায়ু ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে গিয়েছিল। এরপরে মৃতার মা বেহুলা দাস স্থানীয় বিডিওর কাছে অভিযোগে জানান। বিডিও সুব্রত মল্লিক অভিযোগ পাওয়ার পরে বিএমওএইচ আনন্দমোহন গড়াইকে বিষয়টি জানান। তদন্ত করে দেখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। খোঁজখবর করে জানা যায়, জৌগ্রামের ওই ক্লিনিকের নাম ‘নিবেদিতা ক্লিনিক’। বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনের পাশে রেলের জায়গা দখল করে গত ৬-৮ বছর ওই ক্লিনিক চলছে বলেও জানা যায়। তদন্তে উঠে আসে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত ওই ক্লিনিক আসলে বেআইনি গর্ভপাত কেন্দ্র। চার দিক টিন দিয়ে ঘেরা, মাথায় অ্যাসবেস্টসের চালের দেড়শো বর্গফুটের ঘরেই দিব্যি এত বছর রমরমিয়ে ব্যবসা করেছে তারা। দেখা যায়, টিনের দেওয়ালের গায়ে বড় করে লেখা রয়েছে, ‘মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত ৩ মিনিটে বিনা অস্ত্রোপচারে মেয়েদের যাবতীয় গুপ্তরোগের চিকিৎসা সাফল্যের সঙ্গে করা হয়’।

সোমবার রাতেই পুলিশ ওই ক্লিনিকের কর্মী জৌগ্রামের কুলুপতির বাসিন্দা সুভাষিনী মিস্ত্রিকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে বিচারক ৪ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘জিজ্ঞাসাবাদ করে মূল মাথাকে খোঁজা হবে।’’ জানা গিয়েছে, ওই ক্লিনিকের পরিচালক নিজেকে নিবেদিতা বলেই পরিচয় দিতেন। তাঁর বাড়ি হুগলির গুড়াপ বলেও স্থানীয় কয়েকজনের দাবি।

প্রশ্ন উঠছে, যেখানে জেলা প্রশাসনের দাবি, ৯৯ শতাংশের বেশি প্রসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়, প্রতিটি গ্রামে প্রসূতিদের খুঁটিনাটি বিষয়ে নিয়মিত রিপোর্ট দিতে হয় আশাকর্মীদের, সেখানে বছরের পর বছর একটি ঝুপড়ি ঘরে কী ভাবে গর্ভপাত-ক্লিনিক চলছিল? তাহলে কী গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য দফতর বা প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই? বিএমওএইচ আনন্দমোহনবাবুর স্বীকারোক্তি, ‘‘ওই ক্লিনিকে বেআইনি ভাবে গর্ভপাত করানো হয় আমরা জানতামই না। ওই বধূর মৃত্যুর পর জানতে পারলাম।’’

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর যৌথ উদ্যোগে কেতুগ্রাম, পূর্বস্থলী, মঙ্গলকোট-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বেআইনি গর্ভপাত কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছিল। অভিযানে ভাটা পড়তেই কেন্দ্রগুলি ফের মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে, পুতুল মরে তা দেখিয়ে দিল। নিজস্ব চিত্র।

Illegal Abortion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy