Advertisement
E-Paper

মাঠে না নেমে  সোশ্যালে, উড়ছে কটাক্ষ

সোমবার আসানসোলে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির ফেসবুক পেজের উদ্বোধন করেছেন।

সুব্রত সীট

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৪
সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির ‘পেজ’।

সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির ‘পেজ’।

একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়। সদ্য সমাপ্ত দুর্গাপুর পুরভোটে একটিও আসন জিততে পারেনি দল। মাঠে নেমে আন্দোলন কেন হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের নিচুতলাতেই। এই যেখানে পরিস্থিতি, সেখানে পশ্চিম বর্ধমানের সিপিএম নেতৃত্বের উচ্ছ্বাস আপাতত জেলা কমিটির ফেসবুক পেজ নিয়ে!

সোমবার আসানসোলে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি দলের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির ফেসবুক পেজের উদ্বোধন করেছেন। জেলা নেতাদের দাবি, উদ্বোধন সংক্রান্ত পোস্টটি এক দিনেই প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দেখেছেন। এই ‘ভিউয়ারশিপ’ দেখে উচ্ছ্বসিত জেলার সিপিএম নেতারা। তাঁদের আশা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি তৈরি করা গেলে কাছে টানা যাবে যুব সম্প্রদায়কে। যদিও তৃণমূলের কটাক্ষ, সংগঠনের ফাঁক বোজাতে আপাতত সিপিএমের ভরসা হয়ে উদয় হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া! কিন্তু, আন্দোলনের বদলে স্রেফ ‘সোশ্যাল’ হয়ে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়ে সংশয়ে এলাকার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালেরা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হোক বা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশের তাবড় রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলি ভীষণ ভাবেই সক্রিয় গত কয়েক বছরে। ‘ভিউয়ারশিপ’, ‘পোস্ট’, ‘শেয়ার’-এর দৌড়ে সামিল হতে খানিকটা পরে হলেও নাম লেখায় সিপিএম-ও। ২০১৪ সালের মার্চে, লোকসভা ভোটের আগে সিপিএম নেতা বিমান বসু ফেসবুক ও টুইটারে দলের ‘পেজ’ শুরু করেন। তার পরে নানা জেলা তো বটেই, সংগঠনের স্থানীয় স্তরেও সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ খোলা শুরু হয়।

সেই পোস্ট।

চলতি এপ্রিলে সাবেক বর্ধমান ভাগ হয়ে গিয়েছে। তার তিন মাস পরে জুলাইয়ে সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটি তৈরি করা হয়। সোমবার জেলা কমিটির ফেসবুক পেজটিও চালু করা হল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন, এসএফআই-এর রাজ্য সম্মেলনও শেষ হয়েছে সোমবারই। তাই এই দিনটিকেই ‘ফেসবুক পেজে’র উদ্বোধন আসলে তরুণ প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। পেজ উদ্বোধনের ‘ভিডিও’ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পরে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত সেই পোস্ট ৩৯, ৫৭৭টি ভিউয়ারশিপ পেয়েছে। তা দেখে সিপিএমের এক নেতার আশা, ‘‘সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এই ‘ভিউয়ারশিপ’ নিঃসন্দেহে আমাদের উৎসাহ দেবে।’’

কেন এই পেজ?

দলের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘শুধু নির্বাচন নয়, কোনও রাজনৈতিক দলের সংগঠনেও তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা অপরিসীম। সেই তরুণদের কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায়সরকার বলছেন, ‘‘নতুন পেজটির মাধ্যমে যেমন আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা জানানো যাবে, তেমনই মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথাও বলা যাবে।’’

যদিও বিষয়টিকে পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘মাটি বা মানুষের সঙ্গে কোনও যোগ নেই সিপিএমের। তাই সোশ্যাল মিডিয়াই ওদের ভরসা।’’ দুর্গাপুরের একাধিক এলাকার বাসিন্দারাও মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত পুরসভা ভোটের কথা। ভোটের আগে নানা এলাকায় সিপিএম কর্মীরা শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, ভোটের দিন, সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হলেও মাঠে নামতে দেখা যায়নি সিপিএম নেতৃত্বকে।

সিপিএমের কিছু নেতা আবার একান্ত আলোচনায় বলছেন, ‘‘দলের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মী-সমর্থকেরা যদি নিজেদের অসন্তোষ ‘পোস্ট’ করার মাধ্যম হিসাবে জেলা কমিটির ফেসবুক পেজকেই বেছে নিতে শুরু করে, তা হলে কিন্তু অস্বস্তি বাড়বে আমাদেরই!’’ এবং এই নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দলের এক বহিষ্কৃত রাজ্যসভার সাংসদের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ কিন্তু প্রকাশ্যে এসেছিল সোশ্যাল মিডিয়ার পেজেই! যে অভিযোগ করেছিলেন দলেরই এক সক্রিয় কর্মী। অতএব, আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়!

—নিজস্ব চিত্র।

Pashchim Bardhaman Zilla committee Bardhaman Facebook ফেসবুক বর্ধমান
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy