Advertisement
E-Paper

পাঁচ নারীর জীবন যুদ্ধে জিতছে মানবতাই

পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফ আধিকারিক বিলাসি।

সুশান্ত বণিক

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০ ০০:৫১

বিলাসি মিঞ্জ, কবিতা সাউ, মীরা বাউড়ি, লক্ষ্মী পাল আর সঞ্চিতা সাহা...। ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবসে’র মুহূর্তে এই তালিকার পাঁচ চরিত্রের কর্মকাণ্ড, সামাজিক অবস্থান, সবই ভিন্ন। কিন্তু ওঁদের সবাইকে এক মালায় গেঁথেছে লড়াইয়ের এক বৃহত্তর পরিসর।

পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফ আধিকারিক বিলাসি। কর্মসূত্রেই তাঁর স্বপ্ন ছোঁওয়ার উড়ান। কী সেই স্বপ্ন? প্ল্যাটফর্মেই কাজের অবসরে এক ফাঁকে জানান, বছর সাতেক আগে রাঁচি স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্ল্যাটফর্মের এক অনাথ শিশুকে দেখে মনে হয়েছিল, তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু ট্রেন চলে আসায় তা তখন হয়ে ওঠেনি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে অন্তত ১৬ জন অনাথ শিশুকে বিভিন্ন স্টেশন থেকে তুলে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন ‘চাইল্ডলাইন’-এ। এ জন্য তাঁকে সম্মানিতও করেছে রেল। বিলাসি বলেন, ‘‘জানি, এটা আমার কাজ। কিন্তু কাজ আর স্বপ্ন, ইচ্ছাগুলি কখন যেন এক হয়ে যায় ওই খুদেদের মুখ দেখলে। চাই, ওরা বড় হোক।’’

নিয়ামতপুরের নিউ রোড এলাকায় লটারির টিকিট বিক্রি করেন কবিতা। বছর পাঁচেক আগে তাঁর জীবনে নেমে আসে দুর্যোগ। ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় স্বামী পিণ্টু সাউয়ের। তত দিনে এই দম্পতির ঘরে দুই মেয়ে মুন্নি ও টিঙ্কু। স্বামীর মৃত্যুর পরে শুরু হয় শ্বশুরবাড়ির গঞ্জনা, জানান কবিতা। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি। বলেন, ‘‘দিদি-জামাইবাবু পাশে দাঁড়ান। দোকানের আয় থেকে দুই মেয়েকে পড়াচ্ছি।’’

ওই সন্তানদের জন্যই তাঁদের লড়াই, জানান সালানপুরের এথোড়ার দিনমজুর মীরা বাউড়ি। তাঁর এক মেয়ে। ছ’মাস আগে মেয়েকে গ্রামের বাড়িতে নিকটাত্মীয়ের কাছে রেখে এসেছেন। মীরা বলেন, ‘‘মেয়ে লেখাপড়ায় খুব ভাল। এ বার মাধ্যমিক দিয়েছে। বড় হয়ে চাকরি পাবে। অভাবের কষ্ট ঘোচাবে ও। তত দিন আমাকে পরিশ্রম করতেই হবে।’’

বিলাসি, কবিতা, মীরার মতোই আসানসোল আদালত চত্বরের দোকানদার লক্ষ্মী পালের কাছে ‘নারী দিবস’ যেন বছরের ৩৬৫ দিনই। পাশাপাশি, ওঁদের সবার আর্জি, নারী নির্যাতন বন্ধ হোক। তার উপায়টাও চায়ের কাপ এগিয়ে দিতে দিতে বলেন লক্ষ্মী, ‘‘মহিলারা নিজের পায়ে দাঁড়ালে নির্যাতন অনেকটা কমতে পারে বলে মনে হয়।’’ মাত্র ১৫০ টাকা পুঁজির শুরু হওয়া চায়ের এই দোকান এখন আইনজীবীদের নিত্য প্রয়োজনীয় বহু কিছুরই ভরসা।

লক্ষ্মী যখন স্বনির্ভরতার কথা বলছিলেন, তখন সালানপুরের মেলেকোলা মাধ্যমিক শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান শিক্ষিকা সঞ্চিতা সাহা জোর দিচ্ছেন নারী-শিক্ষার উপরে। তাই, শিক্ষাকেন্দ্রের প্রতি দিনের কাজ হলে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামে, পাড়ায়-পাড়ায়, বাড়ি-বাড়িতে। ‘মেয়েদের পড়ান’, এটাই বার্তা সঞ্চিতার। পরপর কয়েক দিন কোনও ছাত্রী ক্লাসে না এলে সটান তার বাড়িতে চলে যান সঞ্চিতা।

আর নারী দিবসের মুহূর্তে তাঁদের সবার একটাই আহ্বান, জয় হোক মানবতার।

International Women's Day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy