Advertisement
০৫ মে ২০২৪

রাজনীতির বিবাদেই কি খুন খনিতে

রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন যুবক। আর ফেরেননি। পরের দিন দুপুরে পরিত্যক্ত খনি থেকে মেলে তাঁর দেহ। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর তৈরি হয় রানিগঞ্জে।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০৬
Share: Save:

রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন যুবক। আর ফেরেননি। পরের দিন দুপুরে পরিত্যক্ত খনি থেকে মেলে তাঁর দেহ। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোর তৈরি হয় রানিগঞ্জে।

রানিগঞ্জের পুরাতন এগারার মাধাই বাউরি নামে ওই যুবক তাঁদের দলের কর্মী ছিলেন বলে দাবি করেন তৃণমূল নেতারা। ভোটের আগে সিপিএমের লোকজন তাঁকে খুন করেছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। দফায়-দফায় মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। জামিনে ছাড়া পেয়েছেন অভিযুক্তেরা।

২০১৩ সালের ৪ জুন বাড়ির অদূরেই নারায়ণকুড়ির খোলামুখ খনিতে উদ্ধার হয় মাধাইবাবুর দেহ। পরিবার জানায়, তারা আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে খোঁজ করে কোনও হদিস পায়নি। পরের দিন দুপুর ১টা নাগাদ প্রতিবেশীরা খনিতে দেহ মেলার খবর দেন। বাড়ির লোকজন গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে দেহ শনাক্ত করেন।

মাধাইবাবুর স্ত্রী সুলেখাদেবী বলেন, ‘‘আমার স্বামী দিনমজুরি করতেন। কারও সঙ্গে কোনও শত্রুতা ছিল না।’’ এগারা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের অশোক হেলা অবশ্য নিহত যুবক তাঁদের সমর্থক ছিলেন জানিয়ে অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে খুন করা হয়েছে। তিনি পুলিশের কাছে স্থানীয় সিপিএম নেতা আজাদি প্রসাদ, হেমন্ত প্রভাকর-সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

অশোকবাবু দাবি করেন, ‘‘সিপিএমের শক্ত ঘাঁটিতে ধস ঠেকাতে এই ধরনের নৃশংস কাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। আমাদের কর্মীরা ওই সিপিএম নেতা-কর্মীদের মাধাইকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন। তাই আমি দলের তরফে ওঁদের নামে অভিযোগ দায়ের করি।’’ ওই পরিত্যক্ত খনি থেকে লাঠি, রড ও টাঙি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ চার্জশিটে জানিয়েছে, ওই সব অস্ত্র দিয়েই খুন করা হয়েছিল।

অভিযুক্তদের অবশ্য দাবি, রাজনৈতিক কারণে এই ঘটনায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের। সিপিএমের রানিগঞ্জ জোনাল সম্পাদক রুনু দত্ত পাল্টা অভিযোগ করেন, খুনের মামলায় অভিযুক্ত গণেশ গড়াই ও সাজন বাউরি নামে তাঁদের দুই কর্মীর বাড়িতে ওই ঘটনার রাতে চড়াও হয়েছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। তিনি পুলিশে খবর দেন। গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ ওই দুই সিপিএম কর্মীর বাড়িতে ছিল। তাঁরা পুলিশে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেন। রুনুবাবু বলেন, ‘‘পরের দিন দুপুরে জানতে পারি, পরিত্যক্ত খনিতে এক সাধারণ বাসিন্দার দেহ পাওয়া গিয়েছে। সেই ঘটনায় গণেশ, সাজন-সহ আমাদের ছ’জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এর থেকেই পরিষ্কার, যড়যন্ত্র করে মামলা সাজানো হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, এ নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দরকার ছিল। মামলায় অভিযুক্ত আজাদি প্রসাদদের বক্তব্য, “মিথ্যে অভিযোগ করে আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। আদালতে বিচার পাব, এই আশায় রয়েছি।”

অভিযোগকারীদের আইনজীবী অশোক ঘোষ জানান, তিন দফায় ৯ জন অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। মাস তিনেক করে জেলে কাটানোর পরে সকলেই জামিনে ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন। এখন আসানসোল আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। নিহতের স্ত্রী সুলেখাদেবী বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হলেও এখনও সাজা হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব বিচার শেষ হোক, এটাই চাই।’’

• ২০১৩ সালের ৩ জুন রাতে বাড়ি থেকে বেরোন মাধাই বাউরি। পর দিন পরিত্যক্ত খনিতে মেলে দেহ।

• নিহতকে দলের কর্মী দাবি করে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সিপিএমের ৯ জনের নামে অভিযোগ করেন।

• কয়েক দফায় গ্রেফতার করা হয় সব অভিযুক্তকেই।

• অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্ত। চলছে সাক্ষ্যগ্রহণ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murder Mine Political party
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE