লড়াইটা গ্রামীণ হাটের সঙ্গে। আরও বেশি করে দূরত্ব, বেহাল যোগাযোগের সঙ্গে।
এত দিন এই লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছিল কিসান মান্ডি। কোথাও তৈরি হলেও চালু হয়নি, কোথাও চালু হলেও যোগাযোগের অসুবিধেয় চাষিরা যাননি সেখানে। আবার কোথাও চালু হওয়ার আগে ভেঙে পড়েছে কিসান মান্ডির দেওয়াল। তবে এ বার এই পরিস্থিতিকে টক্কর দিতে, কিসান মান্ডিগুলিকে ঢেলে সাজার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার।
রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হবে। আবার কিসান মান্ডির মূল উদ্দেশ্য বজায় রাখতে হবে। তাই মান্ডিগুলিকে বড় বাজারে পরিণত করতে চাইছি, যাতে দূর থেকে আসা মানুষজনের কষ্ট না হয়। প্রতি ব্লকে বৈঠক করছি।’’
কিছুদিন আগেই কিসান মান্ডিতে পাইকারেরা না আসায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন জঙ্গলমহলের প্রায় দু’হাজার চাষি। তাঁদের দাবি ছিল, ওই বাজারে সব্জি না বেচলে আড়তদার ও চাষিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছিল। তাই স্টেশন থেকে চার কিলোমিটার দূরের মান্ডিতে রাস্তা খারাপ উপেক্ষা করেও গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু এক জন পাইকারও আসেননি। এরপরেই বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। মঙ্গলকোটের কিসান মান্ডিটিও বছর খানেক আগে তৈরি হয়। তবে চালু হয়নি। তার মধ্যেই কয়েকদিনের বৃষ্টিতে দেওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়ে ওই বাজারের। অনেক জায়গায় দোকানঘর নেওয়ার পরেও তা খুলতে অনীহা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। চাষিদেরও দাবি, বিক্রি না হওয়ার ভয়ে টাকা খরচ করে দূরের কিসান বাজারে উৎপাদিত সব্জি, ধান নিয়ে যেতে চান না অনেকেই।
এ বার তাই কিসান মান্ডিতে এক ছাদের তলায় বহু দোকানের সমাগম করতে চাইছে রাজ্য কৃষি বিপণন দফতর। সেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা অত্যাধুনিক সুবিধার কথা ভাবা হচ্ছে, আবার ফেলে রাখা দোকানগুলি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়ে ফের নিলাম করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, বিপণন দফতর বিভিন্ন বেসরকারি অ্যাগ্রি-মার্কেটিং সংস্থার সঙ্গে জোট বাঁধবে। যাঁরা কিসান মান্ডিতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কেই বাজার সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেবেন। কৃষকদের উৎপন্ন ফসল সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে পারলে, কী ধরণের লাভের মুখ দেখতে পাবেন—তাও ওই সংস্থা কৃষকদের জানাবেন। রাজ্য কৃষি বিপণন দফতরের এক কর্তা বলেন, “গ্রামীণ হাটে গিয়ে চাষিদের অঙ্ক কষে লাভের পরিমাণ বোঝাতে পারলে, তাঁরা হাট, রাস্তার ধার ছেড়ে কিসান মান্ডিতে উঠে আসবেন। আমাদের ঠিক মতো বোঝাতে হবে।’’ কৃষি বিপণন দফতরের কর্তাদের দাবি, রায়না ২, কালনা ১, হুগলির বলাগড়, পুটশুড়ি ব্লকে গ্রামীণ হাটকে মান্ডিতে তুলে আনাও হয়েছে।
এমনিতে, কিসান মান্ডি বা কৃষক বাজার তৈরির উদ্দেশ্য ছিল, ফোড়েদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করা। যাতে উভয়েই ন্যায্য দামে বিক্রি করতে ও কিনতে পারেন। সেই মতো রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকেই কিসান মান্ডি গড়ে ওঠার কথা। এখনও পর্যন্ত দু’টি পর্যায়ে ১৮৬টি কিসাণ মান্ডি তৈরি করতে গিয়ে সরকারের এক হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে ১২০টি কিসান মান্ডি নাম কে ওয়াস্তে চালু হয়েছে। সেখানেও দোকানঘর নিয়ে তা বন্ধ রেখেছেন বহু ব্যবসায়ী। বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “ছ’মাসের বেশি দোকান বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীর সঙ্গে সমস্ত রকম চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জমা রাখা টাকার ৩০ শতাংশ কেটে বাকি টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে। নতুন করে ঘর বিলির প্রক্রিয়াও শুরু হবে।”
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধুমাত্র কৃষিজাত পণ্য নয়, হোটেল, কাপড়ের দোকান, খাবারের দোকানের পাশাপাশি ব্যাঙ্ক, ডাকঘরের সুবিধাও মিলবে মান্ডিতে। এটিএম কাউন্টার রাখার জন্য সরকারের আধিকারিক ব্যাঙ্কের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাও বলছেন। এ ছাড়াও বেশ কিছু ব্লকে নিখরচায় ওয়াই ফাইয়ের সুবিধাও দেওয়া হবে।
প্রাক্তন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়ও বলেন, ‘‘কিসান মান্ডিগুলিকে কাজে লাগাতে গেলে ভোল বদলানো দরকার। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ নিয়ে একাধিকবার কথা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy