Advertisement
১১ ডিসেম্বর ২০২৩
Road Getting Damged

গাড়ির চাপে নিত্য ভাঙছে রাস্তা, ক্ষোভ

পূর্ত দফতরের দাবি, ওই রাস্তায় দামোদরের উপর কৃষক সেতু রয়েছে। দামোদরের সেচ খালের (ইডেন ক্যানেল) উপরেও সেতু রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৩
Share: Save:

দামোদরের উপরে কৃষক সেতু পেরিয়ে মোটরবাইকে বাঁকুড়া মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। রাস্তা জুড়ে অসংখ্য গর্তের কয়েকটি এড়াতে পারলেও একটায় ঢুকে যায় বাইকের সামনের চাকা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পলেমপুরের রাস্তায় ছিটকে পড়েন দম্পতি। পিছন থেকে আসা বাসের ধাক্কায় মুহূর্তে পিষে যান হুগলির বাসিন্দা শাকিলা বেগম। রবিবার দুপুরে বর্ধমান-আরামবাগ রাজ্য সড়কের ওই দুর্ঘটনাতেও টনক নড়েনি প্রশাসনের।

তেলিপুকুর মোড়ে জামালপুরের জামেদা গ্রামের বাগিলা কিস্কু ও তাঁর ছেলে অসীম কিস্কুও মোটরবাইক নিয়ে যাওয়ার পথে ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান সম্প্রতি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একে অত্যাধিক গাড়ির চাপ, নিত্য যানজট, তার সঙ্গে তেলিপুকুর থেকে বাঁকুড়া মোড় পর্যন্ত চলাচলের অযোগ্য রাস্তা— ত্র্যহস্পর্শে প্রাণ হাতে নিয়ে চলতে হচ্ছে সবাইকে।

বর্ধমান জেলা বাস সমিতির কর্তা তুষার ঘোষ বলেন, “প্রতিদিন দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে ওই রাস্তায়। রাস্তার অবস্থা এমন বাসের যন্ত্রাংশও ভাঙছে। আর একটু বৃষ্টি হলেই বাস আর ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারবে না। অনেক বলা হয়েছে, অনেক লেখা হয়েছে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।” ওই রাস্তা দিয়ে আরামবাগ ছাড়াও বাঁকুড়া, হলদিয়া, দীঘা, খড়্গপুরের মতো দূরপাল্লার বাস চলে। খণ্ডঘোষ, রায়না, মাধবডিহি জামালপুরের মতো স্থানীয় বাসও চলাচল (দক্ষিণ দামোদর এলাকা) করে। বাস চালকদের একাংশের দাবি, খারাপ রাস্তার জন্য পুজোর বাজার করতেও ছোটখাট ব্যবসায়ীরা বর্ধমান শহরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। বাসের ব্যবসাও মার খাচ্ছে।

পূর্ত দফতরের দাবি, ওই রাস্তায় দামোদরের উপর কৃষক সেতু রয়েছে। দামোদরের সেচ খালের (ইডেন ক্যানেল) উপরেও সেতু রয়েছে। প্রায় ৫০ বছর হতে চলা এই সেতুর প্রতিদিন ২৭-৩০ হাজার গাড়ির বহন করার ক্ষমতা নেই। মূল রাস্তারও বহনক্ষমতা অত না। সেই কারণেই রাস্তা সংস্কারের কিছু দিন পরেই ভাঙতে শুরু করছে। আর বৃষ্টি পড়লে অজস্র গর্ত তৈরি হচ্ছে। সেহেরাবাজারের শেখ ময়নার দাবি, “আমি প্রতিদিন মোটরবাইক নিয়ে বর্ধমান যাতায়াত করি। তেলিপুকুর থেকে বাদুলিয়া, সেহেরা, উচালন পর্যন্ত রাস্তা খারাপ।” উচালনের বাসিন্দা আহিরা বিবির দাবি, “বাসে করেই বর্ধমানে আসা সুবিধা। কিন্তু খারাপ রাস্তায় এত ঝাঁকুনি যে বাসে থাকা যায় না। কষ্ট হয়।”

মোটরবাইক চালকদের দাবি, গর্ত তো আছেই, তার উপর পাথর বেরিয়ে সেতুর লোহার শিকও বেরিয়ে গিয়েছে। ফুটবল মাঠের মতো ‘ডজ়’ করে বাইক চালাতে হয়। বিপদ যেন ওঁত পেতে দাঁড়িয়ে আছে। দীঘল গ্রামের মিতালি রুইদাস বলেন, “রাস্তার দু’ধার ভেঙে ছোট হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি পড়লে জল জমে। মোটরবাইক, টোটো উল্টে যায়।”

তেলিপুকুর থেকে বাঁকুড়া মোড় পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, রাস্তা খারাপের জন্য ক্রেতারা আসেন না। পলেমপুরের পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীদেরও দাবি, তাঁদের কাছ থেকে আনাজ কিনে বর্ধমানের প্রান্তিক বাজার, নীলপুরে অনেকে ব্যবসা করেন। ইডেন ক্যানেলে আনাজ নিয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা ঘটার পর থেকে অনেকেই তাঁরা আর পলেমপুরে আসতে চাইছেন না।

পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের দাবি, দু’টি সেতু-সহ রাস্তার প্রাথমিক সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অত্যাধিক বৃষ্টির জন্য কাজে অসুবিধা হচ্ছে। আর ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতিরও দরকার রয়েছে। এক কর্তার কথায়, “সম্ভবত মঙ্গলবারই যান নিয়ন্ত্রণের অনুমতি চলে আসবে। সে ক্ষেত্রে রাত থেকেই সেতুর এক ধার ধরে সংস্কারের কাজ হবে। আর বাঁকুড়া মোড় থেকে গর্ত বোজানোরও কাজ শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE