দক্ষিণখণ্ডে লক্ষ্মীপুজোর মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।
লক্ষ্মী পুজোর দিনটা এলেই কারও মনে পড়ে এলাকায় মঞ্চ বেঁধে যাত্রাপালার কথা। এখন সে সবের পাট চুকলেও ফের পুজোকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। কোথাও বা আবার টানা ছ’দিন ধরেই হচ্ছে অনুষ্ঠান। সর্বজনীন পুজোর পাশাপাশি বাড়ির পুজোর জাঁকও বড় কম নয়। আর এই পুজোগুলিতে যোগ দিতে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো।
১৯৮২ সালে রানিগঞ্জ শহরের সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো শুরু হয়। বিভূতিভূষণ সিংহ নামে এক ব্যক্তি জানান, ওই পুজো প্রথমে মহম্মদ আলি রোড লাগোয়া এলাকায় শুরু হয়। পরে পাকা মন্দির তৈরি হয়। এলাকার অন্যতম বারোয়ারি পুজোর আয়োজন করে বল্লভপুর হরিবোল সমিতি। পুজোর বয়স ৩৪ বছর। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, আগে এই পুজোর ব্যয়ভার বহন করত। পুজো কমিটির তরফে গৌতম বারিক জানান, ১৯৮২ সালে পেপার মিল বন্ধ হয়ে যায়। তারপরে তাঁরাই পুজো চালাচ্ছেন। মেলা উপলক্ষে দু’দিন ধরে মেলা বসে। পাশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মানুষজন মেলা দেখতে ভিড় জমান।
এলাকার পুরনো পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম রানিগঞ্জের সিংহ বাড়ির পুজো। ৭৩ বছরে পা দেওয়া এই পুজোয় এখনও বজায় রাখা হয় পুরনো রীতিনীতি। পরিবারের সদস্য সলিলকুমার সিংহ জানান, একেবারে শুরুর দিনগুলি থেকে আজ পর্যন্ত মা লক্ষ্মীর মূর্তি আনা হয় কুমোরটুলি থেকে। এমন রীতিনীতির ছোঁয়া রয়েছে সাহেববাঁধ পাড়ার সিংহ বাড়ির পুজোতেও। দু’দশক আগে পুজোর শুরু হয়। গৃহকর্তা সমর সিংহ জানান, পণ্ডিতের নিদান মেনে প্রথম থেকেই তিনি নিজে ভোগ রাঁধেন। অতিথি-ভোজনের পরে তিনি খেতে বসেন। এ ছাড়া সিহারশোলের চাষাপাড়ার মুকুটি পরিবারের কালী মন্দিরে লক্ষ্মী পুজোটিও এলাকাবাসীর অন্যতম আকর্ষণের জায়গা। ৯৫ বছরের এই পুজো উপলক্ষে স্থানীয় শিল্পীরা নাচ, গান, নাটক-সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেবী বন্দনা হয় অন্ডালের দক্ষিণখণ্ড গ্রাম পল্লিউন্নয়ন সমিতির পুজোতেও। সমিতির সদস্য উত্তম হাজরা জানান, আগে এই পুজো ছিল মুখোপাধ্যায় বাড়ির পারিবারিক ঐতিহ্য। পরে পরিবারের সদস্যরা গ্রামের ষোলআনা কমিটির হাতে পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন। পুজো উপলক্ষে ছ’দিন ধরে উৎসবের আয়োজন করা হয় এই এলাকায়।
বাড়ির পুজো সর্বজনীন পুজোর চেহারা নিয়েছে রানিগঞ্জের কুমারবাজারের যমজয়ী মন্দিরে একশো বছরের পুরনো পারিবারিক পুজোটির ক্ষেত্রেও। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, পুজো উপলক্ষে আগে এখানে যাত্রা-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। সেই সব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার জন্য ফের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান পুজো কমিটির সদস্য অরূপকুমার দাস।
শিল্পাঞ্চলের অন্যতম প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে রয়েছে আসানসোল গ্রামের বিবেকানন্দ সমিতির পুজোটিও। দুই শতাব্দী পুরো এই পুজো উপলক্ষে তিন দিনের উৎসবের আয়োজন করা হয় বলে জানান মৃদুল রায়। উৎসবের শেষ রাতে গ্রাম ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা পংক্তি ভোজে যোগ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy