সপ্তাহ দু’য়েকের মধ্যে বামুনাড়া শিল্পতালুকের তিনটি বেসরকারি অনুসারী ইস্পাত কারখানায় উৎপাদন বন্ধের নোটিস ঝোলানো হয়েছে। এর ফলে দুর্গাপুজোর আগে কাজ হারালেন প্রায় পাঁচশো ঠিকা শ্রমিক। নোটিসে তিন কারখানার কর্তৃপক্ষই দাবি করেছেন, উৎপাদনের খরচ ক্রমাগত বাড়লেও বাজারের চাহিদা কমেছে। ফলে দিন দিন তাঁদের লোকসান বাড়ছে। এই অবস্থায় উৎপাদন বন্ধ রাখা সিদ্ধান্ত না নিয়ে উপায় ছিল না।
এই শিল্পতালুকে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৮টি বেসরকারি অনুসারী ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে। আগেই দু’টি কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১২, ২২ ও ২৬ অগস্ট আরও তিনটি কারখানায় উৎপাদন বন্ধের নোটিস ঝোলানো হয়। তিনটি কারখানায় যথাক্রমে ১৩০, ১৫০ ও ১৪৫ জন ঠিকা শ্রমিক ছিলেন। উৎপাদন বন্ধের কারণ হিসাবে তিনটি কারখানাতেই উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও বাজারের চাহিদা না থাকার কথা উল্লেখ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য উৎপাদন বন্ধের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানার এক আধিকারিকের দাবি, এখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ডিপিএল। ডিভিসি-র তুলনায় ডিপিএলের বিদ্যুৎ মাসুল বেশি। ডিভিসি-র বিদ্যুৎ নিয়ে যাঁরা কারখানা চালাচ্ছেন, তাঁদের অনেক কম দাম দিতে হয়। ফলে তাঁদের উৎপাদন খরচ কম পড়ে। অথচ ডিপিএলের বিদ্যুৎ নেওয়ায় একই বাজারে উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রি করতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় তাঁদের পিছিয়ে পড়তে হয় বলে দাবি ওই আধিকারিকের। অন্য একটি কারখানার আধিকারিক অশোককুমার ধর বলেন, ‘‘উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু, বাজারের চাহিদা তলানিতে। পরিস্থিতি না বদলালে লোকসানের বোঝা বয়ে উৎপাদন চালু রাখা সম্ভব নয়।’’
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকদের ইতিমধ্যেই বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সামান্য দুই-এক জন স্থানীয় ঠিকা শ্রমিককে অল্প বেতন দিয়ে কারখানার দৈনন্দিন কাজকর্ম করার জন্য রাখার পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের। পুজোর মুখে এ ভাবে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়ে বিপাকে শ্রমিকেরা। রবিলোচন খান, রবিলাল ওঝারা বলেন, ‘‘পুজোর মুখে রোজগার বন্ধ হয়ে গেল। বোনাসও মিলবে না।’’ অনেক শ্রমিকদের ক্ষোভ, কাজ হারানোর সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যেমন পিএফ, ইএসআইয়ের সুবিধাও বন্ধ হয়ে গেল।
সিটুর জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্র কিশোর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঠিকা শ্রমিকদের যাবতীয় পাওনাগন্ডা না বুঝিয়ে দিয়ে এ ভাবে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া শ্রম আইন অনুযায়ী একেবারে বেআইনি। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারের তরফেই এ দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই।’’ বিষয়টি নিয়ে শ্রম দফতরের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। বামুনাড়া শিল্পতালুকের আইএনটিটিইউসি নেতা বাবলু চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মালিকপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলে কারখানায় উৎপাদন শুরু করার চেষ্টা চালাচ্ছি আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy