দোকান-বাজার বন্ধ। রাস্তাঘাটে মানুষজনের দেখা নেই। রবিবার আউশগ্রামের চিত্রটা ছিল এই রকমই।
থানায় ভাঙচুরের ঘটনার পরে শনিবার দুপুর থেকেই গ্রামে টহল শুরু করেছিল পুলিশ ও র্যাফ। সারা রাত তা চলে। রবিবার মোটরবাইকে চ়়ড়ে টহল দেয় পুলিশ। ছিল স্ট্র্যাকো বাহিনী এবং র্যাফও। আউশগ্রাম ছাড়াও আশপাশে বেশ কয়েকটি গ্রামে দফায়-দফায় টহল চলে।
ঘটনার পর থেকে আউশগ্রাম থানাতেই রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য। রবিবার থানার গেট বন্ধ ছিল। পুলিশকর্মী ছাড়া কাউকে বিনা অনুমতিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আগের দিনের ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা গিয়েছে এ দিনও। গোটা ছয়েক ভাঙা গাড়ি থানাতেই রয়েছে। পোড়া খড় পরিষ্কার করা হচ্ছে। পড়ে রয়েছে ভাঙা চেয়ার, টেবিল।
থানা থেকে কয়েক পা দূরেই আউশগ্রাম হাইস্কুল। হস্টেলের পড়ুয়ারা বাড়ি চলে গিয়েছে। স্কুলের সামনেই হাট বসে। তা-ও এ দিন বসেনি। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই আসেননি। আউশগ্রাম বাসস্টপ মোড়ে গুসকরা-ইলামবাজার রাস্তার উপরে রয়েছে ছোট-বড় শ’খানেক দোকান। এ দিন দু’একটি খুলেছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ী মলয় ঘোষের কথায়, ‘‘হাট বসেনি, দোকানপাটও খোলেনি। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে কে জানে!’’
হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া বাসও চলেনি। শিশু কোলে আউশগ্রাম বাসস্টপে দাঁড়িয়েছিলেন গুসকরার ইটাচাঁদা হাইস্কুলের এক শিক্ষিকা। প্রায় কেঁদে ফেলে তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চার শরীর খারাপ, ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার উপায় নেই। গ্রামে কেউ প্রায় নেই। কেন যে এমন হল!’’
রবিবার ছিল পোলিও খাওয়ানোর দিন। তাতেও ভিড় নেই বললেই চলে। আশা কর্মীরা বলেন, ‘‘গ্রামেই তো কেউ নেই।’’ সেই সুর শোনা যায় আউশগ্রাম, সোমাইপুর, শোকাডাঙা-সহ বিভিন্ন গ্রামে যাঁরা ছিলেন তাঁদের গলাতেও। যে দু’এক জন মহিলার দেখা মিলল, তাঁরা বলেন, ‘‘পুলিশের ভয়ে পুরুষেরা কেউ নেই। বেশির ভাগ মহিলাও চলে গিয়েছেন। পুলিশ বাড়ি-বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে।’’ তাঁদের অভিযোগ, ‘‘পুলিশের উপরে মানুষ কেন এত ক্ষোভ দেখাল, সেটাও ভাবা উচিত। ছোট-ছোট ছেলেদের পুলিশ মারধর করার ফলেই এত কিছু ঘটে গেল।’’
শনিবার যে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয় তাদের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, কর্তব্যরত সরকারি কর্মীদের মারধর, মহিলা পুলিশের শ্লীলতাহানি, সংগঠিত ভাবে চুরি-সহ বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা হয়েছে। চঞ্চল গড়াই-সহ তিন জনকে দু’দিন পুলিশি হেফাজত ও বাকিদের জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে। ধৃত সিপিএম নেতা সুরেন হেমব্রমকে আজ, সোমবার আদালতে তোলা হবে।
গ্রামছাড়াদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে এ দিন মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) মুফতি শামিম সওকতকে স্মারকলিপি দেয় বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল। রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সরকার জানান, তাঁদের প্রতিনিধিরা থানায় গিয়ে সাধারণ গ্রামবাসীদের উপরে পুলিশি অত্যাচার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন পুরুলিয়ায় দলের সভায় অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার কী পরিস্থিতি, আউশগ্রামের ঘটনায় পরিষ্কার।’’
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য দুর্গাপুরে ছাত্র-যুব উৎসবে বলেন, ‘‘সরকার দলমত নির্বিশেষে যারা জড়িত তাদের ধরতে নির্দেশ দিয়েছে। কোনও রং না দেখে তদন্ত হচ্ছে, আমাদের কাউন্সিলরকে গ্রেফতারেই তা প্রমাণ।’’ পুলিশের আশ্বাস, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।