Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পরিচালন সমিতি ভাঙার নির্দেশ কলেজে

মেমারি কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবারই কলেজের পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা। সোমবার বিকাশ ভবন থেকে কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস চক্রবর্তী ওই নির্দেশিকা নিয়ে আসেন।

মেমারি কলেজের ছাত্র সংসদের ঘরে তালা। নিজস্ব চিত্র

মেমারি কলেজের ছাত্র সংসদের ঘরে তালা। নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৮ ০৯:২০
Share: Save:

এক শিক্ষাকর্মীর দাপটে তাঁরা সদা তটস্থ, এমনই অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মেমারি কলেজের অধ্যক্ষ-সহ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা মেমারি ১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্যের ‘মদতে’ই ওই শিক্ষাকর্মীর এতটা দাপট। অভিযোগের ভিত্তিতে উচ্চশিক্ষা দফতর বিশদে তদন্ত করার পরে পরিচালন সমিতি ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসক হিসেবে ওই কলেজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহকুমাশাসককে (বর্ধমান দক্ষিণ)।

মেমারি কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শুক্রবারই কলেজের পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ শিক্ষা দফতরের অধিকর্তা। সোমবার বিকাশ ভবন থেকে কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস চক্রবর্তী ওই নির্দেশিকা নিয়ে আসেন। অধ্যক্ষ বলেন, “শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের কলেজের পরিচালন সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে উচ্চ শিক্ষা দফতরের উপ-সচিব চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। শুক্রবার থেকে কলেজের প্রশাসক হিসেবে মহকুমাশাসককে নিয়োগ করা হয়েছে।’’ মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) অনির্বাণ কোলে বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত ওই কলেজের পরিচালন সমিতি ভেঙে দিয়ে প্রশাসক হিসেবে মহকুমাশাসককে নিয়োগ করা হয়েছে, এমন কোনও নির্দেশিকা আমার হাতে আসেনি। তবে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে শুনেছি।’’

মেমারি কলেজ সূত্রে জানা যায়, মে মাসের শেষ সপ্তাহে কলেজের ছুটি নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন অধ্যক্ষ। সেই বিজ্ঞপ্তি নিয়েই অধ্যক্ষের সঙ্গে বিবাদের সূচনা কলেজে পরিচালন সমিতির সদস্য তথা শিক্ষাকর্মী মুকেশ শর্মার। তিনি মেমারি ১ ব্লকের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য। অভিযোগ ছিল, মুকেশের ইন্ধনে কলেজের ভিতরে পরপর দু’দিন অধ্যক্ষ-সহ অন্য শিক্ষকদের হেনস্থা করেন ছাত্রদের একাংশ। কলকাতা বা হুগলি থেকে আসা শিক্ষকদের মেমারি স্টেশনে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনার পিছনে ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মধুসূদনবাবু ও জেলা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা আছে বলেও অভিযোগ করেন কলেজ শিক্ষকেরা।

নিরাপত্তার দাবিতে শিক্ষকদের একাংশ কলেজ আসতে অস্বীকার করেন। তাঁরা মেমারি থানা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দেন। মেমারি থানা নির্দিষ্ট ধারায় মুকেশ ও তাঁর এক সঙ্গীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। অভিযোগ, কয়েক দিন আগে জামিন নেওয়ার পরে কলেজে গিয়ে ফের মুকেশ স্বমহিমায় ফেরেন। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ছাত্রভর্তিকে কেন্দ্র করেও মুকেশ ও তাঁর অনুগামীরা প্রথমে শিক্ষকদের, পরে শিক্ষাকর্মীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এ নিয়েও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে।

অধ্যক্ষ এ দিন বলেন, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী ছাত্র সংসদের কোনও অস্তিত্ব নেই। তা সত্ত্বেও ছাত্রদের স্বার্থে সংসদ খুলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, মুকেশের মদতে তাঁর অনুগামীরা ফের অসভ্যতা শুরু করায় ছাত্র সংসদ বন্ধ করে দিয়েছি। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে মুকেশ কেন কলেজে আসেননি, তারও কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে।’’ কলেজ সূত্রে জানা যায়, পুলিশে অভিযোগ হওয়ার পরেই কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে পদত্যাগ করে সভাপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মুকেশ। মধুসূদনবাবু বলেন, “এখনও পর্যন্ত পরিচালন সমিতির ভাঙা হয়েছে বলে কোনও চিঠি পাইনি। আমার বিরুদ্ধে মুকেশকে মদতের অভিযোগও ঠিক নয়।’’ একই দাবি করেছেন জেলা বাপ্পাদিত্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Memari College TMC মেমারি কলেজ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE