খণ্ডঘোষে বালি তোলার এলাকা নির্দিষ্ট করা পতাকা দিয়ে। নিজস্ব চিত্র।
বালি খাদানের দিকে তাকালেই দেখা যেত, নদীতে বিশেষ ধরণের যন্ত্র বসিয়ে জলের নীচে থেকে বালি তোলা হচ্ছে। তারপরে যন্ত্রের মাধ্যমে ছাঁকনিতে সরু বালি বাছাই করে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। গত দু’মাস ধরে অবশ্য সেই ছবি ‘উধাও’। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে ইজারাদারেরা জোট বেঁধে ছাঁকনি চালুর দাবি করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, কয়েক বছর ধরেই ছাঁকনির ব্যবহার করা হচ্ছে। তাহলে এ বছর আটকানো হল কেন। প্রশাসনের দাবি, সম্প্রতি ‘মাইন অ্যান্ড মিনারেল কর্পারেশন’ চিঠি দিয়ে ছাঁকনি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বালি ‘চুরির’ অন্যতম পদ্ধতি হল, নিজের জায়গা ছেড়ে ফাঁকা জায়গা থেকে বালি তুলে পাচার করে দেওয়া। প্রশাসনের দাবি, ইজারাদারদের চেপে ধরলেই, তাঁরা দাবি করেন, নির্দিষ্ট মাপ বা গণ্ডি না থাকায় বাইরে থেকে বালি তোলা হলে বোঝা যায় না। এ বার জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রতিটি ইজারাদারের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত জেলার ৭৩টি বৈধ ঘাটের মধ্যে ৬৩টিতেই ‘গণ্ডি’ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। লাল খুঁটির উপরে লাল পতাকা দিয়ে গণ্ডি করে দেওয়া হয়েছে। যাতে দূর থেকেও বোঝা যায়–ঠিক কোন জায়গায় বালি কাটার অনুমতি রয়েছে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের। তাঁদের দাবি, বালি খাদানের জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া নিয়ে কোনও আপত্তি থাকার কথা নয়। এত বছর কেউ না করলেও এ বছর সেই দায়িত্বটা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর পালন করেছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) শ্বেতা আগরওয়ালের নির্দেশে বিএলএলআরও সেই কাজ করছেন।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজি কয়েক দিন আগে বালি-সংক্রান্ত একটি বৈঠক করেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং মহকুমা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে। বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, বালি চুরি আটকাতে আরও নিবিড় ভাবে মহকুমা প্রশাসন ও ভূমি দফতরকে নামতে বলা হয়। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে জেলায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তল্লাশি শুরু হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত মাত্র ১৪ দিনেই ৩৩৩টি ট্রাক থেকে ১.২৬ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভূমি দফতর। এখনও পর্যন্ত সরকারের ঘরে ৮০ লক্ষ টাকা জমা পড়ে গিয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “ভূমি দফতরের সঙ্গে ব্লক ও মহকুমা প্রশাসন একযোগে কাজ করবে। মহকুমাশাসকেরাও খাদান পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবেন। এ ছাড়াও ঠিক হয়েছে, যে সব ট্রাক বালি পাচার করছে বলে মনে হবে, সেই সব ট্রাকের নম্বর ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ছাঁকনি এক ঝটকায় কেন বন্ধ হল?
প্রশাসনের দাবি, কর্তারা খাদান পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখেন, নদীর নীচে থেকে যন্ত্রের সাহায্যে বালি তোলা হচ্ছে। সেই বালিতে মাটির দানা থাকছে। সেখান থেকে ছাঁকনি দিয়ে মাটির দানা আর মোটা বালি ছেঁকে শুধু সরু বালি নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা জানান, নদীর নীচ থেকে বালি তোলার ফলে শুধু পরিবেশের উপরেই প্রভাব পড়ছেই না, নদীর গতিপথও বদলে যাচ্ছে। একই সঙ্গে নদীর নীচে বালির স্তর নষ্ট হচ্ছে। বালি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ বছর ধরে পূর্ব বর্ধমানের গলসি, মঙ্গলকোট, খণ্ডঘোষ এলাকায় ছাঁকনির ‘রীতি’ চলে আসছে। এর সঙ্গে প্রচুর মানুষ যুক্ত রয়েছে। তাঁরা সামনের সপ্তাহে প্রশাসনের দ্বারস্থ হবেন বলে জানান।
বালি ব্যবসায়ী সংগঠনের অন্যতম কর্তা অসীম পাঁজা বলেন, “জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এ বছর ছাঁকনির ব্যাপারে খুবই অনড়। দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা রীতি বন্ধ হওয়ায় অনেকেরই রোজগারে টান পড়ছে।” ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, সম্প্রতি ‘মাইন অ্যান্ড মিনারেল কর্পারেশন’ চিঠি দিয়ে ছাঁকনি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেই কারণেই তাঁরা এই ব্যাপারে কঠোর হয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy