Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Daihata Rammandir

তাঁদের রামের ঘর হবে কবে, প্রশ্ন মহান্ত পরিবারের

বেড়ার মূল রাম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে এখনও। হতদরিদ্র মহান্ত পরিবারে বর্তমান তিন ছেলে। কেউ ইটভাটায় কাজ করেন। কেউ ফল বিক্রি করেন।

দাঁইহাটের রাম মন্দির।

দাঁইহাটের রাম মন্দির। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রণব দেবনাথ
দাঁইহাট শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০১
Share: Save:

বাঙালির সঙ্গে রামের পরিচয় করিয়েছেন কৃত্তিবাস। তা ছাড়াও আমাদের প্রবাদে, নানা এলাকার নামে রামের সঙ্গে যোগাযোগ ওতপ্রোত। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। দেশের নানা এলাকা থেকে মাটি নিয়ে, নানা এলাকায় ছড়িয়ে থাকা কারিগরদের হাত ধরে তৈরি হয়েছে সেই মন্দির। টিভিতে, খবরে মন্দিরের সেই বৈভব দেখে খুশির সঙ্গে খানিকটা আফসোসও হচ্ছে দাঁইহাটের বেড়ার মহান্ত পরিবারের।

তাঁদের দাবি, আড়াইশো বছরের পুরনো তাঁদের রামমন্দির ভগ্নপ্রায়। দিনমজুরি করে নতুন মন্দির নির্মাণ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। অযোধ্যার রামলালার সঙ্গে তাঁদের রাম-সীতা-হনুমানের মন্দিরেরও হাল ফিরলে ভাল হত, দাবি তাঁদের।

বেড়ার মূল রাম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে এখনও। হতদরিদ্র মহান্ত পরিবারে বর্তমান তিন ছেলে। কেউ ইটভাটায় কাজ করেন। কেউ ফল বিক্রি করেন। কেউ বা দিনমজুরি করে সংসার টানেন। তাঁরা জানান, নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে মন্দির তৈরির জন্য দশ লক্ষ টাকা জমিয়েছিলেন তাঁরা। বেশ কিছু নির্মাণকাজ হলেও সাত বছরেও তা সম্পন্ন করতে পারেননি। অসম্পূর্ণ মন্দিরের গর্ভগৃহেই নিম কাঠের তৈরি রাম, লক্ষ্মণ, সীতা ও হনুমানের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। জগন্নাথ দেব ও ১০৮টি নারায়ণ শিলাও রয়েছে সেখানে। মহান্ত পরিবারের লোকেরাই নিত্যপুজো করেন সেখানে। রামনবমীতে সাধ্যমতো প্রসাদ খাওয়ান গ্রামবাসীদের।

দাঁইহাটের বাসিন্দা, ইতিহাস গবেষক অশেষ কয়াল জানান, দাঁইহাটের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়া এলাকায় এখনও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তা-ঘাট, নিকাশি বেহাল। এমনই এলাকায় ২৭০ বছর আগে পশ্চিম ভারত থেকে এসেছিলেন রামানন্দ তেওয়ারি নামে এক ধর্মপ্রাণ শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। এলাকার বাসিন্দাদের সংস্কৃত ও পার্সি ভাষা শেখাতেন তিনি। টোল খুলেছিলেন। দাঁইহাটে অনেক ঘরেই তখন নিত্য তুলসিদাসের রামচরিতমানস পড়া হত। টোলের পাশেই রাম মন্দির গড়েন তিনি। মূল মন্দির ধ্বংসের মুখে চলে গেলেও দারুমূর্তিগুলি এখনও অক্ষুন্ন রয়েছে। রামানন্দ তেওয়ারির কোনও বংশধর না থাকায় বেড়া গ্রামেরই বাসিন্দা গোকুলচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যাক্তিকে মন্দির ও পুজোর দায়িত্ব দিয়ে মহান্ত উপাধি দেন তিনি।

ওই পরিবারের রাজকুমার মহান্ত বলেন, “মূল মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে আমার ঠাকুর্দা ছোট্ট রাম মন্দির করেছিলেন। সেটাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বছর পনেরো আগে আমরা তিন ভাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই, সংসারের খরচ কমিয়ে রামলালার বড় মন্দির করব। তিল তিল করে অর্থ জমিয়ে দ্বিতল মন্দির করেছি। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু, বয়সের ভারে আর খাটতে পারিনা। তাই মন্দিরের কাজ শেষ করতে পারিনি।’’

মহান্ত বাড়ির বধূ রূপা, রাখিরা বলেন, “অযোধ্যায় রাম মন্দির হয়েছে, এটা খুবই আনন্দের। ওই রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনে আমরাও বিশেষ পুজোর আয়োজন করব। একই দেবতা দু’জায়গায়। কিন্তু আমাদের মন্দিরটা আলোয় সাজাতে পারছি না। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Daihat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE