Advertisement
০১ মে ২০২৪
Inspirational

মোমো বিক্রির পাশেই ছেলেকে পড়ান মৌমিতা

বর্ধমান বিবেকানন্দ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে বর্ধমান উদয়চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মৌমিতা।

উল্লাস এলাকায় মোমো বিক্রি করছেন তরুণী।

উল্লাস এলাকায় মোমো বিক্রি করছেন তরুণী। ছবি: উদিত সিংহ ।

সুপ্রকাশ চৌধুরী
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২০
Share: Save:

পুজোর আগে বর্ধমানের উল্লাস এলাকায় ফুটপাথে রোজ সন্ধ্যায় দেখা যায় মোমো বিক্রি করছেন এক তরুণী। তার ফাঁকেই শিশুপুত্রকে বই থেকে ছড়াও শোনাচ্ছেন। এ ভাবেই মোমো বেচে স্বনির্ভরতার দিশা দেখাচ্ছেন শহরের বাসিন্দা মৌমিতা সরকার।

একসময়ে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় কোলের শিশুকে নিয়ে ফিরে এসেছিলেন বাপের বাড়িতে। গ্রাস করেছিল হতাশা। কিন্তু পরিজনদের পাশে পেয়ে মনোবল ফিরে পান অনাময় হাসপাতাল এলাকার উপরডাঙ্গার বাসিন্দা মৌমিতা সরকার। বর্তমানে তিনি রাস্তার ধারে মোমোর স্টল খুলে উপার্জন শুরু করেছেন। বিকিকিনির ফাঁকেই চলছে ছেলেকে পড়ানো। তাঁর লড়াইকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বর্ধমান বিবেকানন্দ বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে বর্ধমান উদয়চাঁদ মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মৌমিতা। কিন্তু, পরিবারের চাপে প্রথম বর্ষেই কলেজে ইতি টেনে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। ২০১৬ সালে বর্ধমান শহরেই বিয়ে হয় তাঁর। কিন্তু শ্বশুরবাড়িতে নানা বিষয় নিয়ে অশান্তির কারণে বছর দুয়েক আগে শিশু সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন তিনি। সেখানে ছিলেন তাঁর মা ও তিন দাদা। বাবা মারা গিয়েছেন আগেই।

মৌমিতা বলছেন, ‘‘বাপের বাড়িতে ফিরে আসার পর অনেকের বাঁকা নজর, প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। ফলে হতাশা গ্রাস করেছিল। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে কোনও রকমে শক্ত রেখেছিলাম। এখন ছেলে দেবাংশু প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ওকে নিজের উপার্জনে বড় করার জন্যই মোমোর দোকান করার চিন্তা মাথায় আসে।’’

স্মার্ট ফোন কিনে তাতে ভিডিয়ো দেখে মোমো বানানোর তালিম নেন মৌমিতা। আত্মবিশ্বাসে ভর করে একটি টেবিল আর মাথায় ছাতা লাগিয়ে ফুটপাতেই শুরু করেন বিক্রি। তাঁর দোকানের বয়স সপ্তাহ দুয়েক। তবে এর মধ্যেই তৈরি হয়েছে পরিচিতি। ধীরে ধীরে বাড়ছে ভিড়ও।

কী ভাবে সামাল দিচ্ছেন সব দিক? মৌমিতা বলেন, ‘‘বাড়িতে মা সাহায্য করেন। ছেলে ছোট। মাঝেমধ্যে বায়না করে আমার সঙ্গে যাওয়ার। আমি নিয়ে আসি। দোকানের ক্রেতা সামলানোর মাঝেই ওকে পড়াই। কখনও বই থাকে, কখনও মোবাইলেই বিভিন্ন শিক্ষামূলক জিনিস দেখাই।’’

মা পূর্ণিমা আইচ মেয়ের লড়াইয়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘একটা সময়ে মেয়ে খুব কষ্ট করেছে। মানসিক অশান্তিতে ছিল। কিন্তু এখন ও অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি যতটা পারছি সাহায্য করছি। মেয়ে আমার দশভুজা।’’ মৌমিতার পাশে দাঁড়িছেন তাঁর তিন দাদাও। পাশাপাশি, স্কুল কলেজের বন্ধু, পাড়ার অনেকেও তাঁকে উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। সমাজমাধ্যমেও অনেকে তাঁর লড়াইকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন।

মৌমিতা বলেন, ‘‘একটা সময়ে লোকের কথায় কষ্ট পেতাম। তারপর বুঝলাম নিজের উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে গেলেই অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর পিছন ফিরে তাকাই না। পুজোর আগে ব্যবসা শুরু করেছি বাজারটা ধরার জন্য। উৎসবের মুখে বিক্রি ভাল হোক, এটাই প্রার্থনা মায়ের কাছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Momo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE